সোশ্যাল মিডিয়ার স্যাটায়ার, মিম এবং কার্টুন পেজগুলোর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে আখ্যা দিয়ে মামলা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন দেশের বিশিষ্ট কার্টুনিস্ট, স্যাটায়ারিস্ট, মিম নির্মাতা, লেখক ও পেশাজীবীরা।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক কোয়ালিশনের আয়োজিত ‘স্যাটায়ার, মিম ও কার্টুন: মতপ্রকাশ নাকি মর্যাদাহানি’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা বলেন, সমালোচনামূলক কনটেন্টকে দমন করা গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতার পরিপন্থী।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কার্টুনিস্ট ও ‘উন্মাদ’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক আহসান হাবীব, লেখক সুমন রহমান, লেখক ফিরোজ আহমেদ, আইনজীবী সারা হোসেন, কার্টুনিস্ট সিমু নাসের, কার্টুনিস্ট মেহেদী হক প্রমুখ।
আহসান হাবীব বলেন, আমাদের চারদিকে অনেক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু এসবের মাঝেও আমাদের হাসতে হবে, কারণ হাসাটা জরুরি।
স্যাটায়ার পেজ ইয়ার্কির বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আহসান হাবীব বলেন, আমরা একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ চাই। উন্মাদ ম্যাগাজিনে ফিচার কার্টুন বেশি থাকে। পলিটিক্যাল কার্টুন কমই থাকতো। পলিটিক্যাল ব্যাপারটা আমরা ফিচার কার্টুনের বক্তব্যের মধ্যে রাখতাম। তবে এতো মামলা আমরা খেয়েছি যে, এসব বিষয়ে অনেকটাই সাবধানে কাজ করতে হতো।
বক্তারা বলেন, স্যাটায়ার, মিম ও কার্টুন বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিন ধরে মতপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিগত সরকারের আমলেও যখন নানান বাধার কারণে মূলধারার বেশিরভাগ গণমাধ্যম নীরব ছিল, তখনো ঝুঁকি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে গেছে মিম, স্যাটায়ার ও কার্টুন পেজগুলো। জুলাই গণভ্যুত্থানের সময়েও আমরা দেখেছি, আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল মিম, কার্টুন ও স্যাটায়ার। মিম, কার্টুন, গ্রাফিতি আর স্যাটায়ারে ভরে উঠেছিল শহরের দেয়াল। জুলাইয়ের পরও থেমে থাকেনি স্যাটায়ার। নিজস্ব ‘হাতিয়ারের’ মাধ্যমেই ক্ষমতাবানদের নিয়মিত প্রশ্ন করে গেছেন স্যাটায়ারিস্ট, মিমার ও কার্টুনিস্টরা।
তারা আরও বলেন, গত ২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েম বাদী হয়ে বেশ কিছু মিম, স্যাটায়ার ও কার্টুন পেজের নামে মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলা মতপ্রকাশ ও বাক-স্বাধীনতাকে নতুন এক হুমকির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কার্টুন, মিম ও স্যাটায়ারের ওপর এই হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক। কনটেন্ট নির্মাতা শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা হোক।
বক্তারা রাষ্ট্রের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাক-স্বাধীনতা রক্ষায় রাষ্ট্রের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ আমরা সবসময়ের জন্য দেখতে চাই।
আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, আমাদের আজকের কথা বলার পরিপ্রেক্ষিত শুধু একটা মামলা নয়। একটা মানুষ কার্টুন আঁকলে, মিম বানালে তাকে মামলা দেওয়া হয়, জেলে দেওয়া হয়; এই প্র্যাকটিস থেকে আমাদের বের হতে হবে। দেশ থেকে অনেক কার্টুনিস্ট বিতাড়িত হয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, যে জিনিস আপনার সহ্য হয় না, যে স্যাটায়ার আপনার ভালো লাগে না—আপনি সেটা অ্যাভয়েড করেন। মামলা করাটা কোনো সমাধান নয়। আর শুধু নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র হয় না, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মানুষের মতামতকে সম্মান করতে হয়।
সাদেক কায়েমের মামলা প্রসঙ্গে সারা হোসেন বলেন, মামলার এজাহারে লেখা হয়েছে ‘কুরুচিপূর্ণ অশ্লীল মন্তব্য’। উনি শুধু নিজের কথা বলেননি, সঙ্গে দুজন নেত্রীর কথা বলেছেন। বর্তমানে নারীদের বিরুদ্ধে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হলেও তিনি গিয়েছেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। যারা মামলা দেয় আমরা তাদের কাজে হাসছি। আমরা তাদের প্রতিরোধ করবোই।
ইএ/টিকে