অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ‘আগে রাস্তাঘাট মেয়েদের জন্য হুমকি ছিল, এখন সাইবার স্পেসেও নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। প্রযুক্তি উন্নত হলেও আমাদের মনোভাবই এর পথ নির্ধারণ করবে।’
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক সংলাপে এ কথা বলেন উপদেষ্টা। অনলাইনে নারীদের হয়রানি বন্ধে জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
মঙ্গলবারই মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, নারী উন্নয়ন ও লিঙ্গ সমতার জন্য স্থানীয় পরামর্শদাতা গ্রুপ এবং জাতিসংঘের যৌথ উদ্যোগে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ এ সংলাপ শুরু হয়। সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ প্রতিপক্ষ উদ্বোধন করেন।
পক্ষের এবারের প্রতিপাদ্য- ‘ইউনিট টু অ্যান্ড ডিজিটাল ভায়োলেন্স অল উইমেন অ্যান্ড গার্লস।’ বাংলা প্রতিপাদ্য- ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।’
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ বলেন, ‘শক্তিশালী আইন ও জনসচেতনতা ছাড়া ডিজিটাল সহিংসতা রোধ সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক অংশীদাররা একমত হয়েছেন যে এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা।’
বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের মাত্র ৪০ শতাংশ দেশ নারীদের সাইবার সহিংসতা থেকে রক্ষা করতে আইন করেছে, ফলে ৪৪ শতাংশ নারী ও মেয়ে আইনগত সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত।
উচ্চপর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় প্রযুক্তি-সক্ষম সহিংসতা, আইন প্রয়োগের দুর্বলতা, ডিজিটাল সাক্ষরতার অভাব ও জাতীয় সমন্বিত ফ্রেমওয়ার্কের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। বক্তারা বলেন, সামাজিক নীতি ও ক্ষমতার কাঠামোর সঙ্গে ডিজিটাল সহিংসতা গভীরভাবে জড়িত এবং সমন্বিত প্রতিরোধ প্রয়োজন।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনএফপিএ) প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং বলেন, প্রযুক্তি-সক্ষম লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বাস্তব এবং এর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিক্রিয়া জরুরি।
সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা একমত হয়েছেন যে, শক্তিশালী আইন, প্রযুক্তি কোম্পানির জবাবদিহি এবং নারীদের ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে বাংলাদেশে সব নারী ও মেয়ে সুরক্ষিত ও স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতে পারে।
২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে দেশজুড়ে ১৬ দিনব্যাপী বিস্তৃত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা, র্যালি, আলোচনা সভা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯ প্রচার জোরদার, কুইক রেসপন্স টিম (০১৭১৩৬৫৯৫৭৩, ০১৭১৩৬৫৯৫৭৪) সম্পর্কিত প্রচার, স্থানীয় পর্যায়ে উঠান বৈঠক ও কমিউনিটি সচেতনতা কার্যক্রম, আইনি সহায়তা ও মনোসামাজিক কাউন্সেলিং,সাইবার নিরাপত্তাসংক্রান্ত সচেতনতা কর্মসূচি, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল সহিংসতা প্রতিরোধে একযোগে শপথ পাঠসহ নানা ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
টিজে/টিএ