থাইল্যান্ড ভ্রমণ: পাতায়া থেকে কোরাল দ্বীপ (পর্ব-৩)

থাইল্যান্ডের পাতায়াতে আমাদের ২য় দিন। মা-বাবা ভোর ৬ টায় আমাকে ডেকে তুললেন। কিছুতেই ঘুম থেকে উঠতে মন চাচ্ছিল না। তবে ঘুরতে আসার পর যদি ঘুম কাবু করে ফেলে তাহলে যে, বড়ই সমস্যা। তাই ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম নতুন গন্তব্যে।

প্রথমেই একটা রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তা করলাম। আমি খেলাম চিকেন ম্যাকারনি, আম্মু নিলেন সি ফুডের সঙ্গে স্প্যাগেটি আর আব্বু নিলেন বাঙালি খাবার। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে শুরু হলো কোরাল দ্বীপ ভ্রমণের পালা। একটি প্যাকেজ ট্যুরের আওতায় আমরা কোরাল দ্বীপের যাত্রা শুরু করি। আমাদের সঙ্গে আরও অন্যান্য দেশের পর্যটকরাও ছিলেন।

বলে রাখা ভালো, এই প্যাকেজ ট্যুরে বেশ কয়েকজন গাইড ছিলেন। প্রথমে মাইক্রোবাসে করে তারা আমাদের নিয়ে গেলেন একটি সমুদ্র সৈকতে। সেখানে একজন গাইড এসে আমাদের হাতে নম্বর (ট্যাগ) লিখে দিলেন, যেটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য এবং তাদের পরিচালনার সুবিধার্থে ব্যবহার করা হয়।

এরপর একজন করে তারা আমাদের সবার ছবি তুললেন। পরবর্তীতে তারা আমাদের একটি স্পীড বোটে উঠতে বললেন। সমুদ্রের ঢেউয়ের কারণে স্পীড বোটে ওঠা বেশ কষ্টকর ছিল। আমি, আব্বু ও আম্মু পাশাপাশি বসলাম। এরপরই ঘটলো বিপত্তি! 'বাবাগো বাবা!' কী জোড়েই না চলছিলো 'স্পীডবোটটি'। মনে হচ্ছিলো, ফ্যান্টাসি কিংডমের কোনো ভয়ংকর 'রাইডে' বসে আছি।

কিছুদূর যাবার পর স্পীডবোটটি থেমে গেলো এবং সমুদ্রের মাঝখানে একটি ভাসমান প্লাটফর্মে আমাদের যেতে বলা হলো। সেখানে একজন গাইড এসে জানালেন কোরাল দ্বীপে কী কী ইভেন্ট রয়েছে। সব নাম মনে নেই তবে 'প্যারাসুট স্কাই ডাইভিং', 'আন্ডার সী ওয়াক', 'বানানা বোট' ইত্যাদি ইভেন্ট সেখানে ছিল।

প্লাটফর্ম থেকে অন্যান্য মানুষদের 'প্যারাসাইলিং' (প্যারাসুট রাইড) ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছিলো। একটি স্পীড বোট প্যারাসুটের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে ওই প্ল্যাটফর্ম থেকে মানুষগুলোকে আকাশে ছেড়ে দিচ্ছে এবং তারা গভীর সমুদ্রের উপর প্যারাসুটে করে আকাশে ভাসছেন। বিষয়টা খুবই থ্রিলিং ছিলো। আম্মুকে বললাম,' আম্মু প্যারাসুটে উঠবো।' আম্মু কোনোভাবেই রাজি হলেন না। তার মতে, আমি আকাশে উড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি হার্ট অ্যাটাক করবেন।

আমি আম্মুকে নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন। বাবাকেও অনুরোধ করে রাজি করাতে পারিনি। বরং দুইজন মিলে আমাকে নিয়ে মজা করছিলেন এই বলে, 'তুমি তো প্লেনে উঠতেই ভয় পাও, সমুদ্রের উপর ওভাবে প্যারাসাইলিং করবে কীভাবে!'

যাক, ওই ভাসমান প্লাটফর্মে আমরা অনেকক্ষন ছিলাম। এরপর ওই প্ল্যাটফর্মে এসে ভিড়ল আরেকটি স্পীড বোট। আমি এবারের স্পীড বোটে আগের চেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিলাম। এই স্পীড বোটটি আগেরটির তুলনায় গভীর সমুদ্রে বেশ ভয়ংকরভাবে যাচ্ছিলো। সমুদ্রের জলগুলো আমাদের দিকে আছড়ে পড়ছিল।

ভয়ের চোটে বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম, 'বাবা তুমি সাঁতার জানোতো?' বাবা জানালেন তিনি সাঁতার পারেন, কিন্তু মা সাঁতার পারেন না।ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম এই ভেবে যে, আমি নিজেই সাঁতার জানিনা। এরপর এসে পৌঁছলাম বহু আকাঙ্ক্ষিত কোরাল দ্বীপে।

অসাধারণ সৌন্দর্যমন্ডিত এই দ্বীপটির প্রথম দর্শনেই মন স্নিগ্ধতায় ভরে যায়। পাহাড় ও সমুদ্রের একসঙ্গে বসবাস এই দ্বীপে। সেখানকার পর্যটকেরা বিভিন্নরকম ইভেন্ট এ অংশ নিচ্ছিলেন। তবে আমার ভীতু বাবা-মা আমাকে কোনো ইভেন্টেই অংশগ্রহণ করতে দেননি।

