বেনাপোল কাস্টম হাউসে ঘুষের টাকাসহ গ্রেপ্তার রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সই করা প্রজ্ঞাপন জারি করে বরখাস্ত করা হয় তাকে।
এর আগে ৬ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) যশোর সমন্বিত কার্যালয়ের কর্মকর্তা টাকাসহ শামীমা ও তার সহযোগী (এনজিও) হাসিবুর রহমানকে আটক করেন। পরদিন ৭ অক্টোবর শামীমাকে গ্রেপ্তার দেখায় দুদক। গ্রেপ্তারের সাতদিন পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৭ অক্টোবর বেনাপোল কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারকে দুদকের যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার করেছেন। সেজন্য সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৩৯(২) ধারা অনুযায়ী রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারকে ৭ অক্টোবর হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তিনি সাময়িক বরখাস্তকালীন বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
গত ৭ অক্টোবর যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আল আমিন বাদী হয়ে মামলা করেন। তাতে শামীমা আক্তার ও হাসিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
দুদকের মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তার ও এনজিও কর্মী হাসিবুর রহমানের ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় দুদকের অভিযানে একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তার কাস্টমস হাউস বেনাপোলের শুল্কায়ন গ্রুপ-৬-এ কর্মরত। এনজিও কর্মী হাসিবুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ওই দফতরে তার “নিজস্ব লোক” হিসেবে কাজ করতেন। তিনি সিএন্ডএফ এজেন্টদের কাছ থেকে শুল্কায়ন ফাইল অনুমোদনের বিনিময়ে ঘুষ আদায় করে শামীমা আক্তারের হাতে পৌঁছে দিতেন।
গত ৫ ও ৬ অক্টোবর, হাসিবুর রহমান মোট ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ঘুষের অর্থ সংগ্রহ করে রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারের দপ্তরে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আসেন। এ সময় দুদকের টিম অভিযান চালিয়ে তাকে হাতেনাতে আটক করে। অভিযানকালে টিম ঘুষের লেনদেনের অভিযোগের সত্যতা পায় এবং ঘটনাস্থল থেকে ঘুষের নগদ টাকা উদ্ধারসহ রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারের সহযোগী স্থানীয় একটি এনজিওর সদস্য হাসিবুর রহমানকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। অন্যদিকে শামীমা আক্তারের কাজ থেকে মুচলেকা নিয়ে কমিশনারের জিম্মায় রাখা হয়েছিল।
আরও বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে শামীমা আক্তার স্বীকার করেন যে, তিনি এনজিও হাসিবুর রহমানকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন এবং ৬ অক্টোবর তার সঙ্গে দু’বার মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন।
দুদকের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শামীমা আক্তার ২০২৫ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে হাসিবুর রহমানকে বিভিন্ন সময় বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর নির্দেশ দেন। অর্থাৎ শামীমা আক্তার ঘুস লেনদেনে হাসিবুর রহমানকে সরাসরি ব্যবহার করতেন।
গত ৬ অক্টোবর দুদকের যশোর সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি দল বেনাপোল কাস্টম হাউসের বাইরে অভিযান চালায়। এসময় এনজিও হিসেবে পরিচিত (দালাল বা ফালতু) হাসিবুর রহমানকে ঘুষের টাকাসহ আটক করা হয়। তিনি রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। পরে দুদকের কর্মকর্তারা হাসিবুর রহমানকে আটক করে নিয়ে যান। আর শামীমাকে কাস্টম হাউসের কমিশনারের জিম্মায় রেখে আসা হয়।
টিজে/এসএন