হৃদরোগ থেকে বাঁচাবে যেসব অভ্যাস

বর্তমান সময়ে হৃদরোগ একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো- জীবনাচরণ ও শারীরিক ক্রিয়াকলাপ থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার প্রবণতা। প্রয়োজনের স্বার্থে অফিস বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে অনেকেই বসে বসে কাজ করেন। সময়ের অভাবে করা হয়ে ওঠেনা শরীরচর্চা বা খেলাধুলা। এছাড়াও সময়ের সঙ্গে আমাদের খাদ্যাভ্যাসেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা নেতিবাচক।

অধিকাংশ সময় বসে থাকার অভ্যাস, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস আমাদের বিভিন্ন হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

যে কোনো রোগ নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম, সুতরাং আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলি নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস করা সম্ভব।

সেলিব্রেটি স্বাস্থ্য বিষয়ক কোচ পুষ্টিবিদ লুক কৌতিনহো কিছু সহজ ও সাশ্রয়ী জীবনযাত্রার পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি মনে করেন- ‘মানুষ বিশ্বাস করে যে, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগ দেখা দেয়, তবে এটি আসলে সেভাবে হয় না। আপনি যদি জীবনযাত্রার পরিবর্তন করেন তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপনি এটিকে আটকাতে সক্ষম হবেন।’

আসুন জেনে নিই, হৃদরোগমুক্ত থাকতে কৌতিনহো যেসব পরামর্শ দিয়েছেন-

সক্রিয় থাকুন
শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়তাসহ দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার অভ্যাসের ফলে ধমনীতে প্রদাহ এবং শরীরে রক্ত সঞ্চালনে দুর্বলতা দেখা দেয়। হৃদপিণ্ডের সুস্থতার জন্য প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ প্রয়োজন, উভয়ই রক্ত দ্বারা প্রবাহিত হয়। সুতরাং সক্রিয় থাকুন, স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বজায় রাখুন এবং হৃদরোগ মুক্ত থাকুন।

পর্যাপ্ত ঘুমান
কম ঘুম হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। দীর্ঘদিন ঘুম বঞ্চিত থাকলে আপনার হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে পারে। সুতরাং হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন।

ধূমপান এড়িয়ে চলুন
কৌতিনহোর মতে, ধূমপান ধমনীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান হ্রাস করে।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস হৃদরোগের আরও একটি প্রধান কারণ। আপনার যত বেশি স্ট্রেস রয়েছে, আপনার রক্তে তত বেশি কর্টিসল রয়েছে। আপনার রক্তে যত কর্টিসল রয়েছে তত বেশি হৃদরোগের সম্ভাবনা রয়েছে।

দেহের মেদ হ্রাস করুন
আপনার শরীরের চর্বি যত বেশি, হৃদরোগের ঝুঁকিও তত বেশি। অতিরিক্ত চর্বি ও ওজন হ্রাসের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। দেহে চর্বির পরিমাণ বেড়ে গেলে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেতে পারে, যা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
উচ্চ রক্তচাপ সময়ের সঙ্গে হৃদপিণ্ডকে দুর্বল করে দেয় এবং এর স্বাভাবিক কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত করে। তাই ওষুধ গ্রহণ ছাড়াই রক্তচাপের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে চেষ্টা করুন। রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে এমন অভ্যাস পরিত্যাগ করুন, যেমন: কাঁচা লবণ খাওয়া।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন
আপনার যদি ডায়াবেটিস থেকে থাকে তবে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার হৃদযন্ত্রের পাশাপাশি কিডনিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
পরিশোধিত চিনি, প্রসেসড ফুড, প্যাকেটজাত ফলের রস এবং পরিশোধিত তেল খাওয়া এড়িয়ে চলুন। প্রচুর পরিমাণে ফল ও শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
আমরা প্রায়শই হাত না ধুয়ে খাবার খেয়ে নিই। যদি হাত সংক্রামিত হয়, ভালোভাবে ধোয়া না হলে এ থেকে আমাদের হৃদযন্ত্রটিও প্রভাবিত হতে পারে।

ওষুধ গ্রহণের বিষয়ে সাবধান হোন
ওষুধের অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হৃদরোগের ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত। সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত নিজে নিজে ওষুধ খাবেন না। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও হৃদরোগ হতে পারে। তথ্যসূত্র: দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: