করোনা থেকে সেরে ওঠার পর প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী?

কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীদের আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া বিশাল একটা চ্যালেঞ্জ। আর সেটা হলো- তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলার দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্বাসতন্ত্র এবং হৃদরোগ পুনর্বাসন বিভাগের অধ্যাপক স্যালি সিং বলেছেন, "অনেকেই মনে করেন রোগীকে সারিয়ে তোলাটাই বড় কথা। ফলে রোগী আসলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছে কিনা। কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীদের আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা আমরা হয়ত ভাবছি না।"

তিনি বলেন, একটা বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী কোভিড আক্রান্ত হয়েছে। কাজেই এদিকটা উপেক্ষা করলে চলবে না।

বিশ্বে লাখো লাখো মানুষ এখন এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছে। অনেকে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে ইনটেনসিভ কেয়ারে চিকিৎসা নিয়েছে, অনেককে হয়ত অতটা কঠিন সময় পার করতে হয়নি, অবস্থা গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে হাসপাতালে অক্সিজেন চিকিৎসা তাদের সেরে উঠতে সাহায্য করেছে। কিন্তু কোভিড-১৯ এদের সবার জীবনকে বদলে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের নিবিড় পরিচর্যায় যেতে হয়েছে তাদের দীর্ঘমেয়াদে পুনর্বাসন কীভাবে হবে, সেটা তারা কোমা থেকে জেগে ওঠার আগেই শুরু করা উচিত। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য তাকে সাহায্য করার কাজটা সেই সময় থেকেই শুরু করতে হবে।

তারা বলছেন, যখন গুরুতরভাবে আক্রান্তরা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আছে, সে অবস্থাতেই নার্স ও বিশেষজ্ঞদের রোগীর পেশী ও হাড়ের জয়েন্টগুলো সচল রাখতে বিশেষ ব্যায়াম করাতে হবে। নাহলে দীর্ঘসময় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় থাকার কারণে তার শরীর খুব শক্ত হয়ে যাবে।

ইংল্যান্ডে প্লিমাথ শহরের ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের বিশেষজ্ঞ নার্স কেট ট্যানটাম বলছেন, “যেমন, কাউকে যদি ভেন্টিলেটরে রাখা হয়, বা তার বিভিন্ন অঙ্গ যন্ত্রের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে চালু রাখা হয়, এমনকি পাশাপাশি তাকে বাঁচিয়ে রাখতে যদি নানা ধরনের ওষুধ তার শরীরে বিভিন্ন নলের মাধ্যমে প্রবেশও করানো হয়, তেমন অবস্থাতেও তাদের ব্যায়াম করার বিশেষ সাইকেল যন্ত্রে তোলা সম্ভব।”

“যন্ত্রে রোগীর পা দুটো বসিয়ে দিলে বাকি কাজটা যন্ত্রই করবে। তাতে করে রোগীর পেশী, হাড়, অস্থিমজ্জা সব কিছু সচল রাখা যাবে, সেগুলো কঠিন হয়ে যাবে না।"

ডা. কুলওয়ান্ত ধাদওয়াল বলছেন, আইসিইউতে সংজ্ঞাহীন বা কড়া ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা রোগীদের সাথে তার সহকর্মীরা অনবরত কথা বলেন। তাদের বলা হয় তারা কোথায় আছে, তাদের নিয়ে কী করা হচ্ছে, তাদের আশ্বাস দেয়া হয় যে তারা নিরাপদে আছে।

"তাদের যখন জ্ঞান ফিরবে তখন রোগীর মানসিক অবস্থার জন্য এগুলো খুবই জরুরি। কোনো কোনো রোগী জ্ঞান ফেরার পর এমনও বলেছেন, 'ও আপনার কণ্ঠ আমার মনে আছে', তারা কিছু স্মৃতি নিয়ে জেগে ওঠে," বলছেন ডা. ধাদওয়াল।

তবে কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে বিষয়টা অবশ্যই অনেক বেশি কঠিন ও জটিল হয়, কারণ আইসিইউ-তে কোভিড রোগীদের অনেককেই ভেন্টিলেটারে রাখতে হয় দীর্ঘ সময় ধরে।

অনেকেই যখন জ্ঞান ফিরে পান, যন্ত্র থেকে যখন তাদের বের করে আনা হয়, তখন তারা ভীষণ রকম দুর্বল থাকেন।

