বাংলাদেশে প্রতিবছর পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ রোডক্র্যাশে নিহত হন, যার প্রায় ৭০ শতাংশ দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে অতিরিক্ত গতি ও নিরাপত্তা সরঞ্জামের ঘাটতি। মৃত্যুহার কমানোর বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও দেশে এখনো কার্যকর সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন হয়নি-এ অবস্থায় দ্রুত আইনগত ও কাঠামোগত পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বক্তারা। সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়নে সড়ক নিরাপত্তা আইন : বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ তথ্য জানান।
বক্তারা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে রোডক্র্যাশজনিত মৃত্যু অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হলে এখনই একটি সমন্বিত ও কার্যকর সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন অপরিহার্য। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) রোডক্র্যাশকে প্রতিরোধযোগ্য এক অসংক্রামক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা নীতি পরিবর্তন ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেওয়া তরুণরা বলেন, রোডক্র্যাশ এখন তরুণদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। তারা স্মরণ করিয়ে দেন-মরক্কোয় অনুষ্ঠিত গ্লোবাল মিনিস্টেরিয়াল কনফারেন্সে বাংলাদেশ ২০২৭ সালের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা আইন এবং ২০২৬ সালের মধ্যে গতিসীমা ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা ও মানসম্মত হেলমেট গাইডলাইন প্রণয়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ধীরগতির। তাই দ্রুত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোড সেফটি ইনজুরি অ্যান্ড প্রিভেনশন প্রোগ্রামের ম্যানেজার মোহাম্মদ ওয়ালী নোমান। তিনি জানান, বিআরটিএসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী দেশে সড়ক দুর্ঘটনার ৭০ শতাংশ ঘটছে অতিরিক্ত গতি ও নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাবে। গ্লোবাল প্ল্যান ফর সেকেন্ড ডিকেড অব অ্যাকশনে উল্লেখিত ‘সেফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ গতি, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী এবং নিরাপদ যানবাহন নিশ্চিত করা গেলে হতাহত উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। বিশ্বের বহু দেশ এ পদ্ধতি গ্রহণ করে মৃত্যুহার নামিয়ে এনেছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নিখিল কুমার দাস বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই দুর্ঘটনা শুধু মানবিক বেদনা বাড়ায় না, দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৩ শতাংশ ক্ষতি করে। তার মতে, পরিকল্পনাগত দুর্বলতা-বিশেষ করে কার্যকর ল্যান্ড ইউজ প্ল্যানিং বাস্তবায়নে ব্যর্থতা-সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে জটিল করেছে। কৃষিজমি রক্ষা ও জলাশয় সংরক্ষণ সংক্রান্ত নীতিতে অসংগতি থাকার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অনেক সময় উল্টো সড়কভিত্তিক ঝুঁকি বাড়ায়।
সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ, যেখানে বহু স্টেকহোল্ডার সম্পৃক্ত। বাংলাদেশ এসডিজির দুটি ইন্ডিকেটর বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং ‘গ্লোবাল প্ল্যান ফর সেকেন্ড ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেফটি’-এর সিগনেটরি দেশ হিসেবে নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ গতি, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী, মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট ও ল্যান্ড ইউজ প্ল্যানিং বাস্তবায়ন জরুরি।
আরপি/টিকে