খাদ্য হিসেবে ঘি আমাদের সবার কাছেই পরিচিত। যে কোনো রান্নায় ঘি মিশিয়ে দিলে তার স্বাদ বেড়ে যায়। গরম ভাতে শুধু ঘি মেখেও অনেকে খেয়ে থাকেন।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র এবং বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে, নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে নামমাত্র পরিমাণে দেশি ঘি খাওয়াকে স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী বলে মনে করা হয়। তাই শীতকালেও আপনার পাতে দেশি ঘি বা গরুর দুধ দিয়ে তৈরি এক ধরণের মাখন থাকা উচিত। এটি আমাদেরকে শরীর গরম রাখতেও সহায়তা করবে।
তবে মজার ব্যাপার হলো- আমরা অনেকেই জানি না রূপচর্চায় ঘিয়ের ব্যবহার অন্য অনেক প্রসাধনীর থেকে বেশি কার্যকর।
চলুন রূপচর্চায় ঘিয়ের কিছু ব্যবহার জেনে নিই-
ত্বকের যত্নে
শীতের মৌসুমে আর্দ্রতার অভাবে ত্বকের শুষ্কতা ও চুলকানি বাড়ে। খাদ্যাভ্যাসে ঘি অন্তর্ভুক্ত করলে এটি আপনার ত্বকের বৃদ্ধি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় চর্বি সরবরাহ করবে। এছাড়াও শীতকালে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখার মধ্য দিয়ে এটি আপনাকে স্বাস্থ্যকর ও দ্যুতিযুক্ত ত্বক প্রদান করবে।
ঠোঁটের যত্নে
আপনার আঙুলের ডগায় এক ফোঁটা ঘি নিন এবং এটি আপনার ঠোঁটের উপর আলতোভাবে মাসাজ করুন। সারারাত রেখে দিন। পরের দিন সকালে আপনি নরম ও কোমল ঠোঁট নিয়ে জেগে উঠবেন। ঘি ব্যবহারে ঠোট ফাটা ও ঠোটের শুষ্কতা দূর হবে।
চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে
আপনি কি চোখের নিচের দাগ দূর করতে নানা রকম প্রসাধনী ব্যবহার করে ক্লান্ত? এবার এসব বাজারের পণ্য বাদ দিয়ে খাঁটি ঘি ব্যবহার করুন। এটি সস্তা এবং অবশ্যই খুব কার্যকর। ঘুমানোর আগে প্রতি রাতে আপনার চোখের পাতায় এবং চোখের নীচে ঘি লাগান। পরদিন সকালে এটি পরিষ্কার জলে ধুয়ে ফেলুন।
ঘিয়ের ফেস প্যাক
ফেস প্যাকে ঘি যোগ করে আপনার নিস্তেজ ত্বক পুনরুদ্ধার করুন। কাঁচা দুধ ও বেসনের সঙ্গে ঘি মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এটি আপনার মুখ এবং ঘাড়ে প্রয়োগ করুন। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা জলে ধুয়ে নিন।
এছাড়াও ঘিয়ের অন্যান্য উপকারিতা-
আপনাকে উষ্ণ রাখতে সহায়তা করবে
শীতের সময় প্রতিদিন এক চামচ ঘি আপনাকে গরম ও সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে। ঘিতে থাকা ফ্যাটযুক্ত উপাদানগুলির কারণে এটি দেহের উষ্ণতা বাড়ায়।
ঘি নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ
অন্য ধরণের মাখনের তুলনায় ঘি তৈরি করতে বেশি সময় লাগে, তবে এতে ভিটামিন ও পুষ্টির পরিমাণ বেশি। এটি ভিটামিন-ই, ভিটামিন-এ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং অন্যান্য জৈব যৌগগুলির সমৃদ্ধ উৎস।
সর্দি ও কাশি প্রতিরোধে সহায়তা করে
ঠাণ্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি শীতকালের সাধারণ সমস্যা। ঘি নিয়মিত সেবন করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যা শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
বিপাক বৃদ্ধি করে
বাটাইরিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় ঘি প্রদাহ হ্রাস এবং পাচনতন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করতে পারে। এটি পেটের অ্যাসিড নিঃসরণে উদ্দীপনা জাগাতে সহায়তা করে, ফলে স্বাস্থ্যকর হজম ব্যবস্থা বজায় থাকে।
ওজন কমাতে সহায়তা করে
ঘিতে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা পেটের মেদ কমাতে সহায়তা করে। ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের উপস্থিতি আপনাকে শরীরের মেদ হারাতে সহায়তা করে।
বি.দ্র. অসংখ্য সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ঘি গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে- যাতে মোট চর্বি গ্রহণ, দৈনন্দিন চর্বি গ্রহণের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম না করে। কোলেস্টেরলের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘি গ্রহণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তথ্যসূত্র: দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
টাইমস/এনজে/জিএস