পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও জনগণের প্রতি আরও জবাবদিহিমূলক করতে বিশেষ কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পুলিশের সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে এই নতুন কমিশনের অধীনে-এ লক্ষ্যেই আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত করেছে ‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বয়স যতই হোক না কেন, মহা-পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) পদে নিয়োগের তারিখ থেকে দুই বছর চাকরিতে থাকবেন। আইজিপি নিয়োগের এমন বিধান সরকারি চাকরি আইনের দ্বাদশ অধ্যায়ের ৪৩ ধারার সঙ্গে সরাসরি ‘সাংঘর্ষিক’। প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের চেয়ারপারসনসহ শীর্ষ তিন পদেই অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। এর ফলে পুলিশের ‘নিয়ন্ত্রণ’ বিচারকদের কবজায় চলে যাবে বলে মনে করছেন প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
প্রশাসন বিশ্লেষক মো. ফিরোজ মিয়া দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আইজিপি নিয়োগের বিধানটি সরাসরি সরকারি চাকরি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ পুলিশ এ আইনের অধীনেই চাকরি করে। সুতরাং ৫৯ বছরের বেশি চাকরি করার তাদের এখতিয়ার নেই। এ নিয়ম ভবিষ্যতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিবসহ অন্যান্য সচিব কিংবা সংস্থা প্রধানদের খেপিয়ে তুলতে পারে।
তারাও এমন বিধান চাইবে যেন তারা সচিব পদে কমপক্ষে দুই বছর কিংবা ৫৯ বছরের বেশি সময় চাকরি করতে পারেন। ফলে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
অন্যদিকে, এ কমিশনের চেয়ারপারসনসহ গুরুত্বপূর্ণ যেসব পদে বিচারকদের নিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, সেটিও যৌক্তিক কথা নয়। প্রশ্ন রেখে ফিরোজ মিয়া বলেন, বিচারপতিরা কি পুলিশ বিষয়ে অভিজ্ঞ? কেন তাদের নিয়োগ দিতে হবে? বরং যারা প্রশাসনিকভাবে দক্ষ এবং পুলিশ বিষয়ে অভিজ্ঞ, তাদের কমিশনে দায়িত্ব দিতে হবে। প্রশাসন কিংবা পুলিশ ক্যাডারের লোকজনই পুলিশ কমিশনে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশের প্রশাসনিক আইনকানুন নিয়ে বহু গ্রন্থ লিখেছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ মিয়া।
অধ্যাদেশটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সরকারি চাকরি আইনে কর্মচারীদের অবসরের সময়সীমা ৫৯ বছর। তবে মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারীর ক্ষেত্রে ৬০ বছর। পুলিশও এ আইনের অধীনে চাকরি করে। কিন্তু পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ অনুযায়ী ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ার অল্প সময় আগে কেউ আইজিপি পদে নিয়োগ পেলে তিনি ৬১ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরির সুযোগ পাবেন। ফলে তিনি অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীর চেয়ে বেশি সময় চাকরিতে থাকার সুবিধা পাবেন। আবার অনেকে খুব কম বয়সে চাকরিতে প্রবেশ করে তাড়াতাড়ি পদোন্নতি পেয়ে আইজিপি হওয়ার পর মাত্র দুই বছর চাকরি করে অবসরে যাবেন। হয়তো তিনি ৫৯ বছর পূর্ণ করার সুযোগও পাবেন না। সুতরাং উভয় নিয়োগের ক্ষেত্রেই বৈষম্য সৃষ্টি হবে।
এ ছাড়া আইজিপি নিয়োগের এমন বিধান চালু হলে সরকারের অন্যান্য সচিব কিংবা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। সুতরাং এ অধ্যাদেশ ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা কিংবা অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য সরকারি চাকরি আইনের পরিপন্থি ধারাটি পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশে যুক্ত করা মোটেই সমীচীন হবে না বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
কেএন/টিকে