দক্ষিণ কোরিয়ার তারকা সন হিউং-মিনের পথ অনুসরণ করে মোহামেদ সালাহকে আগামী জানুয়ারিতেই মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) পাড়ি জমানোর পরামর্শ দিয়েছেন ইংল্যান্ডের সাবেক উইঙ্গার ক্রিস ওয়াডল। তার মতে, বয়স এবং কৌশলগত চাহিদার চাপ বাড়তে থাকায় লিভারপুলের এই কিংবদন্তি খেলোয়াড়ের জন্য আমেরিকায় নতুন জীবন শুরু করাই হতে পারে সঠিক সিদ্ধান্ত। কোচ আর্নে স্লটের সঙ্গে এই মিশরীয় তারকার টানাপোড়েন এখনো পুরোপুরি কাটেনি, আর সেই প্রেক্ষাপটে আনফিল্ড ছাড়ার গুঞ্জন আবারও জোরালো হচ্ছে।
সালাহকে ঘিরে লিভারপুলের অভ্যন্তরীণ সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বাইরের মহল থেকেও প্রকাশ্যে জানুয়ারিতে ক্লাব ছাড়ার পরামর্শ আসছে। লিভারপুলের একাদশ থেকে বাদ পড়ার পর প্রকাশ্যে ক্লাবের সিদ্ধান্তের সমালোচনার পর কোচ স্লটের পক্ষ থেকে সাময়িকভাবে তাকে স্কোয়াডের বাইরে রাখা এই ঘটনাগুলো তার ভূমিকা, ভবিষ্যৎ এবং নতুন কৌশলগত ব্যবস্থায় মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। যদিও উভয়পক্ষের বৈঠকের পর চলতি সপ্তাহের ব্রাইটনের বিপক্ষে ম্যাচে তাকে ফের স্কোয়াডে নেওয়ার পথ খুলেছে, তবুও অনিশ্চয়তার আবহ কাটেনি। সিগালসদের বিপক্ষে এই ম্যাচের পরই আফ্রিকা কাপ অব নেশন্সে (এএফকন) খেলতে তিনি দলের বাইরে চলে যাবেন।
এই অস্থির প্রেক্ষাপটেই ৬৪ বছর বয়সী ওয়াডল মন্তব্য করেছেন, এখন ৩৩ বছর বয়সী সালাহ হয়তো আর প্রিমিয়ার লিগের শারীরিক চাহিদার সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই নন। স্লটের সিস্টেমে রক্ষণাত্মক দায়িত্ব পালনে তিনি সমস্যায় পড়েছেন, বিশেষ করে ডান প্রান্তে ফিরে এসে রক্ষণে সহায়তা করার ক্ষেত্রে। এর ফলে ওই পাশ দিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ গোল হজম করতে হয়েছে লিভারপুলকে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ফর্মের অবনতি। চলতি মৌসুমে ১৯ ম্যাচে মাত্র পাঁচ গোল ও তিন অ্যাসিস্ট, যা তার আগাম বিদায়ের আলোচনা আরও জোরদার করেছে।
বিতর্ক সত্ত্বেও সালাহকে ঘিরে আগ্রহ কমেনি। সৌদি প্রো লিগ তো বটেই, ক্রমেই এমএলএসও আগ্রহী হয়ে উঠছে, যেখানে ক্লাবগুলো বিশ্ব ফুটবলের বড় নামদের টানতে চায়। এমএলএস ইতিমধ্যেই মেসি, থমাস মুলার এবং সাবেক স্পার্স তারকা সন হিউং-মিনের মতো তারকাদের যুক্তরাষ্ট্রে নিয়েছে। যার মধ্যে সনের গত গ্রীষ্মে এলএএফসিতে যোগ দেওয়া একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। লিভারপুল ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে পৌঁছাতে থাকা সালাহর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ‘মার্কি’ তারকা হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই বাস্তব হয়ে উঠছে।
হুইচবুকিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিউক্যাসল ও টটেনহ্যামের সাবেক উইঙ্গার ওয়াডল বলেন, 'সালাহ নিশ্চয়ই বলবে সে প্রতিটি ম্যাচ খেলতে চায়। বিশেষ করে নতুন চুক্তিতে সই করার পর কিছু প্রত্যাশা তো থাকেই। কিন্তু খেলা বদলায়, আর তাকেও সেই অনুযায়ী মানিয়ে নিতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'যদি সে খুশি না হয়, জানুয়ারিতে ট্রান্সফার রিকোয়েস্ট দিতে পারে। আগ্রহী ক্লাবের অভাব হবে না। সে চাইলে সন হিউং-মিনের মতো এমএলএসে যেতে পারে।এএফকনের পর একটু বিরতি নিয়ে মার্চে ট্রেনিং শুরু করে আমেরিকায় নতুন ক্যারিয়ার শুরু করতে পারে, যেখানে সে হবে বড় আকর্ষণ।'
সালাহর বয়স ও রক্ষণাত্মক দায়িত্ব পালনে অনীহাই তাকে স্লটের পছন্দের তালিকায় নিচে নামিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন ওয়াডল। তিনি বলেন, 'খেলোয়াড়রা চায় চিরকাল খেলতে, কিন্তু বয়স বাড়ছে এই সত্য এড়ানো যায় না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মোহামেদ সালাহর বয়সও বাড়ছে। প্রিমিয়ার লিগের গতি আরও বেড়েছে। এ মৌসুমে এমন উদাহরণ আছে, যেখানে সালাহ ফিরে না আসায় ডান পাশে কনর ব্র্যাডলি চাপে পড়েছে এবং সেখান থেকেই গোল হয়েছে।'
তিনি যোগ করেন, 'তার কাছ থেকে যেটা চাওয়া হচ্ছে রক্ষণে সাহায্য করা এই মুহূর্তে সেটা তার খেলায় নেই। একমাত্র উপায় হলো তাকে একটু সামনে ভাসমান ভূমিকায় খেলানো, ফ্লোরিয়ান ভির্টজ-টাইপ রোলে, যেখানে তাকে রক্ষণে না ফিরতে বলবে এবং অন্যরা দায়িত্ব নেবে।'
'এভাবে দল সাজানো যায়, কিন্তু সে এমন বয়সে পৌঁছেছে যেখানে খেলাটার গতি সে অনুভব করবেই চাইলেও না চাইলেও। সে বেঞ্চে বসতে চায় না, তাই আমার মনে হয় আর্নে স্লট পরিস্থিতি বুঝে তাকে খেলাচ্ছেন,' ওয়াডল যোগ করেন।
এসএস/টিএ