সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, শেখ হাসিনার বিচার হয়েছে এই ২০২৪ সালের আগস্টে যে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল, সে আন্দোলনের সময় যে গণহত্যা হয়েছিল এবং যে বিপুলসংখ্যক মানুষ আহত হয়েছিলেন, সেই ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে মামলা হয়, সেই মামলায় শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে এবং তার আমলের যিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন আসাদুজ্জামান খান কামাল তার ব্যাপারেও এটা হয়েছে এ মাসের ১৭ তারিখে। তারপর থেকে প্রায় ৯ দিন পার হয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রায় তো হয়েছে, এই রায় বাস্তবায়ন কীভাবে হবে অথবা এই রায় বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কতটুকু? রায় বাস্তবায়নের জন্য প্রথম যে কাজটা দরকার, সেটা হলো শেখ হাসিনাকে ফিরে পাওয়া। শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে ভারতে আছেন।
ভারত সরকারের কাছে আছেন। ভারত যদি বাংলাদেশ সরকারকে শেখ হাসিনাকে দ্রুত ফেরত দেন, যদি এক মাসের মধ্যে ফেরত দেন, তাহলে শেখ হাসিনা হয়ত একটা আপিল করার সুযোগ পাবেন। কারণ আপিল করার জন্য ১ মাস সময় দেওয়া হয়েছে। ১ মাসের মধ্যে সশরীরে হাজির হয়ে আপিল করতে হবে।
কোনো উকিলের মাধ্যমে আপিল করা যাবে না।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) ‘কথা’ নামের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি।
মাসুদ কামাল বলেন, এখন যদি শেখ হাসিনা এসে হাজির হন এবং উনি আপিল করেন, তাহলে এক মাস পরে সে আপিল গৃহীত হবে কি হবে না, সেটা নিয়ে আবার শুনানি হবে, তারপর রায় হবে। আর যদি উনি ১ মাসের মধ্যে হাজিরই না হন, হাজিরা না দেন এবং নিজে উপস্থিত না হন, তাহলে মামলার ভবিষ্যৎ কী? তাহলে মামলার ভবিষ্যৎ হলো, উনার মৃত্যুদণ্ডের যে আদেশ, তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আর কোনো আইনগত বাধা থাকবে না।
দেড় মাস, দুই মাস পরে যদি উনাকে পাওয়া যায়, উনাকে যদি ভারত ফেরত দেয়, তাহলে পাওয়া মাত্রই উনার মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে পারবে সরকার। এ হলো মোটামুটি ধারণা।
তিনি বলেন, অবস্থা দৃষ্টি এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে এক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া বোধ হয় হবে না। এটা আমরা যতটুকু বুঝি। লজিক্যাল কোনো কারণ এখন পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না ভারতের পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশ অবশ্য এরই মধ্যে ভারত সরকারকে চিঠি দিয়েছে। তারা বলেছে যে আপনাদের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি আছে, সেই চুক্তি অনুযায়ী আমাদের কোনো অপরাধী আপনাদের এখানে থাকলে, আপনারা ফেরত দিতে বাধ্য। সেরকমভাবে তারা চিঠি দিয়েছে। সেই চিঠি ভারত পেয়েছে। ভারত যে পেয়েছে এটা আজকে ভারতের পক্ষ থেকে কনফার্মও করা হয়েছে। কনফার্ম কীভাবে করা হয়েছে? ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এই বিষয়টাকে কনফার্ম করেছেন। তারা বলেছেন যে এই ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধটি পর্যালোচনা করে দেখছে ভারত সরকার। রিমেম্বার ইট, পর্যালোচনা করে দেখছি। মানে যে অনুরোধটা করেছি, সেই অনুরোধটা তারা কী করবে, রাখবে কি, রাখবে না, রাখা যাবে কি, যাবে না, দিলে কীভাবে দেবে, না দিলে কেন দেবে না- এই সমস্ত বিষয়গুলো চিন্তাভাবনা করার জন্য তারা বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধটাকে পর্যালোচনা করে দেখছে এবং সেখানে তারা আরেকটা জিনিস দেখছে, সে জিনিসটা হলো যে এই বিষয়টা ভারতের যে চলমান বিচারিক ও আইনগত প্রক্রিয়ার আওতায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে যে ভারতের বিচারিক ও আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্যে খতিয়ে দেখতে হবে কেন? শেখ হাসিনাকে তো আমাদের আইনে বিচার দেওয়া হয়েছে। এটা তো ভারতের আইন না। আমাদের আইনে কী আছে, না আছে- সেটার আলোকে বিচার করে রায় দেওয়া হয়েছে। এখন ভারত কেন সেটা তাদের নিজেদের আইনে এবং নিজেদের যে বিচারিক যে প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখছে কেন? এটাই হচ্ছে মূল পয়েন্ট।
তিনি আরো বলেন, এই পয়েন্টে যদি আপনি বিশ্লেষণ করেন, আমার ধারণা যে শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত দিচ্ছে না। এটা আমার ধারণা। কারণ তাদের মধ্যে যে বিচারিক আদালতে যে বিচার হবে, আইনগত যে প্রক্রিয়ার মধ্যে বিচার হবে, সেখানে হলে তারা বলতে পারে যে ওখানে তো বাংলাদেশে বিচার হয়েছে, এটা একতরফা বিচার হয়েছে। তারা বলতে পারে, ওখানে শেখ হাসিনার পক্ষে কোনো ভালো আইনজীবী ছিল না, শেখ হাসিনা তার আইনজীবীর সহযোগিতা নিতে পারেনি। কাজেই তারা এমনও বলতে পারে যে আমাদের আদালতে আপনারা আসেন, আমাদের আদালতে বিচার করেন, আমরা এখানে শেখ হাসিনাকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা দিই। তারপরে বিচার হোক। এরকম কথা আসতে পারে। নাও আসতে পারে। আবার আসতেও পারে। কারণ যেহেতু তারা যখন বলে যে বিষয়টা ভারতের চলমান বিচারিক ও আইনগত প্রক্রিয়ার অধীনে খতিয়ে দেখা হচ্ছে, যখন তারা এই কথাটা বলে, তখন এই কথাটার ব্যাপক একটা অর্থ দাঁড়িয়ে যায়।