ভারতের কোনো দালালকে ভোট দেবেন না: মাহমুদুর রহমান

আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে ভারতের কোনো দালালকে ভোট দেবেন না। আমরা দল বুঝি না। যদি ভারতীয় দালালমুক্ত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারি তাহলে প্রয়োজনে সেই প্রতিনিধি ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপনার এলাকায় রাজপথে নেতৃত্ব দেবেন।

তিনি বলেন, ‘আগামী তিন মাস পর দেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচন হতে হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। এজন্য সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে। ঘোষণা দিতে হবে আপনারা নির্বাচনে কারচুপি করবেন না। নির্বাচনে সহযোগিতা করবেন এবং ফলাফল মেনে নেবেন। একটা চার্টার দিতে হবে আপনাদের।

নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে দিল্লির সকল ষড়যন্ত্র আর দাদাগিরি বন্ধ হয়ে যাবে। তবে, ভারত কোনোভাবেই চাইবে না আমাদের দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক। সেজন্য দায়িত্ব তরুণদেরকেও নিতে হবে। তাদেরকে প্রমাণ করতে হবে ভারতের সাথে দালালি করে কেউ এদেশে আর ক্ষমতায় যেতে বা টিকে থাকতে পারবে না।’

শনিবার (১৫ নভেম্বর) যশোরে আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতি ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে একথা বলেন ড. মাহমুদুর রহমান। বহুমাত্রিক জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র প্রাচ্যসংঘ আয়োজিত এই সভা বিকেলে যশোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য আখতার ইকবাল টিয়া এতে সভাপতিত্ব করেন।

ড. মাহমুদুুর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে তরুণরা দেশকে শুধু ফ্যাসিবাদ মুক্তই করেননি, একটি নতুন বন্দোবস্ত কায়েম করার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। সেই বন্দোবস্ত হলো গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। যা একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই সম্ভব। এজন্য সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে। তরুণদের স্বপ্ন ও আবেগের সাথে বেঈমানি করা যাবে না। তাহলে এই জাতি কাউকে ক্ষমা করবে না।

মাহমুদুর রহমান বক্তব্যের শুরুতে জুলাই আন্দোলনের শহীদ আনাসের কথা স্মরণ করে বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে যখন তরুণরা একের পর এক শহীদ হচ্ছিলেন তখন আনাস তার মায়ের কাছে একটি চিঠি লিখে রেখে সেই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার ভাইয়েরা যখন রাস্তায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধে জীবন দিচ্ছেন তখন আমি ঘরে থাকতে পারলাম না।’

‘আনাসদের মত শিশুদের জীবনদান ভুলে যাবেন না’ উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যুদ্ধ করবেন না। তাদের স্বপ্নটাকে বোঝার চেষ্টা করবেন। কীভাবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন তা বুঝবেন।’

শেখ হাসিনার দেশে ফেরার আলোচনা প্রসঙ্গে মাহমুদর রহমান বলেন, ‘আপা আর ফিরবেন না। এই চ্যাপ্টার ক্লোজড।’

তিনি বলেন, ‘‘২০১৩ সালে যখন শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ সংগঠিত হচ্ছিল তখন আমি আমার দেশের মাধ্যমে বলেছিলাম ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’। তখন কোন রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদ শব্দটি উচ্চারণ করতো না। তারা আমাকে একজন আপদ, মৌলবাদী বলতেন। ২০১৮ সালে বলেছিলাম পৃথিবীতে কোথাও কোনো ফ্যাসিস্টের পতন বিপ্লব ছাড়া সম্ভব হয়নি। হাসিনার পতনও বিপ্লবের মাধ্যমে হতে হবে। সে সময়ও আমাকে বলা হলো আমি একজন উগ্রবাদী। প্রশ্ন করা হলো বাংলাদেশে বিপ্লব কীভাবে সম্ভব হবে, বিপ্লবী কই। কিন্তু, আনাসসহ এদেশের তরুণরা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, তারাই বিপ্লবী।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এই সরকার বিপ্লবী সরকার। কিন্তু তারা নিজেরা বুঝতে পারেনি। তারা বলেন তারা অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু,যদি বুঝতেন যে তারাই প্রকৃত বিপ্লবী সরকার তাহলে প্রতিটি স্তর থেকে ফ্যাসিবাদের উচ্ছেদ হতো। তা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘৭১ সালে পাকিস্তানি সরকার এদেশের মানুষের ওপর জুলুম চালিয়েছিল। তাদের জুলুমবাজির বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ লড়াই করে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু, প্রকৃত স্বাধীনতা আসেনি। তখন শেখ মুজিবের মাধ্যমে এদেশে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল ভারত। দেশে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা আসে মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর।

