ইন্দোনেশিয়া-শ্রীলঙ্কা-থাইল্যান্ডে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ১৭৫০

এশিয়ার একাধিক দেশে বন্যা ও ভূমিধসের ভয়াবহতায় মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৭৫০ ছাড়িয়ে গেছে। ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডে লাখো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, আর টানা বৃষ্টি, ক্ষুধা ও নষ্ট হয়ে যাওয়া যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উদ্ধার-ত্রাণকাজ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এই দুর্যোগে দেশগুলোতে বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত লাখো মানুষের কাছে পৌঁছাতেও হিমশিম খাচ্ছেন উদ্ধারকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে আচেহ প্রদেশে অন্তত ৮৬৭ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে এবং ৫২১ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। সেখানে ৮ লাখেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া। আর শ্রীলঙ্কায় সরকারি হিসাব অনুযায়ী ৬০৭ জন মারা গেছেন এবং আরও ২১৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের অধিকাংশই মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিসানায়েকে এ পরিস্থিতিকে দেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে অভিহিত করেছেন।

ছাড়া থাইল্যান্ডে বন্যায় অন্তত ২৭৬ জন মারা গেছেন। মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামে ভারী বৃষ্টির কারণে এক ডজনের বেশি ভূমিধসে দুটি দেশে দুইজন করে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় গত সপ্তাহের আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস থেকে বেঁচে যাওয়া বহু মানুষ এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে কার্যত সংগ্রাম করছেন। দেশটির আবহাওয়া দপ্তর সতর্ক করেছে, আচেহে শনিবার পর্যন্ত ‘অতি ভারী বৃষ্টি’ হতে পারে, উত্তর ও পশ্চিম সুমাত্রাও ঝুঁকিতে রয়েছে।

আচেহের গভর্নর মুজাকির মানাফ জানিয়েছেন, দলগুলো এখনও কোমরসমান কাদায় লাশ খুঁজছে। তবে তার মতে এখন সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে ক্ষুধা। তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। আচেহের বহু দুর্গম অঞ্চলে এখনও পৌঁছানো যায়নি। মানুষ বন্যায় নয়, ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে— পরিস্থিতি এমনই।’

তিনি আরও বলেছেন, আচেহ তামিয়াং অঞ্চলে পুরোপুরি গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। উপরে পাহাড় থেকে নিচে সাগর পর্যন্ত সবকিছু নিশ্চিহ্ন। অনেক গ্রাম ও উপজেলা এখন কেবল নামমাত্র রয়েছে।’

এদিকে শ্রীলঙ্কায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ অর্থাৎ দেশের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবারও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আর এটি নতুন করে ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (ডিএমসি) জানায়, ৭১ হাজারের বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

ডিএমসি বলেছে, আরও বৃষ্টি উদ্ধার কার্যক্রমকে কঠিন করে তুলবে এবং কেন্দ্রীয় অঞ্চলে নতুন ভূমিধসের আশঙ্কা বাড়াবে।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
১০ হাজার কোটি টাকার রাস্তায় টেম্পো ছাড়া কিছুই চলে না: সড়ক উপদেষ্টা Dec 06, 2025
img

অ্যাশেজ সিরিজ

মিচেল স্টার্কের অলরাউন্ডার নৈপুণ্যে বড় জয়ের সুবাস পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া Dec 06, 2025
img
শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 06, 2025
img
বাবা হারালেন কাজী শুভ Dec 06, 2025
img
প্রবাসীর স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব, বহিষ্কার জামায়াত নেতা Dec 06, 2025
img
মরক্কো ম্যাচকে কঠিন ভাবছে ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তি Dec 06, 2025
img
গাজীপুরে ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল, ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল যোগাযোগ বন্ধ Dec 06, 2025
img
বিদেশি খেলোয়াড়দের নোয়াখালীর কালচারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব : পলাশ Dec 06, 2025
‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা Dec 06, 2025
img
বাণিজ্যিক আদালত দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে : প্রধান বিচারপতি Dec 06, 2025
img

কৃতি শ্যানন

কখনও কখনও জীবন নিজেই পথ করে দেয় Dec 06, 2025
img
ফ্যাসিজমের কালো ছায়া এখনো কাটেনি : ডা. শফিকুর রহমান Dec 06, 2025
img
ইতালি যাওয়ায় পথে ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ মাদারীপুরের যুবক Dec 06, 2025
img
আপিলের পর সুসংবাদ পেল লুইস দিয়াস Dec 06, 2025
img
অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে বসত-বাড়ি Dec 06, 2025
img
শাহ আমানত বিমানবন্দরে যাত্রীর লাগেজ থেকে ৮০০ কার্টন সিগারেট জব্দ Dec 06, 2025
img
কুড়িগ্রামে ৪ মেট্রিক টন ডিএপি সার জব্দ Dec 06, 2025
img
ক্ষমতায় যাওয়ার আগে একটি দল ফ্যাসিবাদের মতো আচরণ করছে : সাইফুল হক Dec 06, 2025
বিশ্বের সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত খাদ্য নিরাপত্তা পুতিনের Dec 06, 2025
img
পু‌লিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৩৩৩ Dec 06, 2025