সিডনির বন্ডিতে ইহুদিদের একটি অনুষ্ঠানে হামলাকারীকে নিরস্ত্র করে হিরো বা নায়ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন আহমেদ আল আহমেদ। সিরিয়ায় জন্মগ্রহণকারী এবং সিডনির এই দোকান মালিক সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেই মুহূর্তের বিবরণ দিয়েছেন।
গত ১৪ই ডিসেম্বর রবিবার বন্ডি বিচে আয়োজিত হনুকা অনুষ্ঠানে দুই বন্দুকধারী হামলা চালায়। এতে ১৫ জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হন। ১৯৯৬ সালের পর এটি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ গুলিবর্ষণের ঘটনা। পুলিশ একে ইহুদি সম্প্রদায়ের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে ঘোষণা করেছে।
প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায়, আহমেদ পেছন থেকে হামলাকারীদের একজনকে জাপটে ধরেন এবং তার হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নেন। বিবিসির মার্কিন পার্টনার সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দুই সন্তানের জনক আহমেদ বলেন, 'আমি তাকে ডান হাত দিয়ে ধরি এবং সতর্ক করে বলি 'তোমার বন্দুক ফেলে দাও, তুমি যা করছ তা থামাও'।
আহমেদ জানান, তিনি ৫০ বছর বয়সী হামলাকারী সাজিদ আকরামকে নিরস্ত্র করার সময় নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, 'আমার লক্ষ্য ছিল শুধু তার কাছ থেকে বন্দুকটি নেওয়া এবং নিরপরাধ মানুষের প্রাণ বাঁচানো। আমি মানুষের মৃত্যু, রক্ত বা আর্তনাদ দেখতে চাইনি। আমার আত্মা আমাকে এই কাজটি করতে বলেছিল।'
হামলাকারী সাজিদ আকরাম পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। তবে অপর হামলাকারী, সাজিদের ছেলে নাভিদ (যিনি হামলার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন) এর বিরুদ্ধে ১৫টি হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ মোট ৫৯টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই ঘটনার সময় অন্য বন্দুকধারীর গুলিতে আহমেদ নিজেও কাঁধে গুলিবিদ্ধ হন এবং তার অন্তত তিনটি অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তবে তার এই সাহসিকতা অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও প্রশাসন। আহমেদের সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে স্থানীয়রা তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ২৫ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (প্রায় ১.৭মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সংগ্রহ করেছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহমেদকে দেখতে যান অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। তিনি আহমেদকে 'দেশের সেরা মানুষ' হিসেবে অভিহিত করেন। নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স তাকে 'বাস্তব জীবনের নায়ক' বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিবিসি অ্যারাবিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আহমেদের বাবা-মা জানিয়েছেন, তাদের ছেলে বিবেক ও মানবিকতা দ্বারা তাড়িত হয়েই এই কাজ করেছেন।
সূত্র: বিবিসি
এমকে/টিএ