বলিউডের গল্প বলার ধরন বদলে গেছে বহুবার। দর্শকের নাড়ির স্পন্দনই যে এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যায়, তা আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠছে ধনুশ আর রণবীর সিংকে ঘিরে তৈরি হওয়া নতুন ঢেউয়ে। একসময় নরম, আত্মত্যাগী, অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণ চরিত্রে নিজেদের মুড়ে রেখেছিলেন তাঁরা। সেই সময়টিকে অনেকেই বলতেন নরম স্বভাবের নায়ক চরিত্রের যুগ। সেই ধারার পূর্বসূরি ছিলেন শাহরুখ খান, যাঁর প্রেমকেন্দ্রিক চরিত্রগুলো বলিউডকে দিয়েছিল ভিন্ন এক আবহ।
দুই তারকার সেই পুরোনো পরিচয় ছিল একেবারেই বিপরীতি পথে। ধনুশ তখন পর্দায় আবির্ভূত হতেন প্রবল প্রেমে আবদ্ধ, অস্থির আবেগের যুবক হিসেবে। সেই সময়ের একটি বড় পরিচয় ছিল রাঞ্জনা ছবির প্রেমিক চরিত্র, যেখানে আবেগ তাঁকে দিশেহারা করে তুলেছিল। অন্যদিকে লুটেরা ছবিতে রণবীর ছিলেন নীরব, সংবেদনশীল, মনের গভীরে ক্ষত বয়ে বেড়ানো এক প্রেমিক। দর্শকের কাছে এই দুই নায়ক তখন ছিল কোমল আবেগ আর আত্মসমর্পণের প্রতীক।
কিন্তু সময় বদলেছে, আর বদলে গেছে তাঁদের পর্দার রূপও। সাম্প্রতিক কাজগুলোতে তাঁরা নিজেরাই যেন ছিঁড়ে ফেলেছেন পুরোনো ছাঁচ। ধনুশ এখন উঠে আসছেন তীব্র, অপ্রতিরোধ্য, নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা পুরুষ চরিত্রে। প্রেম থাকবে, কিন্তু তা আর আর্তনাদ নয়; বরং এক তীব্র দহন। অন্যদিকে রণবীর সিংও পাল্টে ফেলেছেন নরম চরিত্রের পরিচয়। খসখসে, জেদি, নিয়ন্ত্রণক্ষম ব্যক্তিত্বে তিনি হাজির হচ্ছেন নতুন ছবিতে, যেন তাঁর মধ্যে লুকিয়ে থাকা আরেকটি সত্তা প্রকাশ পাচ্ছে।
এই পরিবর্তনের আড়ালে উঠে আসে বলিউডের নতুন পুরুষ চরিত্রবোধের গল্প। যেখানে প্রেমই চরিত্রের চালিকা শক্তি, কিন্তু সেটা আর নরম ভঙ্গিমায় নয়; বরং তীব্রতা, ক্ষিপ্রতা আর নিজস্ব আধিপত্যের প্রকাশে। অনেকেই মনে করছেন, এই প্রবণতা তৈরি হয়েছে সাম্প্রতিক বছরের জনপ্রিয় নির্মাতাদের হাতে গড়া কঠোর পুরুষ চরিত্ররূপ থেকে, যেখানে আবেগ নয়, বরং তীব্র অধ্যবসায়ই নায়কের পরিচয় হয়ে ওঠে।
বলিউডের এই রূপান্তর দেখাচ্ছে, দর্শকের পছন্দের স্রোত বদলে গেলেই পর্দার নায়কও বদলে যায়। আর সেই পরিবর্তনের ঢেউয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন ধনুশ আর রণবীর সিং, একেবারেই নতুন চরিত্রমাধ্যমে।
আইকে/টিএ