সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে থাকা সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের নতুন নিরাপত্তাবিধি। এই বিধি অনুযায়ী এখন থেকে সাংবাদিকরা পূর্বানুমতি ছাড়া প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট ও তার শীর্ষ সহযোগীদের অফিসসহ ওয়েস্ট উইংয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রুম ১৪০ যা আপার প্রেস নামে পরিচিত এ প্রবেশ করতে হলে সাংবাদিকদের এখন থেকে আগে থেকেই সময় নির্ধারণ করতে হবে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সম্প্রতি গঠনগত পরিবর্তনের পর এনএসসি ও হোয়াইট হাউস যোগাযোগ টিমের হাতে থাকা সংবেদনশীল তথ্যের সুরক্ষা।
নির্দেশনায় বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মীদের সঙ্গে হোয়াইট হাউস যোগাযোগ টিমের সমন্বয় বজায় রাখা এবং সংবেদনশীল উপকরণ সুরক্ষার স্বার্থে সাংবাদিকদের পূর্ব অনুমতি ছাড়া রুম ১৪০-এ প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলো।
‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া প্রবেশ নয়’
এই সিদ্ধান্তে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি অফিসের আশপাশের সেই এলাকা কার্যত বন্ধ হয়ে গেল, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকরা হঠাৎ করেই কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য যাচাই বা মন্তব্য নিতে পারতেন।
সাংবাদিকরা আগে লেভিট, তার ডেপুটি স্টিভেন চুয়েংসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারতেন যা গত কয়েক দশক ধরে হোয়াইট হাউস সংবাদ কাভারেজের একটি ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত।
তবে ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি চুয়েং এক্স-এ পোস্ট করে এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, কিছু সাংবাদিক অনুমতি ছাড়া অফিসের ভিডিও ও অডিও ধারণ করেছেন, এমনকি গোপন তথ্যের ছবি তুলেছেন। তার ভাষায়, কেউ কেউ সীমাবদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করেছেন, আবার কেউ বন্ধ দরজার মিটিংয়ে আড়ি পাতার চেষ্টা করেছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, কিছু সাংবাদিক নাকি মন্ত্রিসভার সদস্যদের দপ্তরের বাইরে অপেক্ষা করে অ্যামবুশ প্রশ্ন করছেন।
স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ
হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ওয়েইজিয়া জিয়াং বলেন, হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিভাগের ঐতিহ্যগতভাবে উন্মুক্ত এলাকাগুলোতে সাংবাদিকদের প্রবেশ সীমিত করা স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার জন্য বড় ধাক্কা। প্রেস সেক্রেটারির অফিসে প্রবেশাধিকার সরকারকে জবাবদিহির আওতায় রাখতে অপরিহার্য। তবে সাংবাদিকরা এখনও হোয়াইট হাউসের অন্য একটি নির্দিষ্ট কর্মস্থলে প্রবেশ করতে পারবেন, যেখানে নিম্নস্তরের যোগাযোগকর্মীরা কাজ করেন।
এই নির্দেশনা আসে পেন্টাগনের নতুন মিডিয়া নীতির পরপরই। চলতি মাসের শুরুতে প্রতিরক্ষা দপ্তর সাংবাদিকদের নতুন নিয়মে সই না করায় বহু সংবাদমাধ্যমকে তাদের অফিস থেকে সরে যেতে বাধ্য করে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যেসব সাংবাদিককে নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে ধরা হবে বা যারা কিছু গোপন এমনকি কিছু অগোপন তথ্য জানতে চাইবেন, তাদের প্রেস অ্যাক্সেস বাতিল করা যেতে পারে।
রয়টার্স, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও ব্লুমবার্গসহ অন্তত ৩০টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এই শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানায়, একে তারা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি সরাসরি হুমকি বলে মন্তব্য করেছে। এর আগে ১৯৯৩ সালে বিল ক্লিনটন প্রশাসনও সাময়িকভাবে ওয়েস্ট উইংয়ে সাংবাদিক প্রবেশ সীমিত করেছিল, কিন্তু জনমতের চাপে দ্রুত সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করতে হয়েছিল।
ট্রাম্প প্রশাসনের আগের মেয়াদেও রয়টার্স, এপি ও ব্লুমবার্গের মতো বড় সংস্থাগুলোকে স্থায়ী প্রেস পুল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল যদিও তারা পরে অস্থায়ীভাবে কাভারেজের সুযোগ পায়। সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্তে প্রশাসনের সংবাদমাধ্যমবিরোধী মনোভাব নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
প্রেস স্বাধীনতা রক্ষাকারী সংগঠনগুলো হোয়াইট হাউসকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিক ও প্রশাসনের সম্পর্কের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এক জ্যেষ্ঠ সংবাদদাতা বলেন, যখন সাংবাদিকরা দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ভবনের কর্মকর্তাদের স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করতে পারেন না, তখন জনগণের জানার অধিকারও সীমিত হয়ে পড়ে।
এসএস/টিএ