সংকটে শিক্ষার্থীরা: প্রাসঙ্গিক ভাবনা

সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলোর সবই করোনাকালীন মেস-ভাড়া সংক্রান্ত। এই বন্ধের সময় মেসের পরিচালকরা ফোন করে শিক্ষার্থীদের কাছে ভাড়া চাচ্ছেন। এ অবস্থায় কয়েক মাসের জমে থাকা ভাড়া পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। সংকট সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় ও নোয়াখালীর স্থানীয় প্রশাসন নাকি কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন। কিন্তু, সেই পদক্ষেপ কতোটা কার্যকর করা হয়েছে সেটা বলতে পারছি না।

আমরা জানি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের। আবার অনেকে এমনও আছে যারা ‘দিন আনে দিন খায়’ এমন পরিবার থেকে এসেছে। এসব পরিবারের ছেলেমেয়েরা টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারকে সহায়তা করে থাকে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের একমাত্র আয়ের উৎসটাও বন্ধ হয়ে গেছে।

ইতিমধ্যে নোবিপ্রবির অধিকাংশ শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমি মনে করি, নোবিপ্রবি প্রশাসনেরও উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও যেসব খাতে টাকা আদায় কিংবা ব্যয় হচ্ছে; সেসব টাকা একত্রিত করে অসহায় শিক্ষার্থীদের সহায়তায় ব্যয় করা যেতে পারে। এমন কয়েকটি খাত তুলে ধরা হলো-

১. যেসব শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে যাতায়াত করেন তাদেরকে প্রতিমাসে ৪০০ টাকা করে দিতে হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষকদের গাড়ি চলাচলও বন্ধ রয়েছে। কিন্তু, গাড়ি ভাড়া ঠিকই প্রতিমাসে কেটে নেয়া হচ্ছে। প্রায় ২শ’ শিক্ষকের কাছ থেকে প্রতিমাসে গাড়ি ভাড়া বাবদ কাটা হচ্ছে ৮০ হাজার টাকা।

২. বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বে পদে আছেন এমন শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ১০০। দায়িত্ব পালনের জন্য প্রত্যেককে প্রতিমাসে সম্মানী দেয়া হয় ৩৫০০ টাকা। করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এখন তাদের কেনো দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে না। এসব শিক্ষকদের প্রতি মাসে মোট সম্মানী দেয়া হচ্ছে সাড়ে তিন লাখ টাকা।

৩. নোবিপ্রবিতে ২৮টি বিভাগ ও দুইটি ইন্সটিটিউটকে প্রতিমাসে ‘ইমপ্রেস মানি’ বাবদ ৩০০০ টাকা করে দেয়া হয়। যদিও এর মধ্যে ভ্যাট রয়েছে। ভ্যাট ছাড়া থাকে ২৫০০ টাকার মতো। সে হিসাবে ভ্যাট ছাড়া মোট ‘ইমপ্রেস মানি’ দেয়া হচ্ছে ৭৫ হাজার টাকা।

এই তিন খাতেই বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতি মাসে গুণতে হচ্ছে পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার টাকা। এছাড়াও প্রতিমাসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাস ভাড়া বাবদও টাকা নেয়া হচ্ছে। ছাত্রকল্যাণ তহবিলেও রয়েছে অনেক টাকা।

প্রতিমাসে উল্লেখিত খাতের টাকা নোবিপ্রবি প্রশাসন অসহায় শিক্ষার্থীদের পিছনে ব্যয় করতে পারে। এতে করে কিছুটা হলেও অসহায় শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। কারণ শিক্ষার্থীরাই আমাদের প্রাণ। নোবিপ্রবি প্রশাসন ভেবে দেখতে পারেন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ অ্যান্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগ
সাধারণ সম্পাদক, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ, নোবিপ্রবি।

Share this news on: