ক্রিস গার্ডনারের জিরো থেকে হিরো হবার গল্প

বিশ্বে জিরো থেকে হিরো হবার অনেক উদাহরণ রয়েছে। মার্কিন উদ্যোক্তা ক্রিস গার্ডনারের গল্পটা সেই বিখ্যাত উদাহরণগুলোর একটি। যিনি এক সময় ছিলেন একেবারে শূন্য। ওই সময় যার আশ্রয় বলতে কিছু ছিল না। অথচ আজ সেই ব্যক্তিটি একজন কোটিপতি এবং একটি কোম্পানির সিইও।

পুরো নাম ক্রিস্টোফার পল গার্ডনার। যিনি একজন মার্কিন ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, অনুপ্রেরণাদানকারী বক্তা ও সমাজসেবী। ১৯৫৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার উইস্কনসিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

তার শৈশবের দিনগুলো ছিল চরম বেদনাদায়ক। কারণ শৈশবেই তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। মা আবার বিয়ে করেন। তিনি মায়ের সঙ্গে সৎ বাবার কাছে থাকতেন। সৎ বাবা ছিলেন বড় নিষ্ঠুর। যার মিথ্যা অভিযোগে তার মা দুই দুই বার জেলে ছিলেন। ওই সময় আট বছর বয়সেও অনেকদিন তাকে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়েছে।

কিন্তু তার মা ও মামা হ্যানরি সবসময় তাকে উৎসাহ দিয়ে গেছেন। বিশেষ করে তার মা তাকে সবসময় নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে ও নিজ পায়ে দাঁড়াতে প্রেরণা দিয়ে গেছেন। তাই শত অভাব, অনটন ও প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে তিনি ভালো কিছু করার চেষ্টা করেছেন।

একপর্যায়ে স্কুলের পড়ালেখা শেষ করে মামার পরামর্শে তিনি মার্কিন নৌবাহীনিতে যোগ দেন। ১৯৭৪ সালে এ চাকরি ছেড়ে সানফ্রানসিস্কোর একটি ক্লিনিকে রিসার্চ অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু এ চাকরিতে বেতন তেমন ভালো ছিল না। তাই চাকরির পাশাপাশি তিনি বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ করতেন।

একবার এক অনুষ্ঠানে তিনি খুব নামী-দামী পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তির দেখা পান। যার সঙ্গে খুব দামী একটি গাড়িও ছিল। তিনি জানতে পারেন লোকটি একজন শেয়ার ব্যবসায়ী। সেদিন থেকে তিনি শেয়ার ব্যবসা করার স্বপ্ন দেখেন। একপর্যায়ে তিনি এই চাকরি ছেড়ে দেন এবং স্টকব্রোকার হিসেবে কাজ শুরু করেন।

তখন তার অর্থনৈতিক অবস্থায় চরম বিপর্যয় দেখা দেয়। ওই দুঃসময়ে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। তার এক ছেলে ছিল। টাকার অভাবে বাড়ি ভাড়া নিতে পারেন নি। প্রায় এক বছর তিনি ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় রাত কাটিয়েছেন।

চরম বিপর্যয়েও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সংগ্রাম করে গেছেন তিনি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি প্রশিক্ষণ নেন এবং চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। সব মেডিক্যাল জিনিস-পত্র বিক্রি করে যে সামান্য টাকা পেয়েছিলেন এটাই ছিল তার শেষ সম্বল।

ধীরে ধীরে তার ভাগ্য বদলে যেতে থাকে। ১৯৮২ সালে তিনি একটি ফার্মে ফুল-টাইম চাকরি পান। ১৯৮৭ সালে তিনি শিকাগোতে ‘গার্ডনার রিচ অ্যান্ড কোং’ নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

২০০৬ সালে তিনি এটি বিক্রি করে দেন এবং ‘ক্রিস্টোফার গার্ডানার ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিংস’ নামে বড় পরিসরে আরেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেন। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সিইও। সানফ্রানসিস্কো, নিউ ইয়র্ক, শিকাগোসহ বিভিন্ন শহরে এর শাখা রয়েছে।

