নেপিয়ার ঘাসের চাষ পদ্ধতি

গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য ঘাস। পুষ্টিকর ঘাসে গবাদিপশুর দেহ গঠনকারী আমিষ উপাদানসহ প্রায় সব ধরনের উপাদান মজুদ থাকে। উন্নত জাতের অধিক ফলনশীল ঘাসের মধ্যে নেপিয়ার উল্লেখযোগ্য। খাদ্যমান বেশি থাকায় গবাদিপশুর জন্য এ ঘাস বেশ উপাদেয় ও পুষ্টিকর। চাষ পদ্ধতি ও গুণাগুণ সম্পর্কে কৃষক অবগত হলে এ ঘাসের চাষে তারা উৎসাহিত হবেন।

বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ নেপিয়ার ঘাস গ্রামিণি পরিবারের অন্তর্গত। এ ঘাস একবার চাষ করার পর কয়েক বছর ধরে পাওয়া যায়। এর পাতা ও কাণ্ড দেখতে কিছুটা আখ গাছের মতো। এ ঘাস সব ধরনের মাটিতেই জন্মে। তবে বেলে দোআঁশ মাটিতে এর ফলন বেশি হয়। এ ঘাসের জন্য উঁচু জমি ভালো। বন্যাকবলিত জমি এ ঘাস চাষের জন্য অনুপযুক্ত।

নেপিয়ার ঘাস সারা বছরই রোপণ করা যায়। তবে বর্ষা মৌসুমেই রোপণ করা ভালো। পানি নিষ্কাশনের জন্য ভালো ব্যবস্থা আছে অর্থাৎ যেখানে বৃষ্টি বা বর্ষার পানি জমে থাকে না এরূপ জমি নেপিয়ার চাষের জন্য উত্তম। নির্বাচিত চাষের জমিতে ৪-৫টি চাষ দিতে হয় এবং মই দিয়ে আগাছামুক্ত করে নিতে হবে। এরপর দুই চোখসহ কাণ্ডাংশ অথবা মূলসহ কাণ্ড কাটিং করে সারিবদ্ধভাবে লাগাতে হয়।

এক সারি হতে অন্য সারির দূরত্ব ৩৬ ইঞ্চি এবং এক চারা হতে অন্য চারার দূরত্ব ১৮ ইঞ্চি। কাটিং ৬-৮ ইঞ্চি গভীরে রোপণ করা উচিত। একটি গিট মাটির নীচে, মধ্যের গিট মাটির সমানে রেখে চারা বা কাটিং আনুমানিক ৪৫০ কৌণিকভাবে লাগাতে হয়। সম্ভব হলে প্রতি গর্তে কিছু পচা গোবর বা মুরগীর বিষ্ঠা দেয়া উত্তম।

রাস্তা, পুকুরের বাঁধ বা পাহাড়ের ঢালু জমিতে নেপিয়ার চাষ করতে হলে প্রথমে ঢালের আগাছা কোদাল বা কাচি দ্বারা কেটে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর নির্দিষ্ট দূরত্বে কোদাল দিয়ে ছোট ছোট গর্ত করে প্রতি গর্তে গোবর বা মুরগীর বিষ্ঠা এবং টিএসপি সার দিয়ে চারা লাগাতে হবে। চারা লাগানোর পর চারপাশ ভালো করে মাটি দিয়ে চেপে দিতে হবে, যাতে চারার শিকড় মাটির সঙ্গে লেগে থাকে।

প্রতি একর জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষের জন্য ৭-৮ হাজার চারা বা কাটিংয়ের প্রয়োজন হয়। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রথম বৃষ্টির পর জমিতে চারা রোপণ করা হলে প্রথম বছরেই ৩-৪ বার ঘাস কাটা যায়।

নেপিয়ার ঘাসের ফলন বেশি পেতে হলে জমিতে প্রয়োজন অনুসারে সার দিতে হয়। চারা বা কাটিং লাগানোর পর যদি রৌদ্র হয় বা মাটিতে রস কম থাকে তাহলে চারার গোঁড়ায় পানি সেচ দিতে হবে। চাষের সময় হেক্টর প্রতি প্রায় ৩-৪ হাজার কেজি পচা গোবর, ফার্মজাত আবর্জনা ও পচানো ঘাস জমিতে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। বেশি ফলন পেতে হলে এর সঙ্গে হেক্টর প্রতি ২২৫ কেজি ইউরিয়া, ১৫০ কেজি টিএসপি এবং ৭৫ কেজি মিউরেট অব পটাশ প্রয়োগ করতে হবে।

কাটিং বা চারা রোপণের ৬০-৭০ দিন পর প্রথমবার ঘাস সংগ্রহ করা যায় এবং এরপর প্রতি ৬-৮ সপ্তাহ পরপর জমি হতে ঘাস সংগ্রহ করা যায়। মাটির ৫-৬ ইঞ্চি উপর থেকে ঘাস কাটতে হয়। প্রথম কাটিং-এ ফলন একটু কম হলেও দ্বিতীয় কাটিং থেকে পরবর্তী ২/৩ বছর পর্যন্ত ফলন বাড়তে থাকে। এরপর আস্তে আস্তে কমতে থাকে।

নেপিয়ার ঘাস রৌদ্রে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা সুবিধাজনক নয়, তবে রাখা যেতে পারে। কাঁচা সবুজ ঘাস ছোট ছোট খণ্ড বা টুকরা করে সাইলেজ আকারে সংরক্ষণ করাই উত্তম।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ঢাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, জনজীবনে স্বস্তি May 18, 2024
img
ওজন কমাতে চাইলে যে ৪ ফল খাবেন May 18, 2024
img
৮০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস, নদীবন্দরে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত May 18, 2024
img
গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদে লড়াই করতে প্রস্তুত ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা May 18, 2024
img
ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরও একজনের, চলতি বছরে ৩৩ May 17, 2024
img
গত ৪৪ বছরে সবচেয়ে সাহসী রাজনীতিকের নাম শেখ হাসিনা : ওবায়দুল কাদের May 17, 2024
img
গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের জন্য হামাসকেও দায়ী করলেন মাহমুদ আব্বাস May 17, 2024
img
চার বিভাগে আরও ৪৮ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি May 17, 2024
img
এআই মানুষের জীবনধারাকে সহজ করলেও এটি সভ্যতার জন্য ঝুঁকি: পলক May 17, 2024
img
ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী May 17, 2024