অনেক বছর আগে পূর্বপুরুষদের বন্দি করে বিদেশে বিক্রি করা হয়েছিল, এই ইতিহাসকে স্মরণ করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিন নতুন উদ্যোগ নিয়েছে, যা আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ স্থাপনের সুযোগ দিচ্ছে।
একসময় দাস ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র ছিল বেনিন। এখান থেকে ও আশপাশের অঞ্চল থেকে লাখো মানুষকে ধরে নিয়ে বিদেশে দাস হিসেবে বিক্রি করা হতো। সেই ইতিহাস আজও আফ্রিকানদের মনে বেদনা জাগায়।
এই ক্ষত কিছুটা হলেও নিরাময় করতে বেনিন সরকার ‘মাই অ্যাফ্রো অরিজিনস’ নামক নতুন একটি আইন করেছে। যাদের পূর্বপুরুষদের একসময় বেনিন অঞ্চল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে মার্কিন গায়িকা লরেন হিল, গায়িকা সিয়েরা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা স্পাইক লি ও তার স্ত্রী টনিয়া লুইস লিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। টনিয়ার পূর্বপুরুষকেও বেনিন থেকেই দাস হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
ইতিহাস বলছে, ষোড়শ থেকে উনিশ শতকের মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে এক কোটির বেশি মানুষকে বন্দি করে আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় পাঠানো হয়েছিল। তখনকার দাহোমি সাম্রাজ্য (বর্তমান বেনিন) ইউরোপীয় দাস ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করত। শক্তিশালী সেনাবাহিনী প্রতিবেশী অঞ্চল আক্রমণ করে মানুষ ধরে এনে ইউরোপীয়দের কাছে বিক্রি করত। এতে দাহোমি সাম্রাজ্য অস্ত্র ও সম্পদ পেত, আর ইউরোপীয়রা দাস পেত।
দাস ব্যবসার ফলে পশ্চিম আফ্রিকায় শ্রমিক সংকট, সহিংসতা ও সাংস্কৃতিক ক্ষতি ঘটে। পরে দাস ব্যবসা বন্ধ হলেও ইউরোপীয় শক্তিগুলো আফ্রিকাকে উপনিবেশ বানিয়ে ফেলে। যার প্রভাব আজও রয়ে গেছে। বহু আফ্রিকান ক্রীতদাসকে পরে ব্রাজিল ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে পাঠানো হয়েছিল। ১৮৩৫ সালের দাস বিদ্রোহের পর কিছু মানুষ আবার আফ্রিকায় ফিরে এসেছিল।
১৯৬০ সালে ফরাসি শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর পর্যটন ও সংস্কৃতিকে সামনে এনে বেনিন অর্থনীতি চালানোর চেষ্টা করে, যেমন ভুডু উৎসব আয়োজন। কিন্তু অতীতের দাস ব্যবসা নিয়ে সমাজের বিভাজন পুরোপুরি দূর হয়নি। এখন বেনিন নতুন করে বিশ্বজুড়ে আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে। দেশটিতে পর্যটন, ঐতিহাসিক স্থাপনা, জাদুঘর এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে। তবে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জও আছে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা টনিয়া লুইস জানান, বেনিনে গিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত, কারণ তার পূর্বপুরুষদের যেখান থেকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, আজ তিনি সেখানে ফিরে দাঁড়াতে পেরেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এই উদ্যোগ আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের তাদের শিকড়ের সঙ্গে নতুন করে সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করবে।
সূত্র : বিবিসি
এবি/টিকে