দেশের রাজনৈতিক অর্থায়নের অস্বচ্ছতা ও ব্যবসা–রাজনীতির জটিল সম্পর্ক নিয়ে বিশেষজ্ঞরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (BIISS)-এর সম্মেলন কক্ষে ঢাকা ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালেটিকস (দায়রা) আয়োজন করে “বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থায়ন সংস্কৃতি ও ব্যবসা সুরক্ষা: বাস্তবতা ও সমাধানের পথ” শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক।
আলোচনায় উঠে আসে রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থায়নের অস্পষ্টতা, নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং ব্যবসায়িক স্বার্থের সঙ্গে জড়িত অনিশ্চিত পরিবেশের প্রভাব, যা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ও বাজার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে।
গবেষক রাগীব আনজুম ও আহমুদুল হক পলিসি ব্রিফে বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নিয়মিত আয়-ব্যয়ের কাঠামো অস্বচ্ছ। দলগুলোর ব্যবসায়ীদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতা, নীতিনির্ধারণ এবং ন্যায্য বাজার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে। এছাড়া দলীয় অর্থায়নের অস্বচ্ছতা দুর্বল জবাবদিহিতা এবং ব্যবসায়িক অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “রাজনীতি এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবসায়ীক সিন্ডিকেটের মতো আচরণ করছে।
আমাদের কি সত্যিকারের স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল আছে?”
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের এক মাসের মধ্যে তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করলে এবং দ্বিধাপূর্ণ অবস্থায় দুদক ও নির্বাচন কমিশন জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।”
নির্বাচন কমিশনের সদস্য জেসমিন তুলি বলেন, “আইনে রাজনৈতিক দলগুলোর আয়ের উৎস ও সংগ্রহ পদ্ধতি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। আইনে স্পষ্ট উল্লেখ এবং দলগুলোর সদিচ্ছাই চলমান সংকট সমাধানের মূল চাবিকাঠি।”
দলের অভ্যন্তরীণ অর্থায়নের উদাহরণ দিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী মহাসচিব আহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “আমাদের আয়ের উৎস হলো সদস্যদের অবদান, প্রতিমাসে আয়ের ৫% দলকে দেওয়া হয়। কোনো রসিদ বা ভাউচার ছাড়া অন্য কোনো আয় নেই।”
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, “স্বচ্ছতার জন্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি। শুধু দল নয়, সরকারি কর্মকর্তা ও সচিবদেরও প্রশ্ন করা উচিত।”
রাজনৈতিক দল ও ব্যবসা সম্পর্ক নিয়ে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, “গত ১৬ বছরে ব্যবসা ও রাজনীতির সম্পর্ক অনেক বেড়ে গেছে। রাজনৈতিক যোগাযোগ ছাড়া ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে গেছে।”
এমতাবস্থায় বিভিন্ন ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকেও রাজনৈতিক দলকে অর্থ প্রদান বাধ্যতামূলক হয়ে ওঠে বলে শামস মাহমুদ মন্তব্য করেন।
বিডিজবস ডটকমের প্রধান নির্বাহী এ.কে.এম ফাহিম মাশরুর বলেন, “সমস্যা রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক। আইনের শাসন জোরদার করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবর রহমানও স্বচ্ছতা ও নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
গোল টেবিল বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া, স্বচ্ছতা, স্বেচ্ছাসেবক ভিত্তিক মডেলে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং অর্থায়ন সংস্কৃতির সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। বৈঠক পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ শাহান। উপস্থিত ছিলেন ছাত্র প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও গবেষণা ক্ষেত্রের প্রতিনিধিরা।