বহু বছরের প্রতীক্ষার পর, শনিবার (১লা নভেম্বর) সন্ধ্যায় পিরামিডের পাশে গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম (বিশাল মিশরীয় জাদুঘর) উদ্বোধন করা হলো। এটি একটি একক সভ্যতাকে উৎসর্গ করা বিশ্বের বৃহত্তম প্রত্নতাত্ত্বিক কমপ্লেক্স।
গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামের নির্মাণে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে এবং এতে মিশরের ইতিহাস তুলে ধরা ৫৭,০০০-এরও বেশি প্রত্নসামগ্রী রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং ৭৯টি দেশের প্রতিনিধিদলের উপস্থিতিতে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয়। এই প্রতিনিধিদলগুলোর মধ্যে ৩৯টির নেতৃত্বে ছিলেন রাজা এবং বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ।
জাদুঘরের একটি প্রাঙ্গণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়, যেখান থেকে পটভূমিতে তিনটি পিরামিড দেখা যাচ্ছিল। শিল্পীরা ফারাওদের স্বতন্ত্র পোশাকে সজ্জিত ছিলেন।
মিশরের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা মাদবৌলি জাদুঘরটিকে একটি "অনন্য বৈশ্বিক স্থাপনা" এবং "মিশরের ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা" বলে অভিহিত করেছেন। উদ্বোধনের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, "এই বিশ্বমানের স্মৃতিস্তম্ভটি মানবতার প্রতি মিশরের একটি উপহার-এমন একটি জাতির, যার ৭,০০০ বছরেরও বেশি ইতিহাস রয়েছে।"
গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামের ধারণাটির উদ্ভব হয়েছিল ১৯৯০-এর দশকে। সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক ২০০২ সালে এই জাদুঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, কিন্তু প্রকল্পটি বছরের পর বছর ধরে থমকে ছিল। প্রেসিডেন্ট সিসির অধীনে ২০১৪ সালে আবার কাজ শুরু হয় এবং তিনি এটিকে মানব ইতিহাসের বৃহত্তম জাদুঘর করার পরিকল্পনা সম্প্রসারণ করেন।
গিজা পিরামিড থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জাদুঘরটি ৪ লাখ ৯০ হাজার বর্গ মিটার জুড়ে বিস্তৃত। দর্শনার্থীরা পাঁচতলা কাঁচের সম্মুখভাগের মাধ্যমে পিরামিডগুলো দেখতে পারেন।
প্রকল্পটিতে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে, যার অর্থায়ন হয়েছে মোট ৮০০ মিলিয়ন ডলারের দুটি জাপানি ঋণের পাশাপাশি মিশরীয় সরকারের তহবিল, অনুদান এবং অংশীদারিত্বের মাধ্যমে।
প্রবেশদ্বারের হলে দ্বিতীয় রামসেসের একটি বিশাল মূর্তি রয়েছে এবং জাদুঘরে মিশরের ইতিহাস তুলে ধরা ৫৭,০০০-এরও বেশি প্রত্নসামগ্রী রয়েছে। জাদুঘরে ১২টি প্রধান গ্যালারি রয়েছে, যার মধ্যে তুতানখামেন সংগ্রহে ৫,০০০-এরও বেশি প্রত্নসামগ্রী রয়েছে, যা ১৯২২ সালে সমাধি আবিষ্কারের পর প্রথমবারের মতো একসঙ্গে প্রদর্শিত হচ্ছে।
এর নকশাটি তিনটি পিরামিড থেকে আসা সূর্যের রশ্মিকে একত্রিত করার প্রতীক, যা একটি শঙ্কু আকৃতির কাঠামো অর্থাৎ জাদুঘর নিজেই তৈরি করে। উপর থেকে দেখলে একে 'চতুর্থ পিরামিড' বলে মনে হয়।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি
পিএ/টিএ