অল্প বয়স থেকেই যেসব শিশু ডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারে অভ্যস্ত, তারা তুলনামূলকভাবে অলস হয়ে পড়ে। অর্থাৎ খেলাধুলা ও শরীরচর্চার মতো শারীরিক ক্রিয়াকলাপের প্রতি ধীরে ধীরে এসব শিশুর আগ্রহ কমতে থাকে।
নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু স্মার্টফোন ও টেলিভিশন স্ক্রিনগুলিতে প্রতিদিন তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় করে তারা স্কুলে প্রবেশের বয়সে শারীরিকভাবে কম সক্রিয় থাকে। দ্য ল্যানসেট চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট হেলথ জার্নালে প্রকাশিত ওই সমীক্ষায় সিঙ্গাপুরের ৫ শতাধিক শিশু অংশ নিয়েছিল।
এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকা মেনে দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের ডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় প্রতিদিন এক ঘণ্টার মধ্যে সীমিত রাখলে পরবর্তী জীবনে তাদের জীবনাচরণ স্বাস্থ্যকর হবে।
শিশুদেরকে স্মার্টফোন বা টেলিভিশনের মতো ডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহার করতে দেয়া এখন আর বিরল কোনো ঘটনা নয়। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, অভ্যাসটি নিয়ন্ত্রণে না রাখলে স্থূলত্বের ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং জ্ঞানীয় বিকাশ হ্রাস হওয়াসহ একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যার দেখা দিতে পারে।
ডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহার না করলে শিশুরা সে সময়টি ঘুম বা খেলাধুলার মতো গঠনমূলক কাজে ব্যবহার করে। ফলে এই অভ্যাসটি এক দিকে স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে, সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিকে শিশুদের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন- ঘুম ও শারীরিক ক্রিয়াকলাপকে প্রতিস্থাপন করছে।
সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ফ্যালক মুলার রিমনস্কিনিডার বলেন, “ডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের অভ্যাস কীভাবে দুই থেকে তিন বছর বয়সের শিশুদের প্রভাবিত করে তা আমরা দেখতে চেয়েছিলাম। বিশেষত, শৈশবকালে এই অভ্যাস শিশুদের ঘুমের ধরণ ও ক্রিয়াকলাপের স্তরগুলিকে প্রভাবিত করে।”
অংশগ্রহণকারী শিশুরা টিভিতে ভিডিও গেমস দেখে বা খেলে, কম্পিউটার ব্যবহার করে এবং স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ব্যবহার করে প্রতিদিন গড়ে কতটা সময় ব্যয় করছে তা বাবা-মায়েদের জানাতে বলা হয়েছিল।
গবেষণায় দেখা যায়, এসব শিশু দুই থেকে তিন বছর বয়সে স্ক্রিন দেখতে প্রতিদিন গড়ে আড়াই ঘণ্টা সময় ব্যয় করে। টেলিভিশন সর্বাধিক ব্যবহৃত ডিভাইস এবং এর পেছনে শিশুরা সর্বাধিক সময় ব্যয় করে। কেবল অল্পসংখ্যক শিশুই প্রতিদিন এক ঘণ্টা বা তার চেয়ে কম সময়ের জন্য ডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত ছিল।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যেসব শিশু দুই থেকে তিন বছর বয়সে দিনে তিন বা ততোধিক ঘণ্টা স্ক্রিন ব্যবহার করেছিল তারা পাঁচ বছর বয়সের অন্য শিশুদের তুলনায় প্রতিদিন গড়ে ৪০ মিনিট বেশি সময় অলসভাবে কাটিয়েছে। অন্যদিকে যেসব শিশু দিনে এক ঘণ্টার কম সময় ডিজিটাল স্ক্রিনে কাটিয়েছে তারা পাঁচ বছর বয়সে গড়ে প্রতিদিন ৩০ মিনিট হালকা শরীরচর্চায় ও ১০ মিনিট মাঝারি মাত্রার শরীরচর্চায় বেশি ব্যয় করেছে।
অর্থাৎ গবেষণার এই ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে, যেসব শিশু দুই থেকে তিন বছর বয়সে বেশি সময় ধরে ডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহার করে তারা তুলনামূলকভাবে অলস হয় এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপে কম সময় ব্যয় করে। তবে, স্থান-কাল-পাত্র-খাদ্যাভ্যাস প্রভৃতির তারতম্যের ফলে এর প্রভাব সিঙ্গাপুরের বাইরের শিশুদের ক্ষেত্রে কিছুটা আলাদা হওয়াই স্বাভাবিক। তথ্যসূত্র: দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
টাইমস/এনজে/জিএস