টাইফয়েড টিকা ক্যাম্পেইনে রংপুর পিছিয়ে

সারাদেশে চলমান টাইফয়েড টিকা ক্যাম্পেইন কর্মসূচিতে পিছিয়ে রয়েছে রংপুর। প্রায় ৪৯ লাখ শিশুকে টাইফয়েড টিকার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৬৮৫ জনকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। যা দেশের অন্য বিভাগের তুলনায় কম। শনিবার (১৮ অক্টোবর) রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত কর্মশালায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের আয়োজনে ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এ কর্মশালা। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহাম্মদ হিরুজ্জামান।

মহাপরিচালক বলেন, চলমান টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনের আওতায় দেশের প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে টিকা প্রদান করা হবে।

টাইফয়েড জ্বর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অঙ্গহানি, অন্ধত্ব, শ্রবণশক্তি হ্রাস এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। টাইফয়েড টিকা শরীরে নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে মুহাম্মদ হিরুজ্জামান বলেন, টাইফয়েড টিকাদান কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নে গণমাধ্যমকর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। টিকা গ্রহণ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে বিদ্যমান দোদুল্যমানতা ও বিভ্রান্তি পরিহারে গণমাধ্যম নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে। সচেতনতার অংশ হিসেবে তিনি গণমাধ্যকর্মীদের লেখনির পাশাপাশি টিকা সম্পর্কিত গুজব প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার (রুটিন দায়িত্ব) মো. আবু জাফর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা ও ইউনিসেফ রংপুরের সোশ্যাল অ্যান্ড বিহ্যাভিয়ার চেঞ্জ অফিসার মনজুর আহমেদ।

জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক মকবুল হোসাইনের সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. মারুফ নাওয়াজ, রংপুর জেলা তথ্য অফিসের পরিচালক ড. মো. মোফাকখারুল ইকবাল ও বাংলাদেশ বেতার রংপুরের আঞ্চলিক পরিচালক মো. আব্দুর রহিমসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার (রুটিন দায়িত্ব) মো. আবু জাফর বলেন, শিশুদের ঝরে পড়া ও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির অন্যতম কারণ হচ্ছে অসুস্থতা। টাইফয়েড টিকা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কারণ এটি জীবনরক্ষাকারী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।

টিকা রেজিস্ট্রেশনের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের পরিসংখ্যানিক উপাত্ত তৈরিতে এবং শিশুদের ভবিষ্যৎ প্রয়োজনে টিকা সনদ কাজে লাগতে পারে। রংপুর বিভাগের টিকা রেজিস্ট্রেশনে নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করতে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের আহ্বান জানান।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংবাদিকগণ টাইফয়েড টিকাদান কার্যক্রম গতিশীল করতে কমিউনিটি পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার, বিভাগীয় তথ্যকেন্দ্র স্থাপন, ধর্মীয় উপাসনালয়ে টাইফয়েড জ্বরের ভয়াবহতা ও টিকার গুরুত্ব তুলে ধরা, মনিটরিং বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন।

এসময় জানানো হয়, দেশব্যাপী ৯ মাস হতে ১৫ বছর কম বয়সী সব শিশুদের এক ডোজ টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিবি) টিকা দেওয়া হবে। ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ ক্যাম্পেইন চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত।

টিকা ক্যাম্পেইনে দেশের অন্য বিভাগগুলোর তুলনায় রংপুর পিছিয়ে থাকার বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়, রংপুর বিভাগের আট জেলায় ৪৮ লাখ ৯৯ হাজার ৮২২ জন শিশুকে টাইফয়েড টিকার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৮১ জন, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৬৮৫ জনকে টিকা প্রদান করা হয়েছে।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে আরও বলা হয়, টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত একটি রোগ যেটি দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। প্রতিবছর টাইফয়েড জ্বরে দেশে ৩ লাখ শিশু আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় ৬ হাজার শিশু।

