দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস রপ্তানিতে এখনও স্বস্তি নেই। টানা ৪ মাস ধরে পণ্য রপ্তানি কমেছে। সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৮৯ কোটি ডলারের পণ্য। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ কম।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তারপর তিন মাস, অর্থাৎ আগস্টে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং অক্টোবরে পণ্য রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এতে করে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। যদিও গত অর্থবছর পণ্য রপ্তানি বেড়েছিল সাড়ে ৮ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে ২ হাজার ৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। গত বছর প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি হয়েছিল এক হাজার ৯৯১ কোটি ডলার।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত নভেম্বরে নিটওয়্যার ও ওভেন উভয় ধরনের তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, প্লাস্টিক ও হোম টেক্সটাইল পণ্যের রপ্তানি কমেছে। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা, ওষুধ ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। মূলত তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৫ শতাংশ কমে যাওয়ায় সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে।
দেশের মোট রপ্তানি ৮০ শতাংশ তৈরি পোশাক। টানা চার মাস ধরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমলেও অর্থবছরের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। গত জুলাইয়ে ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ। পরের মাসে রপ্তানি কমে পৌনে ৫ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে কমেছিল প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ। অক্টোবরে রপ্তানি হয় ৩০২ কোটি ডলার এবং সবশেষ নভেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ৩১৪ কোটি ডলার, যা গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে ১ হাজার ৬১৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ০৯ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৬১২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।
দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি খাত বর্তমানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত ইতিবাচক ধারায় আছে এই খাতের রপ্তানি। গত জুলাই-নভেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ৫১ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি।
পণ্য রপ্তানিতে তৃতীয় শীর্ষ খাত কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে ৪৬ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় পৌনে ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ কম।
দেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি এখনো ইতিবাচক ধারায় আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে ৩৪ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। শুধু গত মাসে ৬ কোটি ৮৯ লাখের ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে।
আরপি/টিকে