টানা দুই ম্যাচে হোঁচট খাওয়ায় যা একটু অনিশ্চয়তা জেগেছিল, শেষ ম্যাচে দাপুটে পারফরম্যান্সে তা উড়িয়ে দিল পর্তুগাল। হ্যাটট্রিক করলেন ব্রুনো ফের্নান্দেস ও জোয়াও নেভেস। আর্মেনিয়ার জালে আবার গোল উৎসব করে বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে পা রাখল রবের্তো মার্তিনেসের দল।
আগের ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় পোর্তোয় রোববার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচটি খেলতে পারেননি ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। যদিও অধিনায়কের অনুপস্থিতি বুঝতেই দেননি তার সতীর্থরা। ৯-১ গোলে জিতেছে স্বাগতিকরা।
রেনাতো ভেইগার গোলে পর্তুগাল এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন গনসালো রাসোস। এরপর চলতে থাকে হ্যাটট্রিক করা দুই জনের গোল উৎসব। শেষ গোলটি করেন ফ্রান্সিসকো ফনসেইকাও।
পুরো ম্যাচে যেভাবে ছড়ি ঘুরিয়েছে পর্তুগাল, তাতে স্কোরলাইন আরও বড় হতে পারতো। ৭৫ শতাংশ সময় পজেশন রেখে গোলের জন্য ৩৪টি শট নিয়ে ১৫টি লক্ষ্যে রাখতে পারে তারা। আমের্নিয়ার চার শটের দুটি ছিল লক্ষ্যে।
ছয় ম্যাচে চার জয় ও এক ড্রয়ে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে ‘এফ’ গ্রুপের সেরা হয়ে বিশ্বকাপে উঠল পর্তুগাল।
একই সময়ে শুরু আরেক ম্যাচে অসাধারণ এক ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখেছে রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড। আগের ম্যাচে পর্তুগালকে হারিয়ে দেওয়া দলটি হাঙ্গেরির মাঠে অনেকটা সময় পিছিয়ে ছিল। তবে শেষ দিকের দুই গোলে ৩-২ ব্যবধানে জিতে গ্রুপ রানার্সআপ হয়েছে আইরিশরা, ১০ পয়েন্ট নিয়ে। প্লে-অফ খেলবে তারা।
৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হাঙ্গেরির সব আশা শেষ।
আর্মেনিয়ার মাঠে ৫-০ গোলে জিতে বাছাইপর্ব শুরু করেছিল পর্তুগাল। সেই দলকেই উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিল গত জুনের উয়েফা নেশন্স লিগ জয়ীরা।
ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণ শুরু করে পর্তুগাল, চেপে ধরে প্রতিপক্ষকে। সাফল্যও পেয়ে যায় দ্রুত। সপ্তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে ব্রুনো ফের্নান্দেসের ফ্রি কিক গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে ফেরালেও দলকে বিপদমুক্ত করতে পারেননি, ফিরতি বল পেয়ে হেডে জালে পাঠান ভেইগা।
এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ অবশ্য স্থায়ী হয়নি তাদের। ১১ মিনিট পর কিছুটা সৌভাগ্যসূচক গোল পায় আর্মেনিয়া। পাল্টা আক্রমণে উঠে ডান দিক থেকে গোলমুখে দারুণ ক্রস বাড়ান রানোস, প্রতিপক্ষের চাপের মুখে শট নিতে পারেননি এদুয়ার্দ; তবে এই মিডফিল্ডার পড়ে যাওয়ার আগমুহূর্তে তার পায়ে লেগে বল চলে যায় জালে।
তবে, এরপর যা হলো, তা যত দ্রুত সম্ভব ভুলে যেতে চাইবে আর্মেনিয়া। স্বাগতিকদের ওই স্বস্তি ১০ মিনিট পরই উবে যায়। দুই মিনিটের ব্যবধানে আরও দুবার জালে বল পাঠিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় পর্তুগাল।
২৮তম মিনিটে হাস্যকর ভুলে আবার পিছিয়ে পড়ে আর্মেনিয়া। একজনের ব্যাকপাস গোলরক্ষকের কাছে পৌঁছানোর আগে, মাঝপথে বল ধরে ফাঁকা জালে পাঠান ফরোয়ার্ড রামোস। ওই গোলের উচ্ছ্বাসের রেশ কাটতে না কাটতে ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরাল শটে ব্যবধান বাড়ান নেভেস।
আক্রমণের ঝড় চলতে থাকে প্রথমার্ধের বাকি সময়েও, তাতে বিরতির আগেই ফল নিয়ে সব অনিশ্চয়তা একরকম শেষ হয়ে যায়।
৪১তম মিনিটে ডি-বক্সের বেশ বাইরে থেকে চমৎকার ফ্রি কিকে দলের চতুর্থ গোলটি করেন নেভেস। পিএসজি মিডফিল্ডারের বাঁকানো ফ্রি কিকে বল রক্ষণ প্রাচীরকে ফাঁকি দিয়ে ক্রসবারের লেগে জালে জড়ায়। কিছুক্ষণ পর ফের্নান্দেসের সফল স্পট কিকে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে আর্মেনিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটে রামোসকে বল বাড়িয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ফের্নান্দেস, এরপর সতীর্থের ফিরতি পাস পেয়ে কোনাকুনি শটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড মিডফিল্ডার।
বের্নার্দো সিলভার বদলি নামা ফরোয়ার্ড কার্লোস ফোর্বস ৭০তম মিনিটে ডি-বক্সে ফাউলের শিকার হলে ফের পেনাল্টি পায় পর্তুগাল। এবং আরেকটি সফল স্পট কিকে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ফের্নান্দেস।
সতীর্থের পথে হেঁটে ৮১তম মিনিটে হ্যাটট্রিক পূণ করেন নেভেসও। সতীর্থের হেড পাস ছয় গজ বক্সের বাইরে পেয়ে, ডান পায়ের শটে নিজের তৃতীয় গোলটি করেন ২১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার।
গোলের ক্ষুধা তখনও শেষ হয়নি পর্তুগিজদের। চলতেই থাকে তাদের আক্রমণ। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে গোল উৎসবে যোগ দেন ফনসেইকাও। ডি-বক্সের বাইরে থেকে শটে গোলটি করেন লেয়াওয়ের বদলি নামা এই ফরোয়ার্ড।
টিজে/এসএন