জুলাই আন্দোলন চলাকালে কুষ্টিয়ায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার প্রত্যক্ষ নির্দেশদাতা ও উসকানিদাতা ছিলেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু—এমন দাবি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী মো. রাইসুল হক।
জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট কুষ্টিয়া বক চত্বরের দিক থেকে ছয় রাস্তার মোড় পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন, সেখানেও পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়।
সাক্ষী সাইসুলের ভাষ্য, ৫ আগস্ট দুপুরের পর বক চত্বরের পাশে আমাদের এক আন্দোলনকারী ভাই বাবু গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। আমরা তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওইদিন বক চত্বরের আশেপাশে সুরুজ আলী বাবু, বাবুল ফরাজী, আব্দুল্লাহ মুস্তাকিন ও উসামাসহ মোট ৬ জন শহীদ হন।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিচারক মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন সাক্ষী রাইসুল হক। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, আমি ঘটনার সময় কুষ্টিয়ায় কালি শংকরপুর এলাকায় একটি মেসে ছিলাম। ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই রাতে আমরা কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের আশেপাশে মিছিল করি। ১৬ জুলাই আবু সাঈদ শহীদ হন। ওইদিন আমরা কুষ্টিয়া শাপলা চত্বর থেকে মজমপুরের দিকে কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা মিছিল করি। এসময় আমরা পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের বাধার সম্মুখীন হই।
সাক্ষী বলেন, ১৮ জুলাই ডিসি কোর্টের সামনের মোড়ে আমরা যখন ৩০০-৪০০ জন একত্রিত হই, তখন ডিবি পুলিশ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের হামলার শিকার হই। তারপর আমরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ি। পরবর্তীসময়ে আমরা যখন একত্রিত হয়ে আন্দোলন শুরু করি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের ওপর টিয়ারশেল ছোড়ে। আমার কপালের ঠিক মাঝখানে শর্টগানের গুলি লাগে। সাক্ষী এসময় তার কপালে শর্টগানের গুলি লাগার চিহ্ন আদালতকে দেখান।
রাইসুল হক আরও বলেন, আমরা ৩, ৪ ও ৫ আগস্ট কুষ্টিয়াতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলি। ৩ আগস্ট কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের সামনে থেকে সকালে মজমপুরের দিকে মিছিল বের করি। মিছিল যখন মজমপুরের দিকে যায়, তখন আমরা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ি। ‘৪ আগস্ট বেলা ১১টায় আমরা কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের সামনে ৩/৪শ জন একত্রিত হই।
আমরা মজমপুরের দিকে এগোলে আরও কয়েকশো ছাত্র-জনতা আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়। বাধার মুখে ওইদিনও মিছিল সফল করি। ওইদিন ছাত্রলীগ, যুবলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা করে। এ হামলায় কুষ্টিয়া-২ আসনের এমপি ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু সরাসরি নির্দেশ ও উসকানি দিয়েছেন। যার সঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতাসহ আওয়ামী লীগ নেতারাও জড়িত ছিলেন।
সাক্ষীর বক্তব্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি সফল করতে আমরা বেলা ১১টায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের সামনে একত্রিত হই। এখান থেকে আমরা প্রায় ৫/৬ হাজার ছাত্র-জনতা মিছিল বের করি। আমরা মজমপুরের দিকে এগোলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের ওপর হামলা করে।
রাইসুল হক বলেন, ৫ আগস্টের পর সামাজিক মাধ্যমে দেখেছি, হাসানুল হক ইনু আন্দোলনকারীদের দমনের জন্য ফোনকলের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। প্রয়োজনে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি, বোম্বিং ও যেকোনো মূল্যে আন্দোলন দমনের পরামর্শ ও উসকানি দেন তিনি।
ইউটি/এসএন