করোনায় মধ্যবিত্ত নামছে নিম্নবিত্তের কাতারে

নব্বইয়ের পর থেকে গত দুই দশকে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের কারণে একদিকে যেমন দরিদ্রতার হার কমেছে, এর পাশাপাশি বেড়েছে মধ্যবিত্তের সংখ্যাও। এ সময়ে ধারাবাহিকভাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে মহামারী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে দেশের মানুষ। এই লকডাউনে মধ্যবিত্তের হাতে থাকা সঞ্চয় কারও শেষ, আবার কারও ভেঙে শেষের পথে।

এখন ঘরে খাবার নেই, চক্ষুলজ্জায় কারও কাছে হাতও পাততে পারছেন না। অন্যদিকে ভাড়া পরিশোধের জন্য বাড়ি মালিকের চাপ। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের অনেকে বেতন পাচ্ছেন না। সঞ্চিত অর্থ শেষের পথে, আছেন চাকুরি হারানোর শঙ্কায়। সরকারের কোনো প্রণোদনার মধ্যেও নেই তারা। ফলে চলমান লকডাউনের মধ্যে মহাসংকটে পড়েছেন দেশের ‘গৃহবন্দি’ কয়েক কোটি মধ্যবিত্ত।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এসব পরিবারের অনেকেই এখন নিম্নবিত্তের স্তরে নেমে আসছেন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের চার কোটি পরিবার আছে। এর মধ্যে নিম্নবিত্ত ২০ ভাগ আর উচ্চবিত্ত ২০ ভাগ। মাঝের যে ৬০ ভাগ এরা নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ মধ্যবিত্ত। এই সংখ্যা আড়াই কোটি পরিবার হবে। এর মধ্যে সরকারি চাকুরিজীবী, মাল্টিন্যাশনাল ও বড় কোম্পানিতে কাজ করা কিছু মানুষ বাদে অন্যরা সবাই সংকটে আছেন। এদের অনেকেরই বেতন হয়নি, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ফলে তারা বেতন তো পাননি, উল্টো চাকুরি ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই মানুষগুলো সরকারি কোনো কর্মসূচির মধ্যেও নেই। তবে সরকার এসএমই ঋণ দিয়ে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। তবে এই সংখ্যাও খুব বেশি না। বিপুল জনগোষ্ঠী এখনও সহায়তার বাইরে।’’

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘মধ্যবিত্তের কিছু সঞ্চয় থাকে। গেল এক মাসের লকডাউনে তারা সেই সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। এভাবে আরেকমাস চললে তাদের সেই সঞ্চয়ও শেষ হয়ে যাবে। তখন বিপুল সংখ্যক মধ্যবিত্ত এই পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্তে পরিণত হবেন। সবচেয়ে বড় সংকট হবে যখন সবকিছু স্বাভাবিক হবে তখন তো বিপুল সংখ্যক মানুষ চাকুরি হারাবেন। উন্নত দেশে তো বেকার ভাতা দেয়া হয়। এখানে সেই ব্যবস্থা নেই। এমনকি সরকারের যে প্রণোদনা সেখানেও কিছু মধ্যবিত্তের কোন অবস্থান নেই। আবার আমাদের যে ব্যবস্থা সেখানে সরকার চাইলেও মধ্যবিত্তকে কিছু করতে পারে না। আসলেই বাংলাদেশে মধ্যবিত্তরা ভয়াবহ সংকটে আছেন।”

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘এই কারণেই আমরা নগদ প্রণোদনার কথা বলেছিলাম। আমাদের দেশে ছয় কোটি ১০ লাখ শ্রমিক আছেন। এর মধ্যে এক কোটি শ্রমিক দিন এনে দিন খায়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কর্মসংস্থান যারা করেন তাদের সংখ্যা দুই কোটি ২০ লাখ। আমরা সরকারকে বলেছি, একটি পরিবারে চারজন আছেন এমন একটি পরিবারকে মাসে আট হাজার টাকা হিসেবে দুই মাসের ১৬ হাজার টাকা দিতে। তাতে সরকারের ২৭ হাজার কোটি টাকা লাগবে, যা জিডিপির এক শতাংশ। এভাবেই এই ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের সহায়তা করা যেতে পারে।’’ তথ্যসূত্র : ডয়চে ভেলে

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মিথিলা হাতে উঠলো ভারতের ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার May 04, 2024
img
আট দফা কমার পর বাড়লো স্বর্ণের দাম May 04, 2024
img
মুসলিম উম্মাহর একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী May 04, 2024
img
সুন্দরবনের গহীনে ভয়াবহ আগুন May 04, 2024
img
সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার May 04, 2024
img
আইপিএলে প্লে অফে ওঠার দৌড়ে এগিয়ে যারা May 04, 2024
img
শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে যাত্রীরা, ৬ ট্রেনের যাত্রা বাতিল May 04, 2024
img
সরকার গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিতে কাজ করছে: প্রতিমন্ত্রী May 04, 2024
img
শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন বাড়াতে কাজ করছে সরকার : শিক্ষামন্ত্রী May 04, 2024
img
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হামাস May 04, 2024