আজ ২১ ডিসেম্বর, নাটোর হানাদার মুক্ত দিবস। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকা ১৬ ডিসেম্বর মুক্ত হলেও নাটোর জেলা হানাদারমুক্ত হয় পাঁচ দিন পর, ২১ ডিসেম্বর।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নাটোরে বড় ধরনের সম্মুখ যুদ্ধ না হলেও জেলার বিভিন্ন স্থানে চালানো হয় ভয়াবহ গণহত্যা। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ লালপুর উপজেলার দুর্গম ময়না গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিপাগল জনতার যে প্রতিরোধ যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তা ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিককার উল্লেখযোগ্য লড়াইগুলোর একটি। পরবর্তী নয় মাসে নাটোরের বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বহু মানুষকে শহিদ করে এবং একাধিক স্থানে গণকবর দেয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নাটোর ছিল পাকসেনাদের ২ নম্বর সামরিক হেডকোয়ার্টার। তৎকালীন সিও অফিসে স্থাপন করা হয় পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি। ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকেই নাটোর উপজেলা চত্বর, পিটিআই স্কুল, আনসার হল, রিক্রিয়েশন ক্লাব, এনএস কলেজ, নাটোর রাজবাড়ি ও দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি চত্বরে স্থাপিত ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত পাকসেনারা মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে শুরু করে।
তবে নাটোর রাজবাড়ি চত্বরে চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় ২১ ডিসেম্বর। এদিন পাকিস্তানি বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফ মিত্রবাহিনীর ১৬৫ মাউন্টেন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিং পান্নুর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পণ করেন। এর মধ্য দিয়ে নাটোর জেলা সম্পূর্ণভাবে হানাদারমুক্ত হয় এবং দিনটি নাটোর মুক্ত দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
এই আত্মসমর্পণের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর ১৫১ জন অফিসার, ১৯৮ জন জেসিও, ৫ হাজার ৫০০ জন সেনা, ১ হাজার ৮৫৬ জন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য, পাশাপাশি ৯টি ট্যাংক, ২৫টি কামান ও ১০ হাজার ৭৭৩টি ছোট অস্ত্র মিত্রবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
স্বাধীনতার বহু বছর পর নাটোরের বিভিন্ন গণহত্যাস্থলে স্থানীয় উদ্যোগে শহিদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলা হলেও এসব স্থাপনার সরকারি রক্ষণাবেক্ষণ আজও অনুপস্থিত। একই সঙ্গে শহিদ পরিবারগুলোও দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত বলে অভিযোগ রয়েছে। এখনো অনেক যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হয়নি।
স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় পর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের একটাই দাবি- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা। তাদের মতে, প্রকৃত বিচার সম্পন্ন হলেই কেবল নাটোর মুক্ত দিবসের ত্যাগ ও আত্মদান সার্থক হবে।
কেএন/টিকে