ব্যবসার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন মানবসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন। একদিন যে শহরে তিনি আশ্রয়হীন ছিলেন, সেই শহরে আজ তিনি নিম্ন আয়ের মানুষের বাসস্থান ও কর্মসংস্থান সুবিধা নিশ্চিত করতে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। এছাড়া শিশুদের শিক্ষা ও উন্নয়নে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি।

২০০২ সালে তিনি এনএফআই কর্তৃক ‘ফাদার অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পান। ২০০৪ সালে কানাডার একটি ডকুম্যান্টারিতে স্থান পায় তার জীবনী। ‘লস এঞ্জেলস কমিশন অন অ্যাসল্টস অ্যাগেইনস্ট উইম্যান’ কর্তৃক ২৫তম বার্ষিক ‘হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। ২০০৬ সালে আফ্রিকান চেম্বার্স অব কমার্স তাকে ‘ফ্রেন্ড অব আফ্রিকা’ সম্মাননায় ভূষিত করে।

তার জীবনী নিয়ে হলিউডে একটি সিনেমাও তৈরি হয়েছে। ‘দ্য পারস্যুট অফ হ্যাপিনেস’ নামের এই মুভিটি কেবল ব্লকবাস্টারই হয়নি, বিশ্বব্যাপী দর্শকদের কাছে এটা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল।

এক সময় যার সুন্দর শৈশব ছিল না, ছিল না থাকার বাড়ী। আশ্রয়হীনভাবে রাত কাটিয়েছেন ফুটপাতে, পার্কে, হোটেলের বারান্দায় এমনকি কখনো পাবলিক টয়লেটে। আজ সেই ব্যক্তিটির সম্পদের পরিমাণ ৬০ মিলিয়নেরও বেশি।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সাদাপাথর লুটকাণ্ডে গ্রেপ্তার সাহাব উদ্দিন কারাগারে Sep 14, 2025
img
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাবর, আলোচনায় তারেক রহমানের নিরাপত্তা Sep 14, 2025
img
প্রকৌশল খাতে লেনদেন শীর্ষে, জীবনবিমায় পতন Sep 14, 2025
img
গণতন্ত্র ও ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য বিপজ্জনক শক্তির উত্থান ঘটছে : রিজভী Sep 14, 2025
img
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে ড্রেসিংরুমে উত্তাপ! Sep 14, 2025
img
ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে মস্কোর বার্তা Sep 14, 2025
img
তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন : বাবর Sep 14, 2025
img
নির্ধারিত টাইমলাইনে নির্বাচন হতেই হবে : সালাহউদ্দিন আহমেদ Sep 14, 2025
img
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে সহযোগিতা করবেন এনবিআর চেয়ারম্যান Sep 14, 2025
img
রাজস্ব আয়ে রেকর্ড শাহ আমানত বিমানবন্দরে Sep 14, 2025
img
জুলাই সনদ নিয়ে সমঝোতায় আসতেই হবে : প্রধান উপদেষ্টা Sep 14, 2025
img
'লোকাহ' চ্যাপ্টার ১ -এ চন্দ্রা-র সাফল্যের কারণে কান্তা মুক্তির তারিখ পিছিয়ে Sep 14, 2025
img
অভিনয় ছেড়ে এবার প্রযোজনায় স্বীকৃতি মজুমদার Sep 14, 2025
img

যুক্তরাষ্ট্রের বাজার নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারলে শুল্কহ্রাসের আরো সম্ভাবনা রয়েছে Sep 14, 2025
img
কোহলি না থাকায় স্বস্তিতে পাকিস্তানের বোলাররা: গাভাস্কার Sep 14, 2025
img
স্বরা-ফাহাদের প্রেমে কিউপিড হয়ে এল এক বিড়ালছানা Sep 14, 2025
img
২ গান বাদ দিয়ে গল্পের কেন্দ্রবিন্দু অক্ষুণ্ণ রাখল মিরাই Sep 14, 2025
img
আওয়ামী আমলে শিক্ষাকে ক্লাসরুম থেকে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল : প্রিন্স Sep 14, 2025
img
বেটিং কাণ্ডে ইডির তলব, জেরার মুখে মিমি ও উর্বশী Sep 14, 2025
img
মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন ফখরুল, গয়েশ্বর, আব্বাসসহ ৭০ জন Sep 14, 2025