অস্ট্রেলিয়ার পার্থে অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনেই যেন রূপকথা লিখলেন মিচেল স্টার্ক। প্যাট কামিন্স নেই, নেই জশ হ্যাজলউড—তাতে কী? স্টার্ক একাই ধসিয়ে দিলেন ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ। বাঁহাতি অস্ট্রেলিয়ান পেসারের আগুনে বোলিংয়ে ৩২.৫ ওভারে মাত্র ১৭২ রানে অলআউট সফরকারীরা। অ্যাশেজ ইতিহাসে ১৮৮৭ সালে এর চেয়ে কম ওভার টিকে ছিল ইংল্যান্ড।
শুরু থেকেই স্টার্ক ছড়িয়ে দেন আতঙ্ক। প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দেন জ্যাক ক্রলিকে। টেস্টে এটি স্টার্কের ২৪তম ‘প্রথম ওভারের উইকেট’। এই তালিকায় তার সামনে আছেন কেবল জেমস অ্যান্ডারসন (২৯)।
এরপর বেন ডাকেটকে ফিরিয়ে আরো গতি পান স্টার্ক। তরুণ ওপেনারের বিদায়ের পর লাইনআপের সবচেয়ে ভরসার নাম জো রুটকে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরান তিনি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখা রুটের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে স্টার্ক ঢুকে পড়েন অ্যাশেজের ১০০ উইকেটের ক্লাবে।
ইংল্যান্ডের ‘ক্রাইসিস ম্যান’ বেন স্টোকসকেও ছাড়েননি স্টার্ক।
বিধ্বংসী ইনসুইংয়ে উড়িয়েছেন তার স্টাম্প। টেস্টে স্টার্কের বলে এটি স্টোকসের দশম বার আউট হওয়া—এর মধ্যে পাঁচটিই বোল্ড। স্টোকসের চেয়ে বেশিবার তাকে আউট করেছেন কেবল রবিচন্দ্রন অশ্বিন (১৩ বার)। স্টোকস ফিরতেই ইংল্যান্ডের স্কোর ৫ উইকেটে ১১৫।
৩৬ রানে ব্যাটিং করা হ্যারি ব্রুক ও জেমি স্মিথের জুটি কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
অভিষিক্ত বেন ডগেট ভাঙেন ৫২ রানের সেই জুটি।
শেষের কাজটা সারেন স্টার্ক, গাস আটকিনসন, মার্ক উড, জেমি স্মিথ… সবাই তার শিকার। ৫৮ রানে ৭ উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং করেন তিনি। যা পার্থ স্টেডিয়ামেও কোনো বোলারের সর্বোচ্চ। চলতি শতকে অ্যাশেজে ৭ উইকেট নেওয়া দ্বিতীয় বোলার হলেন তিনি। এর আগে স্টার্কের সেরা ছিল ৯ রানে ৬ উইকেট।
ইংল্যান্ডের ইনিংস দ্রুত গুটিয়ে যাওয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পড়ে অস্ট্রেলিয়া! বেশি সময় মাঠের বাইরে থাকার কারণে নিয়ম অনুযায়ী উসমান খাজা ওপেন করতে পারেননি। ফলে অভিষিক্ত জেক ওয়েদারাল্ডের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামেন মারনাস লাবুশেন। প্রথম ওভারে লাবুশেন আউট হলে তিন নম্বরে নামার সুযোগও হয়নি খাজার।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার মতো ইংল্যান্ডও শূন্য রানে প্রথম উইকেট হারায়। ওয়েদারাল্ডকে ফিরিয়ে দেন জফরা আর্চার। অ্যাশেজ ইতিহাসে প্রথমবার, দুই দলই প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে প্রথম উইকেট হারাল।
লাবুশেনের সঙ্গে স্মিথ কিছুটা হাল ধরতে চাইলেও আর্চারের আঘাতে তা আর সম্ভব হয়নি। আর্চারের বলে লাবুশেনের স্ট্যাম্প উড়ে গেলে ২৮ রানে দুই উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
পরের ওভারেই দলীয় ৩০ রানে সফরকারীদের স্তম্ভ স্টিভেন স্মিথকে ফিরিয়ে দেন ব্রাইদন কার্স। মাত্র দুই রান করে দলীয় ৩১ রানে ফেরেন উসমান খাজা। মাত্র ৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে অজিরা। স্কোরবোর্ডে তখন ৩১ রানে চার উইকেট।
এরপর কিছুটা ধরে খেলার আভাস দেন ট্রাভিস হেড ও ক্যামেরন গ্রিন। তবে বেন স্টোকসের তোপের মুখে তাসের ঘরের মত ভেঙে যায় অজিদের ব্যাটিং লাইনআপ। একে একে ট্রাভিস হেড (২১), ক্যামেরন গ্রিন (২৪), অ্যালেক্স ক্যারি (২৬), মিচেল স্টার্ক (১২) ও স্কট বোল্যান্ডকে (০) শিকার করে টানা পাঁচ উইকেট তুলে নেন স্টোকস।
এতে ৪৯ রানে পিছিয়ে থেকে ৩৯ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রানে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া।
এমআর/টিকে