টাইফয়েড টিকা নেওয়ার মাধ্যমে টাইফয়েড জ্বর ও জ্বর জনিত জটিলতা প্রতিরোধ করা যায়। টিকার কারণে গুটি বসন্ত দূর হয়েছে, বাংলাদেশ পোলিওমুক্ত সনদ অর্জন করেছে এবং শিশুরা পঙ্গুত্ব থেকে রক্ষা পেয়েছে।

টিকার কারণে বাংলাদেশে প্রাণঘাতী হেপাটাইটিস-বি নিয়ন্ত্রণে এসেছে, দেশে মা ও শিশুর ধনুষ্টংকার দূরীকরণ সম্ভব হয়েছে, টিকার কারণে মারাত্মক হাম-রুবেলা নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রয়েছে এবং টিকার মাধ্যমেই হাম-রুবেলা দূরীকরণ সম্ভব হবে।

শিশুদের টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি শতভাগ সফল করতে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা ও সুপারিশ তুলে ধরেন বক্তারা। এছাড়া জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে টিকা গ্রহণের নির্দেশনা থাকলেও কেউ রেজিস্ট্রেশন করতে না পারলে তাকেও টিকা প্রদান করা হবে বলে জানান আয়োজকরা।

এমকে/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

শাপলা চত্বরে শ'হী'দ পরিবারদের হাতে আর্থিক সহায়তা হস্তান্তর, স্মৃতিস্তম্ভের ঘোষণা Oct 19, 2025
ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা Oct 19, 2025
img
কার্গো ভিলেজের আগুনের ঘটনায় ২৫ আনসার সদস্য আহত Oct 19, 2025
img
শিক্ষা ভবন অভিমুখে শিক্ষকদের ভুখা মিছিল আজ Oct 19, 2025
ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল Oct 19, 2025
img
বাংলাদেশ-কুয়েত সচিব পর্যায়ের বৈঠক আজ Oct 19, 2025
img
বাংলাদেশ গরিব না, রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিবাজ: কর্নেল অলি Oct 19, 2025
img
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি করে ব্যক্তির জন্য ভোট চাচ্ছে জামায়াত: আবুল খায়ের ভূঁইয়া Oct 19, 2025
img
বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ শিকারের সময় ১৪ ভারতীয় জেলে আটক Oct 19, 2025
img
যারা বিএনপি ও আ. লীগকে এক পাল্লায় মাপতে চায়, তাদের ঈমানে সমস্যা আছে: প্রিন্স Oct 19, 2025
img
বাঙালির ইতিহাসে এত বড় দুর্ঘটনা কখনো ঘটেনি: রনি Oct 19, 2025
img
চেষ্টা করেছি হতাশ না হয়ে ধৈর্য রাখার: রিশাদ Oct 19, 2025
img
পল্লী চিকিৎসকের ধারণা জিয়াউর রহমানের, বিএনপি তা বজায় রাখবে: তারেক রহমান Oct 19, 2025
img
৮ মাস পর দেশে ফিরলেন ভারতের উপকূলে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি ১২ নাবিক Oct 19, 2025
img
৩০ দিন ফাস্টফুড না খেলে শরীরে হবে যে পরিবর্তন Oct 19, 2025
img
শত্রুর সঙ্গে থাকা যায় কিন্তু বিশ্বাসঘাতকের সঙ্গে নয়: রিয়া মনি Oct 19, 2025
img
বয়কট করা ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসছে কোয়াব Oct 19, 2025
img
কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ৬ ঘণ্টা পর বিমান চলাচল শুরু Oct 18, 2025
img
আফগানদের না বলায় পাকিস্তানের ত্রিদেশীয় সিরিজে সুযোগ পেল জিম্বাবুয়ে Oct 18, 2025
img
আহত জুলাই যোদ্ধা আতিকুলের সার্বিক খোঁজ নিলেন নাহিদ ইসলাম Oct 18, 2025