ঢালিউডের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পপি আজ রুপালি পর্দা থেকে অনেকটাই হারিয়ে গেছেন। পারিবারিক বিরোধ আর সম্পত্তির জেরে ঝামেলায় জড়িয়ে প্রাণনাশের ভয়ে নিজেকে একরকম আড়াল করে রেখেছেন তিনি।
অথচ সেই একটা সময় রুপালি পর্দায় ঝড় তোলেন অভিনেত্রী। দীর্ঘদিন আড়ালে থাকলেও আবারও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে পপিকে। সম্প্রতি এ বিষয়ে অভিনেত্রী গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিলে মিথ্যা তথ্য প্রচারের অভিযোগে সাদিকা পারভিন পপির বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠান তার বোনজামাই তারেক আহমেদ চৌধুরী।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইলিয়াছ আলী মণ্ডলের মাধ্যমে পপির খুলনা ও ঢাকার ঠিকানায় রেজিস্টার্ড ডাকযোগে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন তারেক আহমেদ চৌধুরী নিজেই।
পপির বোনজামাই বলেন, আমার স্ত্রী সম্পর্কের আত্মীয় সাদিকা পারভিন পপি বিভিন্ন সময় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে আসছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তার যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে পারিবারিকভাবে কথা বলতে পারেন কিংবা আইনিভাবে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু তিনি সেটি না করে বিভিন্ন মাধ্যমে আমার নামে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়াচ্ছেন। সে জন্য আইনিভাবে তাকে এ বিষয়গুলো আমি জানিয়েছি।
তারেক চৌধুরী বলেন, এর আগেও সে (পপি) আমাকে দোষারোপ করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছিল। ফলে আমি তার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছি।
আইনি নোটিশে বলা হয়েছে—একটি সম্পত্তি নিয়ে তাদের পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। ওই সম্পত্তিটি সাদিকা পারভিন পপির প্রয়াত চাচার মালিকানাধীন ছিল, যা একটি বৈধ হেবা দলিলের মাধ্যমে তারেক আহমেদ চৌধুরীর স্ত্রী এবং তার মাকে উপহার হিসেবে প্রদান করা হয়। সে জন্য তারা আইনগতভাবে উক্ত সম্পত্তির মালিক হন। আমার মক্কেল উক্ত সম্পত্তির কোনো আইনগত উত্তরাধিকারী নন। এবং উক্ত সম্পত্তির ওপর তার কোনো দখল, মালিকানা বা আইনি স্বার্থ নেই; সম্পত্তিটির হস্তান্তর ও বণ্টন সম্পূর্ণরূপে উক্ত হেবা দলিল ও প্রযোজ্য উত্তরাধিকার আইনের অধীন পরিচালিত হয়। আমার মক্কেলের সঙ্গে উক্ত সম্পত্তিগত বিরোধের কোনো আইনগত বা বাস্তবিক সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও নোটিশ গ্রহীতা গত ২১ নভেম্বর প্রচারিত সময় টিভির অনুষ্ঠানে আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মানহানিকর অভিযোগ করেছেন এবং তা প্রকাশ করেছেন।
পপিকে আইনি নোটিশ পাঠানো প্রসঙ্গে আইনজীবী ইলিয়াছ আলী মণ্ডল গণমাধ্যমকে বলেন, তার মক্কেল ঢাকায় একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ পদে আছেন। সাদিকা পারভিন পপির প্রয়াত চাচা প্রয়াত মিয়া কবির হোসেনের জামাতা হলেন তার মক্কেল তারেক আহমেদ চৌধুরী। বৈবাহিক সূত্রে তার সঙ্গে পপির আত্মীয়তার সম্পর্ক।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমে পপি বলেছেন- আমার মক্কেল তাকে তার নিজ এলাকায় চলাফেরায় বাধা দিচ্ছেন এবং তাকে উক্ত সম্পত্তিতে তার অংশ থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে এমনটি করছেন।
উল্লেখ্য. অভিনেত্রী পপির অভিযোগ- চাচা কবির হোসেনের কাছ থেকে ২০০৭ সালে জমি ক্রয় করেন তিনি। অথচ সেই জমি দখলে রেখেছেন তার চাচাতো বোন মুক্তা ও তার স্বামী তারেক আহমেদ চৌধুরী। স্বৈরাচার সরকারের সময় নিজের সম্পত্তি বুঝে চাইলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতেন তারেক। এমনকি খুলনার মাটিতে গেলে তিনি আর বেঁচে ফিরতে পারবেন না বলেও তাকে হুমকি দেওয়া হয়। চলতি মাসেও আবারও পপি তার জমি বুঝে নিতে চাইলে বিএনপিকর্মীর নাম ভাঙিয়ে হুমকি দেন তার চাচাতো বোনজামাই তারেক।
পপি বলেন, তার বোনজামাই তাদের বাড়িতে লজিন মাস্টার হিসেবে থাকতেন। পরে তার চাচাতো বোন মুক্তাকে বিয়ে করে জমিদারবাড়ি দখলে নেন। একসময় আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থাকায় তারেক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তার ক্রয়কৃত জায়গা দখলে নেন।
৩৬ জুলাই আন্দোলনে সরকার পতনের পর সেই ক্রয়কৃত জায়গা তারেকের কাছে ফেরত চান পপি। কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি। আবারও জমি নিজের করে নিতে তাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে জানান পপি।
কেএন/এসএন