শান্তি উদ্যোগের জন্য ট্রাম্পের প্রশংসায় চীনা প্রেসিডেন্ট

দক্ষিণ কোরিয়ার বন্দরনগরী বুসানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক বৈঠকে শান্তি প্রতিষ্ঠায়তাঁর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

শি বলেন, ‘আপনি বিশ্বশান্তি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক উত্তপ্ত ইস্যু সমাধানে অত্যন্ত উৎসাহী। গাজায় সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্নে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আমি প্রশংসা করি।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে গত জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘাতের পর গত রোববার স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তিতেও ট্রাম্পের অবদান রয়েছে।

বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির নেতাদের মধ্যে এটি ছয় বছরের মধ্যে প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ। এর আগে ২০১৯ সালের জুনে জাপানের ওসাকায় জি-২০ সম্মেলনে সর্বশেষ দেখা হয়েছিল দুই নেতার।

শি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব বহু জটিল সমস্যার সম্মুখীন। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র প্রধান শক্তি হিসেবে যৌথভাবে দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের দেশসহ বিশ্বের কল্যাণে বড় ও বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভিন্ন জাতীয় প্রেক্ষাপটে সব বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব নয়। বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে কিছু মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক।’

চীনা নেতা জানান, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দুই দেশের বাণিজ্য দলগুলোর বৈঠকগুলো ‘উৎসাহব্যঞ্জক অগ্রগতি’ এনেছে এবং একটি ‘দৃঢ় ভিত্তি ও ইতিবাচক পরিবেশ’ তৈরি করেছে।

শি জোর দিয়ে বলেন, ‘ঝড়-তুফানের মাঝেও আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের জাহাজকে সঠিক পথে চালনা করতে হবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে পারে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘চীনের উন্নয়ন যুক্তরাষ্ট্রের সমৃদ্ধি দর্শনের সঙ্গে মিল রেখেই এগোচ্ছে। আমি সবসময় বিশ্বাস করি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের সাফল্যে সহযোগী ও বন্ধু হতে পারে।’

অন্যদিকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি এবং আজ আরও কিছু বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছাব। প্রেসিডেন্ট শি একজন অসাধারণ নেতা, তার দেশও মহান।

আমাদের সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী ও ইতিবাচক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

তিনি রসিকতা করে আরও বলেন, ‘তিনি খুব কঠিন আলোচক এটা আমাদের জন্য ভালো না হলেও, আমরা একে অপরকে ভালোভাবে বুঝি। আমাদের সম্পর্ক সবসময়ই চমৎকার।’

প্রায় ১০০ মিনিটের বৈঠক শেষে দুই নেতা সৌহার্দ্যপূর্ণ করমর্দন শেষে নিজ নিজ গাড়িতে করে প্রস্থান করেন। ট্রাম্প দেশত্যাগ করলেও শি দক্ষিণ কোরিয়ায় তার রাষ্ট্রীয় সফর চালিয়ে যাবেন এবং গিয়ংজুতে অনুষ্ঠিতব্য অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলনেও অংশ নেবেন।

এর আগে, কুয়ালালামপুরে আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে দুই দেশের প্রতিনিধিদল চীনের ভাইস প্রিমিয়ার হে লিফেং ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টের নেতৃত্বে দুই দিনের বৈঠক করে। বেসেন্ট জানান, ‘ট্রাম্প ও শির বৈঠকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো চূড়ান্ত হয়েছে, যেখানে বাণিজ্য ও শুল্কসহ নানা বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে।’

ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দেন, টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রে মালিকানা নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনাও বৈঠকের সময় চূড়ান্ত হতে পারে।

এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে ট্রাম্প মালয়েশিয়া ও জাপান সফর শেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছান। জাপানে তিনি প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করেন এবং মার্কিন সেনা ও জাপানি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে ভাষণ দেন।

এমকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সম্পর্কে বন্ধুত্ব আর বিশ্বাসই আসল, প্রেম নয়: রাজন্যা মিত্র Oct 30, 2025
img
ই-রিটার্ন দাখিল করেছেন ১০ লাখের বেশি করদাতা: এনবিআর Oct 30, 2025
img
কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ১৯ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ Oct 30, 2025
img
মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন Oct 30, 2025
img
আগামী এপ্রিলে চীন যাব, এরপর শি যুক্তরাষ্ট্রে আসবেন: ট্রাম্প Oct 30, 2025
img
ইউনেস্কোর সভাপতির দায়িত্ব পালন শুরু করল বাংলাদেশ Oct 30, 2025
img
তোমার স্বামী খুব কঠোর, কেভিন পিটারসেনের স্ত্রীকে বললেন লোকেশ রাহুল Oct 30, 2025
img
‘শাপলা কলি’ নয়, ‘শাপলা’ই চায় এনসিপি Oct 30, 2025
img
১৬ নভেম্বর পোস্টাল ব্যালটে ভোটের অ্যাপ উদ্বোধন : ইসি সচিব Oct 30, 2025
img

জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা

বিজয়ী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা বিনিময় Oct 30, 2025
img
সন্তানকে মত প্রকাশের সুযোগ দিন : হাসনাত আব্দুল্লাহ Oct 30, 2025
img
মোজাম্মেল হকের আয়কর নথি জব্দের অনুমতি পেয়েছে দুদক। Oct 30, 2025
img
ডাকসু নেতাদের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ Oct 30, 2025
img
ঐক্য কমিশনের প্রতিবেদনে অনৈক্যের সুর : শামা ওবায়েদ Oct 30, 2025
img
বিশ্ববাজারে ফের বেড়েছে সোনার দাম Oct 30, 2025
img
কাবুলের সার্বভৌমত্ব-অখণ্ডতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত Oct 30, 2025
img
ফুটবলার নিবন্ধনে ফিফার নিষেধাজ্ঞা পেল মোহামেডান Oct 30, 2025
img
যারা ফেব্রুয়ারির নির্বাচন চায় না, তারা জনগণের বিরোধী শক্তি : এম এ মালিক Oct 30, 2025
img

নারী বিশ্বকাপ ২০২৫

ভারতের সাবেক ও বর্তমান অধিনায়কের রেকর্ড ভাঙলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার Oct 30, 2025
img
চসিক সিইও অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ, ১৫ দিনের আলটিমেটাম Oct 30, 2025