ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ানডে সিরিজের ব্যাট হাতে দুর্দান্ত শৈলী দেখিয়েছেন বিরাট কোহলি। টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরির পর সিরিজ নির্ণায়ক তৃতীয় ওয়ানডেতে অপরাজিত ৬৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে ৯ উইকেটে জেতান তিনি। ম্যাচ শেষে কোহলি নিজেই স্বীকার করেছেন, দীর্ঘ দিন পর এমন দুর্দান্ত সিরিজ খেললেন তিনি।
সিরিজের শেষ ম্যাচে কুইন্টন ডি ককের সেঞ্চুরিতে ২৭০ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৭১ রানের টার্গেট ভারত পার করে ফেলে ১০ ওভারেরও বেশি হাতে রেখে। সেঞ্চুরি করেন যশস্বী জাইসওয়াল। হাফ-সেঞ্চুরি করেন কোহলি।
৪৫ বলে ৬৫ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেন কোহলি। আর কোহলি সিরিজ শেষ করেন মোট ৩০২ রান ও ১৫১ গড় নিয়ে এক কথায় ভয়ংকর ফর্ম। সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন এই তারকা ব্যাটার।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে কোহলি করেছিলেন ১২০ বলে ১৩৫ রান। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ম্যাচটি জিতেছিল ভারত। দ্বিতীয় ম্যাচে ৯৩ বলে ১০২ রান করেছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটার। তবে দ্বিতীয় ম্যাচটি হেরেছিল ভারত।
সিরিজ জয় করা তৃতীয় ম্যাচ শেষে কোহলি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি এমন ছন্দে শেষ দুই-তিন বছরে আর খেলেননি। তার ভাষায়, “এভাবে খেলতে পারাটা আমার জন্য সবচেয়ে তৃপ্তিদায়ক। মনে হচ্ছে আমার পুরো খেলা আবার সুন্দরভাবে একসাথে জুড়ছে। মাথা এখন একদম ফ্রি, আর নিজের স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে দলকে বড় ইনিংসে সাহায্য করতে পারাই আমাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয়। যখন জানি আমি পরিস্থিতি বুঝে লম্বা সময় ব্যাট করতে পারি, তখন মনে হয় যে পরিস্থিতিই আসুক, সেটা সামলানোর মতো শক্তি আমার আছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি জানি, যখন মধ্যমাঠে এভাবে খেলতে পারি, তখন আমি লম্বা ইনিংস খেলতে পারি, পরিস্থিতি বুঝে ব্যাট করতে পারি। আত্মবিশ্বাস থাকলে মনে হয় যে পরিস্থিতিই হোক, সেটা সামলানোর মতো ক্ষমতা আমার আছে এবং দলকে এগিয়ে নিতে পারবো।”
সিরিজে তিন ম্যাচে ১২টি ছক্কা মেরে নিজের যেকোনো ওয়ানডে সিরিজের সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড গড়েছেন কোহলি, বিশ্বকাপও বাদ নয়। স্ট্রাইক রেট ছিল ১১৭.০৫, যা ২০২৩ সালের পর কোনো ওয়ানডে সিরিজে তার সেরা।
আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রেকর্ড ২২তমবার ‘প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ’ জিতে নিলেন তিনি ওডিআইতে যা তার ১২তম। আর সিরিজ শেষে কোহলির আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি সংখ্যা ৮৪টি।কোহলি মজা করে বলেন, “যখন ফ্রি হয়ে খেলি, তখন ছক্কা মারা আমার জন্য সহজ হয়। তাই ব্যাটিং ভালো হচ্ছিল বলে একটু ঝুঁকি নিয়েছি, নিজের সীমা ঠেলে দেখেছি কোথায় যাই।
সবসময়ই কিছু লেভেল থাকে আনলক করার, শুধু সাহস করে চেষ্টা করতে হয়।” ১৫ বছরেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে ওঠা-নামার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকেও। নিজের দুর্বলতা নিয়ে কোহলি কোনো রাখঢাক রাখেন না।
তিনি বলেন, “অনেক সময়ই মনে হয়েছে হয়তো আর ভালো হবে না। ব্যাটারদের ক্ষেত্রে একটা ভুলেই ইনিংস শেষ। তাই ভয় কাটানো, আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া সবটাই শেখার জার্নি। নিজের নেগেটিভ চিন্তা কোন দিকে যায়, কোন অবস্থায় আত্মবিশ্বাস কমে যায় এসব বুঝতে বুঝতে মানুষ হিসেবেও আপনি আরও ব্যালান্সড হয়ে যান।” শেষ দুই-তিন বছরে এমন ফর্মে না থাকার স্বীকারোক্তির পরও এবার কোহলির ভাষায় স্পষ্ট, তিনি আবার নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন, আর সেই ছন্দে ভারতও পাচ্ছে ভয়ংকর এক ব্যাটসম্যানকে।
এসএস/টিকে