সমুদ্রের স্বচ্ছ জল, আকাশী নীলের সংমিশ্রণের মন মাতানো 'জলরঙ' দেখে মনে হয়েছে যেনো জলজ্যান্ত আকাশ মাটিতে নেমে, 'মম চিত্তে নিতি নৃত্যে' গানের সঙ্গে নাচছে। আসলেই কি সুন্দর রঙ জলের! একটি বিষয় যেটা বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতে আমি পাইনি সেটা হলো- ডীপ ফ্রিজের গোটা ডাব। এই ডাবগুলো খেতে অসাধারণ।

একদম গলা শুকিয়ে আসা অবস্থায় যদি কেউ পান করেন, তিনি আর 'কোকাকোলা' কিংবা 'সেভেন আপ' পান করতে চাইবেন না। এই তপ্ত দুপুরে ডীপ ফ্রিজের ডাবের পানি যেনো বহুদিনের তৃষ্ণার পরিতৃপ্তি এনে দেয়। আমরা সমুদ্রে নেমে অনেক ছবি তুললাম। আমার কাছে জায়গাটা খুব ভালো লাগলেও আমি 'সেন্ট মার্টিন' এর উপরে 'কোরাল দ্বীপ' কে রাখবো না।

কারণ, কোরাল দ্বীপ সুন্দর হলেও তা পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য বিভিন্ন কৃত্রিমতায় পরিপূর্ণ। অপরদিকে, আমাদের সেন্ট মার্টিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি যেখানে কৃত্রিমতার ছোঁয়া আজও সেভাবে পৌঁছেনি।

তবে 'কোরাল দ্বীপ' পাহাড় ও সমুদ্রের মিলনমেলা, পাশাপাশি বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্রের সব ধরনের সুবিধা থাকায় তার সৌন্দর্যের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কোরাল দ্বীপ ভ্রমণ শেষে আবার স্পীড বোটে করে ফিরে আসলাম 'পাতায়া' শহরে। এরপর প্যাকেজ ট্যুরের আওতায় দুপুরে একটি মাদ্রাজী হোটেলে ফ্রি বুফে খাবারের আয়োজন ছিলো।

এভাবেই শেষ হলো আমাদের 'কোরাল দ্বীপ' ভ্রমণ। একটু ভয়, একটু আনন্দ সবকিছুরই কমপ্লিট প্যাকেজ ছিলো এ সফরে। থাইল্যান্ড ভ্রমণের পরবর্তী পর্ব পড়ার আমন্ত্রণ রইল।

চলবে...

থাইল্যান্ড ভ্রমণ পর্ব-১

থাইল্যান্ড ভ্রমণ: সমুদ্র সৈকত এবং রাতের পাতায়া (পর্ব-২)

লেখক: শিক্ষার্থী, সংগীত বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অভিনয় থেকে দুই মাস দূরে থাকবেন জোভান Jul 01, 2025
img
নির্বাচনী বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কার্পণ্য করা হবে না: অর্থ উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
শিগগিরই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে যাচ্ছে ইরান: আব্বাস আরাঘচি Jul 01, 2025
‘আমরা একদলীয় দেশের বাসিন্দা’: ইলন মাস্ক Jul 01, 2025
img
উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল ফ্রান্স Jul 01, 2025
img
সব আওয়ামী লীগারেরাই মেন্টালি সিক, তাদের থেরাপি ও রিহ্যাবে পাঠানোর পরামর্শ পিনাকির Jul 01, 2025
img
সবচেয়ে বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হজ আয়োজন ২০২৫ সালে Jul 01, 2025
img
জুনে রেমিট্যান্সে রেকর্ড, ২৯ দিনেই এসেছে ২৭০ কোটি ডলার Jul 01, 2025
img
'সৌদি আরবই এখন আমার ঠিকানা' Jul 01, 2025
img
শাকিব খানের ‘মেগাস্টার’ ট্যাগ নিয়ে তোপের মুখে জাহিদ হাসান Jul 01, 2025
img
পুরো অর্থনীতিই এখন মব এবং মামলার বাণিজ্যের মধ্যে ঢুকে গেছে : গোলাম মাওলা রনি Jul 01, 2025
img
১টি ত্রিপল, ৩টি সেঞ্চুরি - এক ইনিংসে ৮২০ রানের কীর্তি Jul 01, 2025
img
‘বজরঙ্গী ভাইজান’-এ অভিনয় করে কত টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন সেই মুন্নি! Jul 01, 2025
img
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নবনির্বাচিত কমিটির আত্মপ্রকাশ Jul 01, 2025
img
'ফুটবলের প্রতি যে ভালোবাসা এখনও আমার ভিতরে আছে তা আমাকে চালিয়ে নিচ্ছে' Jul 01, 2025
img
‘জুলাই বললে লাল হয়ে যায় স্মৃতি’- প্রেস সচিব শেয়ার করলেন কবিতা Jul 01, 2025
img
এবার ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নামটিও নিজের করে নিতে চান ধোনি Jul 01, 2025
img
জুলাই কেবল আবেগ নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ডাক: প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
শেখ হাসিনাসহ আসামিদের পক্ষে অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে শুনানি আগামী সোমবার Jul 01, 2025
img
পাকিস্তানে ২ সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও বাড়ল পেট্রোল ও ডিজেলের দাম Jul 01, 2025