বড়দিন এলেই ইউরোপজুড়ে, বিশেষ করে ব্রিটেনে যে গানটি মানুষের ঘরে ফেরার আবেগকে নাড়া দেয়, সেটি হলো ‘ড্রাইভিং হোম ফর ক্রিসমাস’। ব্যস্ত শহর, দীর্ঘ রাস্তা আর পরিবারের কাছে ফেরার অপেক্ষা এই অনুভূতিকে যিনি গানে গানে অমর করে তুলেছিলেন, সেই কিংবদন্তি ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী ক্রিস রিয়া আর নেই।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে জানা যায়, রক ও ব্লুজ ঘরানার এই জনপ্রিয় গায়ক ও গীতিকার ৭৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। স্থানীয় সময় সোমবার (২২ ডিসেম্বর) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
১৯৫১ সালে ইংল্যান্ডের মিডলসবরোতে জন্ম নেয়া ক্রিস রিয়া আশির দশকে ব্রিটিশ সংগীতাঙ্গনে নিজের আলাদা জায়গা তৈরি করেন। ব্লুজ, সফট রক, পপ ও সোলের মিশেলে তিনি এমন এক সঙ্গীতধারা তৈরি করেছিলেন, যা মূলধারার বাইরে থেকেও বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ‘ফুল (ইফ ইউ থিঙ্ক ইটস ওভার)’, ‘অন দ্য বিচ’, ‘জোসেফিন’ একাধিক গান তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেয়।
১৯৫১ সালে ইংল্যান্ডের মিডলসবরোতে জন্ম নেয়া ক্রিস রিয়া আশির দশকে ব্রিটিশ সংগীতাঙ্গনে নিজের আলাদা জায়গা তৈরি করেন। ছবি: সংগৃহীত
তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সময় আসে ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত ‘দ্য রোড টু হেল’ অ্যালবামের মাধ্যমে, যা যুক্তরাজ্যের চার্টে শীর্ষস্থানে পৌঁছায়। পরে ১৯৯১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ওবার্গ’ অ্যালবামও সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখে।
তবে ক্রিস রিয়াকে সবচেয়ে বেশি পরিচিত করে তোলে ১৯৮৬ সালে লেখা ‘ড্রাইভিং হোম ফর ক্রিসমাস’। প্রথমদিকে গানটি খুব একটা আলোচনায় না এলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি ব্রিটেনের বড়দিনের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়। এতটাই জনপ্রিয় যে, চলতি বছরেও ব্রিটিশ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে গানটি ব্যবহার করা হয়েছে।
দীর্ঘ সংগীতজীবনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনে নানা শারীরিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে এই শিল্পীকে। তিনি অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন এবং ২০০১ সালে জটিল অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এরপর ২০১৬ সালে স্ট্রোকের শিকার হন, যা তার জীবনে বড় ধাক্কা এনে দেয়। স্ত্রী জোয়ান ও দুই কন্যা জোসেফিন ও জুলিয়াকে রেখে গেছেন ক্রিস রিয়া।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তার দুই মেয়ের নামেই তিনি জনপ্রিয় গান রচনা করেছিলেন।
ঘরে ফেরার অনুভূতি, পথের গল্প আর জীবনের ওঠানামাকে যিনি সুরে বেঁধেছিলেন তার চলে যাওয়া সংগীতপ্রেমীদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তবে বড়দিন এলেই, কিংবা দীর্ঘ পথে গাড়ি ছুটলেই, ক্রিস রিয়ার কণ্ঠে সেই চিরচেনা গান আবারও ফিরে আসবে শ্রোতাদের মনে, স্মৃতিতে।
এমকে/টিএ