গুড় একটি সুপারফুড, যা আপনি শীতের মৌসুমে খুব সহজেই সংগ্রহ করতে পারেন। এটি মূলত অপরিশোধিত চিনি এবং চিনির স্থানে একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প।
লাইফস্টাইল কোচ লুক কোতিনহো শীতের খাদ্যাভ্যাসে গুড় থাকার উপকারিতার সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। গুড় আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, স্বাস্থ্য, ত্বক ও চুলের গুণমানকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। লুক বলেছেন যে, শীতের সময় গুড় উপকারী, কারণ এটি দেহে উষ্ণতা যোগায়। এটি আমাদের ধমনী প্রসারিত করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়।
গুড়ের এমন পুষ্টিগুণের কারণেই আমাদের পিতা-মাতা এবং দাদা-দাদিরা অনেক সময় আমাদেরকে গুড় খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই শীতে আপনিও আপনার খাদ্যাভ্যাসে গুড় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
চলুন জেনে নিই, কেন খাদ্যাভ্যাসে গুড় অন্তর্ভুক্ত করবেন-
- গুড় রক্ত প্রবাহী ধমনীগুলি প্রশস্ত করে। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি খুবই উপকারী। হাইপারটেনশনের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এর ফলে ধমনীর মাধ্যমে রক্ত প্রবাহে অসুবিধা সৃষ্টি হয়। ধমনীর প্রসারণ ঘটলে সহজ রক্ত প্রবাহের সৃষ্টি হয় এবং এটি সামগ্রিক রক্তচাপকে হ্রাস করে।

- খাওয়ার পরে গুড় খাওয়া উচিত, কারণ এটি হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইমকে উদ্দীপিত করতে পারে। আপনার প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে গুড় যুক্ত করলে তা হজমে উন্নতি ঘটাতে পারে এবং এসিডিটি, ফোলাভাব ও গ্যাস হ্রাস করতে পারে।
- খাওয়ার পরে গুড়ের একটি ছোট টুকরো খেলে আপনার খাবারের পরে মিষ্টি কিছু আকাঙ্ক্ষা মিটে যায়।
- কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্যও গুড় কার্যকর। এটি উচ্চ মাত্রার ফাইবার সমৃদ্ধ এবং একটি হালকা রেচক হিসাবেও কাজ করে।
- গুড় লিভারকে ডিটক্সাইফাই (বিষাক্ত পদার্থ মুক্ত) করার ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করে। এটি দস্তা ও সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ এবং আয়ুর্বেদে লিভারের ডিটক্সাইফিং এজেন্ট হিসাবে এবং রক্ত পরিশোধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
- খাদ্যাভ্যাসে গুড় অন্তর্ভুক্ত করলে তা আপনাকে শীতের সাধারণ সমস্যা যেমন- কাশি, সর্দি, ফ্লুসহ অন্যান্য অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে। আপনি কফ ও সর্দি-কাশির প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসাবে এক কাপ গরম পানিতে ১ চা চামচ গুড় মিশিয়ে মিশ্রণটি গ্রহণ করতে পারেন।
- উচ্চ বায়ু দূষণ প্রবণ অঞ্চলে বসবাসকারী লোকেরা গুড় থেকে উপকার পেতে পারেন। কারণ, এটি ফুসফুসকে ডিটক্সাইফাই করতেও সহায়তা করে। হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্তরা খাদ্যাভ্যাসে গুড় অন্তর্ভুক্ত করলে উপকৃত হবেন।
- গুড় বিশেষত শীত মৌসুমে একটি দুর্দান্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী হিসেবে পরিচিত। আয়রন, সেলেনিয়াম, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস প্রভৃতি গুড়ের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস, যা আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
- গুড়ে আয়রন বা লৌহের উপস্থিতি থাকায় এটিকে গর্ভবতী নারী এবং রক্ত স্বল্পতা ও হিমোগ্লোবিন স্বল্পতায় আক্রান্ত লোকদের জন্য দুর্দান্ত খাবার হিসাবে গড়ে তুলেছে।
- শীতকালে জয়েন্টে ব্যথা বাড়তে শুরু করে। আপনি শুকনো আদা গুঁড়ো (১/২ চামচ), কালো তিল (১ চা চামচ), কিছু ঘি ও গুড় (আপনার পছন্দ মতো মিষ্টি স্তর) দিয়ে লাড্ডু তৈরি করতে পারেন। জয়েন্টের ব্যথা কমাতে শীতকালে নিয়মিত এই লাড্ডু খাওয়া উচিৎ।
- যেসব নারীরা মাসিকের বেদনায় ভোগেন, তারা কিছুটা স্বস্তির জন্য ১ চা চামচ গুড় ও ১ চামচ তিল খেতে পারেন।

সাবধানতা
ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা গুড় খেতে পারেন, তবে অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খেতে হবে। লুকের মতে, গুড় রক্তে শর্করার মাত্রায় সাদা চিনির মতো একই প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে গুড় খেতে হবে।
গুড় উচ্চ মাত্রার ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার, তাই খুব বেশি খেলে ওজন বৃদ্ধি ঘটতে পারে। সুতরাং সাদা চিনির পরিবর্তে খাবারে খুব বেশি গুড় ব্যবহারের পূর্বে উল্লেখিত বিষয়গুলো স্মরণে রাখুন। সূত্র: এনডিটিভি
টাইমস/এনজে/জিএস