গাজার দিকে ধেয়ে আসছে ভয়াবহ ঝড়, বড় ঝুঁকিতে ৯ লাখ ফিলিস্তিনি

ফিলিস্তিনের গাজার দিকে ধেয়ে আসছে ভয়াবহ ঝড়। এর জেরে বড় ধরনের বন্যা ও মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে পড়েছেন দক্ষিণ গাজার ৯ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি।

এছাড়া ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকা অঞ্চলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, দক্ষিণ গাজার ৯ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ তীব্র ঝড়ের কারণে ভয়াবহ বন্যার ঝুঁকিতে আছে বলে বৃহস্পতিবার সতর্ক করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েলের দুই বছরব্যাপী আগ্রাসনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া আর মানবিক সংকটে বিপর্যস্ত এই অঞ্চলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠছে।

খান ইউনিস পৌরসভার মুখপাত্র সাঈদ লাক্কান আনাদোলুকে বলেছেন, ঝড়টি “খুবই বিপজ্জনক” এবং উপকূলজুড়ে হাজারো তাঁবু প্লাবিত হতে পারে, শহরের ভেতরের বড় এলাকাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তিনি জানান, নষ্ট হয়ে যাওয়া ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পুকুরগুলো স্থানীয়দের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফিলিস্তিনি আবহাওয়া অধিদপ্তরও শুক্রবার ও শনিবার উপত্যকা ও নিচু এলাকায় হঠাৎ বন্যার আশঙ্কা করেছে।

লাক্কান বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ “অভূতপূর্ব ও বিপর্যয়কর” পরিস্থিতির মুখোমুখি। ৯ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে আছে, আর সড়ক, পানি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার অন্তত ৮৫ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় সৃষ্ট প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টন ধ্বংসস্তূপ সামলাতেও অক্ষম শহরটি।

তার ভাষায়, “ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার মিটার সড়ক, ৩ লাখ মিটার পানি সরবরাহ লাইন এবং ১ লাখ ২০ হাজার মিটার ড্রেনেজ লাইন ধ্বংস হয়েছে। শহর কার্যত অচল হয়ে গেছে।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, জ্বালানি সংকটের কারণে ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনগুলো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

লাক্কান জানান, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে পৌর কর্তৃপক্ষ মাত্র ১৬ হাজার লিটার ডিজেল পেয়েছে— যা দিয়ে তিন দিনের বেশি কাজ চালানো সম্ভব নয়। অপ্রতুল সরঞ্জাম নিয়ে তারা বাঁধ তৈরির চেষ্টা করছেন এবং উপত্যকার পানি প্রবাহ ঘুরিয়ে দিয়ে তাঁবু ও নিচু এলাকা রক্ষার চেষ্টা করছেন।

তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েল প্রতিদিনই চুক্তি ভঙ্গ করছে, এতে শত শত ফিলিস্তিনি হতাহত হচ্ছেন এবং খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ ঢুকতেও বাধা তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, আসন্ন ঝড়ের সময় শহরকে ডুবন্ত অবস্থা থেকে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে মোবাইল পাম্প ও অতিরিক্ত সরঞ্জাম প্রয়োজন।

খান ইউনিসের পরিস্থিতিকে তিনি “চরম হতাশাজনক” হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ধ্বংসস্তূপ সরানো ও জরুরি সেবা পুনর্গঠনে এখনই আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন। গাজার উপকূলে বন্যা ও মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা ২০ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষকে রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি যুদ্ধ চলাকালে গাজার ২ লাখ ৮২ হাজারের বেশি বাড়ি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে হাজারো পরিবার শীতের আগমুহূর্তে তাঁবুতে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।

এছাড়া গত দুই বছরের শীতে ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিতে হাজারো তাঁবু ছিঁড়ে গেছে বা প্লাবিত হয়েছে। কাদায় ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে মানুষের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র। গত সেপ্টেম্বরের শেষে গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছিল, গোটা এলাকার ৯৩ শতাংশ তাঁবু ভেঙে পড়েছে এবং সেগুলো আর থাকার উপযোগী অবস্থায় নেই।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচনে রংপুর-৬ আসনে এনসিপির মনোনয়ন সংগ্রহ করলেন মাসুম বিল্লাহ Nov 14, 2025
img

যুক্তরাজ্যের উন্নয়নমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত প্রধান উপদেষ্টার Nov 14, 2025
img
শ্রেয়ার কনসার্টে অপ্রীতিকর ঘটনায় অজ্ঞান ২ শ্রোতা Nov 14, 2025
img
আবার বিয়ে করতে যাচ্ছেন ইংল্যান্ড কিংবদন্তি স্ট্রস Nov 14, 2025
img
কিছু দল ভোটে হারার ভয়ে সরকারের ওপর নাখোশ: খোকন Nov 14, 2025
img
আইপিএল নিলামের আগে ট্রেডে দল পাল্টালেন ৬ তারকা ক্রিকেটার Nov 14, 2025
img
আগে গণভোট পরে জাতীয় নির্বাচন, না হয় নির্বাচন হবে না: এ টি এম মাসুম Nov 14, 2025
img
ভোলার ভেদুরিয়া সার কারখানা স্থাপনের সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শনে ৩ উপদেষ্টা Nov 14, 2025
img
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির মেয়াদ বাড়ছে আরও ৫ বছর Nov 14, 2025
img
ম্যাচটা অবশ্যই জেতা উচিত ছিল: হামজা চৌধুরী Nov 14, 2025
img
গাজীপুরে বিএনপিতে যোগ দিলেন ৮ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাঁচ শতাধিক সদস্য Nov 14, 2025
img
পুলিশ হেফাজতে ২ চীনা নাগরিক Nov 14, 2025
img
ক্রিকেটপাড়ায় তোলপাড় : স্মৃতি মান্ধানার ‘বিয়ের কার্ড’ ভাইরাল Nov 14, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের মাধ্যমে সংকট কেটে গেছে : নুরুল হক নুর Nov 14, 2025
img
যুবসমাজ মাতাতে গ্লোবট্রটর মঞ্চে আশিষ Nov 14, 2025
img
ফের জল্পনায় বলিউড ও আইপিএলের অনিরুদ্ধ-কাব্য জুটি! Nov 14, 2025
img
রাজধানীজুড়ে বাড়তি সতর্কতা, মাঠে ১২ প্লাটুন বিজিবি Nov 14, 2025
img
লকডাউন-অগ্নিসংযোগে নির্বাচন বিরোধী মহলেরও সম্পৃক্ততা থাকতে পারে : হাবিব Nov 14, 2025
দিল্লি যাচ্ছেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান Nov 14, 2025
img
কেন পুতিনকে যুদ্ধ থামাতে রাজি করাতে পারছেন না ট্রাম্প? Nov 14, 2025