"ধরুন একজন রোগী সংজ্ঞাহীন অবস্থায় থাকছেন ৪০ দিন বা তারও বেশি। তাদের জন্য ভেন্টিলেটর থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে সময় লেগে যায় ছয় সপ্তাহ, কখনও কখনও তার থেকেও বেশি। এরপর তাদের উঠে দাঁড়ানো, হাঁটাচলা শুরু করা, সব মিলিয়ে লম্বা সময়ের ব্যাপার," বলছেন ডা. কুলওয়ান্ত ধাদওয়াল।

তবে কেউ কেউ "বিস্ময়করভাবে" তাড়াতাড়ি সেরে উঠছেন, এমনও দেখছেন চিকিৎসকরা।

ডাক্তাররা বলছেন, কোভিড-১৯-এর মত মারাত্মক ভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পর অন্যতম বড় একটা চ্যালেঞ্জ হল খুব মারাত্মক প্রদাহ কাটিয়ে ওঠা।

অনেক রোগীর জন্য বড় সমস্যা হয় নিঃশ্বাস নেবার জন্য তাদের মুখের ভেতর দিয়ে নল ঢোকাতে না পারার কারণে। কোভিড আক্রান্ত হলে গলার নালী, স্বরযন্ত্র এবং আশপাশের অংশগুলো খুব ফুলে যায়। ফলে তাদের গলা দিয়ে নল ঢোকানো কঠিন হয়। সেক্ষেত্রে ডাক্তারদের গলার কাছে ফুটো করে সেখান দিয়ে নল শ্বাসনালীতে প্রবেশ করাতে হয়, যেটা ভেন্টিলেটরের সাথে যুক্ত করতে হয়।

"এই ফুটো করার কারণে গলায় যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, সেটারও পরবর্তীতে দেখাশোনার দরকার পড়ে," ব্যাখ্যা করছিলেন ইংল্যান্ডেরই আরেকটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা ডাক্তার কার্ল ওয়াল্ডমান।

সব মিলিয়ে সেরে ওঠার গোটা প্রক্রিয়াটাই অনেক লম্বা এবং সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
হাইকোর্টে খারিজ সাইফের আবেদন, ১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি চলে যাবে সরকারের দখলে! Jul 05, 2025
img
সম্পর্কের টানাপোড়েনের গল্প বলল ‘মেট্রো ইন দিনো’ সিনেমা, দেখে নিন রিভিউ Jul 05, 2025
img
বিচ্ছেদ জল্পনার মাঝেই সোহেলের মায়ের জন্মদিন উদযাপনে অভিনেত্রী তিয়াসা! Jul 05, 2025
img
যুদ্ধবিরতির পর প্রথমবারের মতো আলোচনায় বসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান Jul 05, 2025
img
'বাংলাদেশে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ বলে কোনো রাজনৈতিক দল থাকবে না' Jul 05, 2025
img
জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই নতুন সংবিধানে যুক্ত করতে হবে : নাহিদ ইসলাম Jul 05, 2025
img
৩৬ জুলাইয়ে শহীদ হওয়ার খুব কাছাকাছি ছিলাম : আসিফ মাহমুদ Jul 05, 2025
img
ইসরায়েলকে সশস্ত্র বাহিনী বড় ধরনের শিক্ষা দিয়েছে: পেজেশকিয়ান Jul 05, 2025
img
গোলাম মাওলা রনি অসত্য তথ্য ছড়াচ্ছেন: প্রেস সচিব Jul 05, 2025
img
৮ বছর পর বিচ্ছেদ নিয়ে নিজের ভুল স্বীকার অভিনেত্রী মিথিলার Jul 05, 2025
img
টানা ব্যর্থতার পর ‘মেট্রো ইন দিনো’ ছবিতে সব আশা অভিনেত্রী সারার! Jul 05, 2025
img
ধোনি-সাক্ষীর বিবাহবার্ষিকী: পথচলার ১৫ বছর পূর্ণ! Jul 05, 2025
img
বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানের কাছে বারবার হোঁচট ভারতের Jul 05, 2025
img
জুলাইয়ে শহীদ হতে না পারাটা আমার জন্য আফসোস: আসিফ মাহমুদ Jul 05, 2025
img
মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সন্দেহে আটক তিনজন দেশে ফিরেছেন, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে : আসিফ নজরুল Jul 05, 2025
img
সকালের মধ্যে দেশের ৭ জেলায় ৬০ কি.মি. বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস Jul 05, 2025
img
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে : নাহিদ ইসলাম Jul 05, 2025
img
এনসিপির কর্মসূচি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনে একটি নতুন রাজনীতির সূচনা: প্রেস সচিব Jul 05, 2025
img
সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করলে ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবিলা করা হবে: আখতার Jul 05, 2025
img
এজবাস্টনে বড় লিড নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করল ভারত, চাপে ইংল্যান্ড Jul 05, 2025