পর্দা উঠেছে মিসরের নতুন গ্র্যান্ড ‘ইজিপশিয়ান’ মিউজিয়ামের। প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি ‘গিজার খুফুর গ্রেট পিরামিডে’র পাশে মিসর আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করছে বিশাল প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর। দীর্ঘ দুই দশকের অপেক্ষা শেষে অবশেষে কায়রোতে উদ্বোধন হয়েছে এটি।
গতকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় প্রায় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই বিশাল জাদুঘরটি, যা প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার প্রতি উৎসর্গীকৃত।
‘গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম’ প্রায় ১ লাখ নিদর্শনের সমাহারে সাজানো হয়েছে। এখানে প্রাক-রাজবংশীয় যুগ থেকে শুরু করে গ্রীক ও রোমান যুগ পর্যন্ত প্রায় সাত সহস্রাব্দের মিসরের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
বিশিষ্ট মিসরবিদরা মনে করছেন, এই জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা বিদেশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ মিশরীয় নিদর্শন ফেরত আনার দাবিকে আরো জোরদার করবে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে প্রদর্শিত বিখ্যাত ‘রোসেটা স্টোন’।
গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম (জিইএম)-এর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হবে বালক রাজা তুতানখামুনের অক্ষত সমাধি থেকে উদ্ধারকৃত সম্পূর্ণ সংগ্রহ। ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক হাওয়ার্ড কার্টারের আবিষ্কারের পর প্রথমবার একসঙ্গে প্রদর্শিত হবে এসব সংগ্রহ। প্রদর্শনীর মধ্যে রয়েছে তুতানখামুনের চমকপ্রদ সোনার মুখোশ, সিংহাসন এবং রথ।
প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বিশাল জাদুঘর কমপ্লেক্সটি প্রতি বছর ৮০ লাখ দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা আঞ্চলিক সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মিসরীয় পর্যটনকে উন্নত করবে।
গিজা মালভূমির পিরামিডগুলোর একজন গাইড এবং মিসরবিদ আহমেদ সেদ্দিক বলেন, ‘আমরা আশা করি গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম মিসরবিদ্যা এবং সাংস্কৃতিক পর্যটনের একটি নতুন স্বর্ণযুগের সূচনা করবে।’
তুতানখামুনের সংগ্রহের পাশাপাশি, ৪ হাজার ৫০০ বছর পুরনো খুফুর চমকপ্রদ সমাধি নৌকা নতুন প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে। এটি প্রাচীনকালের অন্যতম প্রাচীন ও সেরা সংরক্ষিত জাহাজ। তবে জাদুঘরের বেশিরভাগ গ্যালারী দর্শনার্থীদের জন্য গত বছর থেকেই খোলা রয়েছে।
নতুন জাদুঘরটি ৫ লাখ বর্গমিটার (৫.৪ মি বর্গফুট) বিস্তৃত।
এটি প্রায় ৭০টি ফুটবল মাঠের সমান। বাইরের অংশটি হায়ারোগ্লিফ এবং স্বচ্ছ অ্যালাবাস্টার দিয়ে ঢাকা, যার প্রবেশপথটি পিরামিড আকৃতির।
জিইএম অন্যতম আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, ৩ হাজার ২০০ বছর পুরনো ১৬ মিটার লম্বা ঝুলন্ত অবেলিস্ক, যা শক্তিশালী ফারাও রামেসিস দ্বিতীয়-এর এবং তার বিশাল ১১ মিটার উচ্চ প্রতিমূর্তি। মূর্তিটি ২০০৬ সালে কায়রো রেলওয়ে স্টেশনের কাছ থেকে একটি জটিল অভিযানের মাধ্যমে নতুন জাদুঘরের জন্য স্থানান্তর করা হয়।
একটি বিশাল সিঁড়ি প্রাচীন অন্যান্য রাজা-রানির মূর্তিতে সজ্জিত আর ওপরের তলায় একটি বড় জানালা থেকে গিজার পিরামিডের সুন্দরভাবে ফ্রেম করা দৃশ্য দেখা যায়। জাদুঘরটি প্রথম ১৯৯২ সালে রাষ্ট্রপতি হোসনি মোবারকের শাসনামলে প্রস্তাবিত হয়েছিল এবং ২০০৫ সালে নির্মাণ শুরু হয়েছিল। অনুমান অনুসারে, এটি সম্পূর্ণ হতে এখন গ্রেট পিরামিডের মতোই সময় লেগেছে।
এই প্রকল্পটি আর্থিক সংকট, ২০১১ সালের আরব বসন্ত (মুবারককে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল) এবং কোভিড-১৯ মহামারী ও আঞ্চলিক যুদ্ধের কারণে ব্যাহত হয়। মিসরের প্রত্নতত্ত্ববিদরা নতুন জাদুঘরকে একাডেমিক গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন, যা নতুন আবিষ্কারের পথ খুলে দিচ্ছে।
এখানে কর্মরত মিসরীয় সংরক্ষণবিদরা ইতিমধ্যেই তুতানখামুনের বিভিন্ন নিদর্শন সাবধানে পুনরুদ্ধার করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে তার চমকপ্রদ বর্ম। এটি কাপড় এবং চামড়া দিয়ে তৈরি। মিসরের আইন অনুযায়ী, এমন পুনরুদ্ধার কাজ শুধুমাত্র মিসরীয়রাই করতে পারবেন।
আইকে/টিএ