বাংলাদেশের আমের প্রশংসা শোনা গেল ইতালির রোমে থাকা জাতিসংঘের ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও)-এর সদর দপ্তরে। বাংলাদেশের আম পৃথিবী শ্রেষ্ঠ বলেও অনেকে মত দেন। অন্যদিকে ফিলিপিন্সের উৎপাদিত বাঁশ দিয়ে তাদের অর্থনীতির চাকা ঘুরছে বলেও জানান সে দেশের কর্মকর্তারা। গত সোমবার ইতালির স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের কৃষি মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিজ নিজ দেশের কৃষিতে বিনিয়োগ, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এ অনুষ্ঠানে এফএও ও এডিবির প্রতিনিধিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এনজিওর কর্মীরা অংশ নেন। প্রথমেই বাংলাদেশের কৃষির ওপর তৈরি করা একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে আলু উৎপাদনসহ বিভিন্ন কৃষির উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণসহ নানা বিষয়ে দেখানো হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
কৃষি উপদেষ্টা বাংলাদেশের কৃষিখাতের সম্ভাবনা এবং সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের জন্য গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন। তিনি বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তা, ফসলের বৈচিত্র্যকরণ, আধুনিক সেচ ব্যবস্থা, এবং কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির ওপর জোর দেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের কৃষি বর্তমানে যান্ত্রিকীকরণ এবং প্রযুক্তিনির্ভরতার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে, যা বিনিয়োগের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।
পরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বাংলাদেশের কৃষিতে বেসরকারি বিনিয়োগ, সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, কৃষিতে উন্নয়নের জন্য আমরা ২৫ বছরের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আমরা প্রাইভেট সেক্টরকে সহযোগিতা করছি। তিনি তার বক্তব্যর সময় বাংলাদেশের আমের প্রসঙ্গটি তুলেন। তিনি সুস্বাদু এই আম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির কথাও উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠান শেষে দেশের একটি গণমাধ্যমকের কথা হয় উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে।
তারা বলেন বাংলাদেশের আম পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশের চেয়ে মিষ্টি। মেক্সিকোর এনজিও কর্মী দিনোরা দেশের একটি গণমাধ্যমকেকে জানান, তিনি বেশ কিছুদিন আগে ইতালিতে বাংলাদেশের আম খেয়েছিলেন। সত্যিই বাংলাদেশের আম খুব সুস্বাদু বলে জানান তিনি।
ফিলিপাইনের কৃষি সচিব ফ্রান্সিসকো টিউ লরেল জুনিয়র বাংলাদেশের কৃষি খাতের সাফল্যে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। তিনি ফিলিপাইনের কৃষিখাতের বর্তমান অবস্থা, বিশেষ করে তাদের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলো ব্যাখ্যা করেন। ফ্রান্সিসকো জোর দিয়ে বলেন, ফিলিপাইন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে আগ্রহী। তিনি বিশেষভাবে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, বীজ প্রযুক্তি এবং কৃষি-যন্ত্রপাতি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানটিতে কৃষি ক্ষেত্রে আগ্রহ আছে এমন অনেকে উপস্থিত ছিলেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশের কৃষির বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্ন করেন তারা। কৃষি উপদেষ্টা ও কৃষি সচিব তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন। একই সময়ে ফিলিপাইনের কৃষি সচিবের কাছেও প্রশ্ন রাখেন প্রশ্নকর্তারা।
উল্লেখ্য, বিশ্ব খাদ্য সপ্তাহ উপলক্ষে কৃষি খাদ্যর এই সংস্থাটিতে জাতিসংঘের সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানরাও যোগ দেন। আগামী ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত এ অনুষ্ঠান চলবে। কৃষি সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান দেশের একটি গণমাধ্যমকেকে জানান, তাদের আরো কয়েকটি আলোচনা সভা রয়েছে।
পিএ/এসএন