ভারতকে কোণঠাসা করে পাকিস্তানের সুরেই কথা বলছেন ট্রাম্প

দক্ষিণ কোরিয়ায় দেওয়া বক্তব্যে পাকিস্তানের অবস্থানকে যেন আরও জোরালো করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় ‘সাতটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে’— এমন দাবি তুলে তিনি কার্যত ইসলামাবাদের বক্তব্যকেই মজবুত করেছেন।

আর তার প্রশংসা, হুমকি আর রাজনৈতিক ভঙ্গিমায় নয়াদিল্লি কার্যত পড়েছে বিব্রত অবস্থায়। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত কয়েক মাসে অন্তত ২৫ বার প্রকাশ্যে বলেছেন যে, চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তান-ভারত সংঘাতে পাঁচ থেকে সাতটি “নতুন, ঝকঝকে যুদ্ধবিমান” গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছিল।

যদিও টানা চানদিনের ওই সংঘাতে দুই দেশের যুদ্ধবিমান হারানোর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে, তবুও ট্রাম্পের মন্তব্য পাকিস্তানের অবস্থানকেই কূটনৈতিকভাবে শক্ত করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

সর্বশেষ দক্ষিণ কোরিয়ায় এক আঞ্চলিক বৈঠকে বুধবার ট্রাম্প আবারও বলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছিল, কিন্তু তিনি দুই দেশকেই ২৫০ শতাংশ শুল্কের হুমকি দিয়ে তা ঠেকিয়েছেন। যা কোনো দেশের জন্য তার দেওয়া সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক শাস্তির হুঁশিয়ারি।

ট্রাম্প বলেন, “আপনি যদি ভারত ও পাকিস্তানের দিকে তাকান... তারা তখন লড়াইয়ে লিপ্ত ছিল। সাতটা বিমান গুলি করে নামানো হয়েছিল। যুদ্ধ প্রায় শুরু হয়ে যাচ্ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “আমি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আছে। আমাদের সম্পর্ক চমৎকার।”

একই সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, “তিনি দুর্দান্ত যোদ্ধা, একজন অসাধারণ মানুষ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও দারুণ মানুষ।”

এর একদিন আগে জাপানে ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে একই ভাষায় ট্রাম্প বলেছিলেন, “দুই বড় পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ যুদ্ধের মুখে ছিল, আমি সেটি থামিয়েছি।”

তবে ভারত সরকার এখনো দাবি করে যাচ্ছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে তাদের কোনো যুদ্ধবিমান হারায়নি, আর ট্রাম্পের মধ্যস্থতার কথাও “ভিত্তিহীন” বলে উড়িয়ে দিয়েছে। নয়াদিল্লির দাবি, যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত দুই দেশ পারস্পরিকভাবে নিয়েছিল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ওয়াশিংটনের বক্তব্যে একটি নতুন মোড় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক উইলসন সেন্টারের বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সম্প্রতি বলেছেন, “আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বাড়ানোর সুযোগ দেখছি।”

কুগেলম্যানের মতে, “হোয়াইট হাউস মূলত বাণিজ্যিক স্বার্থে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে, তবে প্রশাসনের সামগ্রিক বার্তা এখন আরও এগিয়ে গেছে”। এমনকি রুবিও পাকিস্তানকে “মিত্র” বলেও আখ্যা দিয়েছেন, যা সাম্প্রতিক মার্কিন নীতিতে খুবই বিরল।

এদিকে ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রভাব পড়েছে কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও। মার্কিন ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ট্রাম্পের পাকিস্তানপ্রশংসা এড়াতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি সদ্য অনুষ্ঠিত আসিয়ান সম্মেলনে অনলাইনে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস একে “কূটনৈতিক পিছু হটা” বলে আখ্যা দিয়েছে। রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন, “বিব্রত হওয়ার ভয়ে মোদি আরেকটি বৈশ্বিক মঞ্চে যাওয়া থেকে এড়িয়ে গেলেন।”

এছাড়া পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত সংঘাত নিয়েও মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। তিনি এই সংঘাতকে “আমার জন্য সহজে সমাধানযোগ্য” সমস্যা বলে দাবি করেন এবং পাকিস্তানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, “ওরা দারুণ মানুষ।”

তবে পাকিস্তানের প্রতি এই ঝোঁক দেখালেও ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে একটি বড় বাণিজ্য চুক্তিও চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের বক্তব্য আন্তর্জাতিক পরিসরে পাকিস্তানের দাবিকে কিছুটা সমর্থন দিলেও, তার অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার এখনো ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের মধ্যেই রয়েছে।

আরপি/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

বাংলাদেশে মার্কিন নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা সতর্কতা জারি Dec 16, 2025
img
রিমান্ডে আনিস আলমগীরকে অসম্মান না করার আহ্বান Dec 16, 2025
img
বিজয় দিবস উপলক্ষে লাল-সবুজে সেজেছে ঢাকা Dec 16, 2025
img
'আমার কাছে সঙ্গীতই অক্সিজেন' Dec 16, 2025
img
জয়-পরাজয়ের ঊর্ধ্বে জনগণের অধিকার : ইশরাক হোসেন Dec 16, 2025
img
ভোলায় বিএনপি-জামায়াতের দুই দফা সংঘর্ষ, আহত ৩০ Dec 16, 2025
img
বরিশালে বিএনপির ২শ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নেত্রীর মামলা Dec 16, 2025
img
শহীদদের স্মরণ করে ঐক্যের বাংলাদেশ গড়তে হবে: নাহিদ ইসলাম Dec 16, 2025
img
শহীদ মিনারের আলপনা সরাল প্রশাসন, ঢেকে দেওয়া হলো দেয়াল Dec 16, 2025
img
’৭১ ও ’২৪-এর অবদান অস্বীকার করলে আর বীর জন্ম নেবে না: জামায়াত আমির Dec 16, 2025
img
বাজার থেকে কিটক্যাট চকলেট অপসারণের নির্দেশ Dec 16, 2025
img
পাঁচ নেতার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করল বিএনপি Dec 16, 2025
img
মধ্যরাতে আদেশে কমিশনার হলেন ৮ শুল্ক কর্মকর্তা Dec 16, 2025
img
প্রায় শেষ মেসির ভারত সফর, আসবেন কি টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখতে? Dec 16, 2025
img
আইএল টি-টুয়েন্টি লিগে জিতেছে তাসকিনের শারজাহ Dec 16, 2025
img
সুপ্রিম কোর্টের ক্যান্টিনে আগুন Dec 16, 2025
img
ছাত্র-জনতা হত্যা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার Dec 16, 2025
img
হাদির ঘটনায় ফয়সাল করিমের এক সহযোগী গ্রেপ্তার Dec 16, 2025
img
আজ মহান বিজয় দিবস Dec 16, 2025
img
আরও দুই মামলায় আলোচিত ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী শ্যোন আটক Dec 16, 2025