পেঁয়াজ পাতার যত স্বাস্থ্যগুণ

পেঁয়াজ নেই, এমন কোনো রান্না ঘর হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ, কোনো রান্না শুরু করার আগে, কড়াইতে তেল দেয়ার পরপরই সাধারণত: যে উপাদানটি ব্যবহার করা হয় সেটি পেঁয়াজ। শুধু অন্য রান্নার অনুষঙ্গ নয়; সরাসরি কাঁচা পেঁয়াজ, ভর্তা, আচার এবং সালাদ হিসেবেও পেঁয়াজের কদর কম নয়।

তবে এক মাস ধরে হঠাৎ করেই বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। দাম রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার পর এর প্রভাব দেশের অন্যান্য এলাকার মতো ঢাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপরেও পড়েছে। অপেক্ষাকৃত দরিদ্র, শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবটা বেশি। ঢাকার বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বস্তিবাসীরা পেঁয়াজ কেনা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন।

এদিকে, শীতকাল শুরু হওয়ায় বাজারে আসতে শুরু করেছে পেঁয়াজ পাতা। যাকে স্প্রিং অনিওন বা সবুজ পেঁয়াজও বলা হয়। পেঁয়াজের তুলনায় সহজলভ্য হওয়ায় বেশিরভাগ লোক বাজার থেকে পেঁয়াজ পাতা কিনছেন। অনেকেই হয়ত জানেন না, এই পেঁয়াজ পাতাও দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদার অনেকখানি পূরণ করতে পারে।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, পেঁয়াজ পাতার রয়েছে বেশ কিছু স্বাস্থ্যগুণও। এটি ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি১২ ও থায়ামিন সমৃদ্ধ। কোয়ারসেটিন নামক ফ্ল্যাভনয়েডের উৎস এই পেঁয়াজ পাতা। এছাড়াও রয়েছে কপার, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ফাইবার।

চলুন জেনে নিই, পেঁয়াজ পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কী উপকার করে থাকে-

হৃদ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
পেঁয়াজ পাতার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেলের কাজে বাঁধা প্রদান করে কোষ কলার এবং DNA এর ক্ষতি রোধ করতে পারে। পেঁয়াজ পাতার ভিটামিন-সি কোলেস্টেরল ও রক্ত চাপের উচ্চ মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়। পেঁয়াজ পাতার সালফার করোনারি হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি কমিয়ে থাকে।

শ্বাসযন্ত্রের কাজে সহায়তা করে
অ্যান্টি ভাইরাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় পেঁয়াজ পাতা সাধারণ ঠাণ্ডা, ফ্লু ও ভাইরাল ইনফেকশনের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শ্বাসযন্ত্রের কাজকে উদ্দীপিত করা ও কফ বাহির করে দিতে সাহায্য করে পেঁয়াজ পাতা।

হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে
পেঁয়াজ পাতায় উচ্চমাত্রার ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-কে রয়েছে, যা হাড়ের স্বাভাবিক কার্যাবলীর জন্য প্রয়োজনীয়। ভিটামিন-সি কোলাজেনের সমন্বয় সাধনে কাজ করে, যা হাড়কে শক্তিশালী করে। অন্যদিকে ভিটামিন-কে হাড়ের ঘনত্ব রক্ষায় প্রধান ভূমিকা পালন করে।

স্বাভাবিক দৃষ্টির রক্ষণাবেক্ষণ করে
লুটেইন ও জেনান্থিন নামক ক্যারোটিনয়েড এর উপস্থিতির জন্য পেঁয়াজ পাতা চোখের প্রতিরক্ষায় প্রভাব বিস্তার করে। চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং স্বাভাবিক দৃষ্টির রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ভিটামিন-এ, যা স্প্রিং অনিওন এর সবুজ অংশে থাকে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
সবুজ পেঁয়াজের সালফার যাতে অ্যালাইল সালফাইড থাকে তা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। সবুজ পেঁয়াজে ক্যান্সাররোধী উপাদান ফ্লেভনয়েড থাকে।

পাকস্থলীর জটিলতা প্রতিরোধ করে
পেঁয়াজ পাতা গ্যাস্ট্রো ইন্টেস্টাইনাল সমস্যা প্রশমনে উপকারী ভূমিকা রাখে। ডায়রিয়া ও পাকস্থলীর জটিলতার ক্ষেত্রে শক্তিশালী প্রাকৃতিক প্রতিকার হচ্ছে পেঁয়াজ পাতা। অধিকন্তু রুচি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং পেঁয়াজ পাতার উচ্চমাত্রার ফাইবার হজম সহায়ক।

ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে
পেঁয়াজ পাতার খনিজ উপাদান সালফার ছত্রাকের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে এবং ভিটামিন-কে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। এছাড়াও পেঁয়াজ পাতা রক্ত সংবহনের উন্নতি করে এবং শরীরে ভিটামিন-বি১ এর শোষণের মাধ্যমে চাপ ও ক্লান্তি কমায়। পেঁয়াজ পাতায় থাকা ভিটামিন-সি শরীরের কলার প্রদাহ ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

এছাড়াও পেঁয়াজ পাতায় অ্যান্টি ইনফ্ল‍্যামেটরি ও অ্যান্টি হিস্টামিন নামক উপাদান রয়েছে। যা আরথ্রাইটিস ও অ্যাজমার চিকিৎসায় ভালো ফল দেয়, বিপাকে সহায়তা করে, চোখের অসুখের জন্য ভালো, ত্বকের কুঞ্চন প্রতিরোধ করে এবং রক্তের সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