সেই স্বাধীনতা ২০০৯ সালে হরণ করা হয়েছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। যা ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে এদেশের ছাত্র-জনতা পুনরুদ্ধার করেছেন। এই বিপ্লবের মাধ্যমে তরুণদের একটা রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটেছে। কোন শক্তিই নেই তাদেরকে অবজ্ঞা বা উপেক্ষা করতে পারে।’

ড. মাহমুদুর রহমান তরুণ প্রজন্মকে বাংলার প্রকৃত ইতিহাস ও সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্য চর্চা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে বাংলার প্রকৃত ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে হবে। যদি আমরা আমাদের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধারণ করতে পারি তাহলে কোলকাতার ব্রাহ্মণ্যবাদ আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। সাংস্কৃতিক বিজয় হলে রাজনৈতিক বিজয় হবে। আর রাজনৈতিক বিজয় হলে দিল্লির আধিপত্য ধ্বংস হবে।’

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল মজিদ, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ এবং লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট বেনজীন খান।

আলোচনা সভার শুরুতে সামিউল আজিম, সোহানসহ জুলাই বিপ্লবের চার ছাত্র প্রতিনিধি বক্তব্য দেন।

এর আগে দুপুরে ওবায়দুল বারী হলে প্রাচ্যসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মাহমুদুর রহমান।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img

খালেদা জিয়ার জানাজা

সংসদ এলাকায় জায়গা না পেয়ে বিভিন্ন সড়কে হাজারো মানুষ Dec 31, 2025
img
খালেদা জিয়ার সম্মানে ব্রিটিশ হাইকমিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত Dec 31, 2025
img
স্মার্ট এনআইডি কার্ড বিতরণ শুরু, এসএমএসে জানা যাবে স্ট্যাটাস Dec 31, 2025
img
সিলেট স্টেডিয়ামে হবে খালেদা জিয়ার গায়েবানা জানাজা Dec 31, 2025
img
'কফি হাউজের সেই আড্ডা'-র ৬ বন্ধুর গল্প এবার সিনেমার পর্দায়! Dec 31, 2025
img
খালেদা জিয়ার হাসির জন্যই প্রথম ভোট বিএনপিকে দিয়েছিলেন নাসির Dec 31, 2025
img
তারেক রহমানকে শোকবার্তা পৌঁছে দিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী Dec 31, 2025
img
আগারগাঁও থেকে যান চলাচল বন্ধ, হেঁটেই খালেদা জিয়ার জানাজায় যাচ্ছে মানুষ Dec 31, 2025
img
খালেদা জিয়ার জানাজায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে হেঁটে আসছেন মানুষ Dec 31, 2025
img
‘বর্ডার ২’-এর গান নিয়ে বিতর্ক, ক্ষুব্ধ অনু মালিক! Dec 31, 2025
img
৭০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ৩৮১ কোটি টাকা Dec 31, 2025
img
গোপালগঞ্জে শুটারগানসহ তৌহিদুল গ্রেপ্তার Dec 31, 2025
img
কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান মার্টিনের স্বাস্থ্য সংকটে, কোমায় ভর্তি Dec 31, 2025
img
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বক্সার অ্যান্থনি জশুয়া Dec 31, 2025
img
অতীত ভুলে এগোনোর বার্তা দেবের Dec 31, 2025
img

হেঁটেই খালেদা জিয়ার জানাজায় যাচ্ছে মানুষ

পথে পথে পুলিশ সেনা-বিজিবি মোতায়েন, আগারগাঁও থেকে যান চলাচল বন্ধ Dec 31, 2025
img
বাংলাদেশপন্থী রাজনীতির স্বীকৃতি নিয়েই বিদায় নিলেন খালেদা জিয়া: ফারুকী Dec 31, 2025
img
বিশ্ব কাপ নিয়ে টনি ক্রুসের ভবিষ্যদ্বাণী Dec 31, 2025
img
মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময়সীমা বৃদ্ধির ঘোষণা Dec 31, 2025
img
বেগম জিয়াকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মেট্রো স্টেশনগুলোতে উপচেপড়া ভিড় Dec 31, 2025