বাংলাদেশ-চীন ভ্যাকসিন কূটনীতিতে ছিটকে পড়েছে ভারত

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিভিন্ন চুক্তি ও কর্মকান্ড নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে ভারত। এ নিয়ে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমেও আসছে নিত্য নতুন খবর। তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের প্রতি চীনের আগ্রহ রয়েছে, আর সেটি কাজে লাগাতে চাইছে শেখ হাসিনা সরকার। তবে এ ক্ষেত্রে ভারতকে একেবারেই নিরাশ করছে না বাংলাদেশ।

এর আগে গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশ সফরে এসে জানিয়েছিলেন, ভারত করোনা ভাইরাসের টিকা পেলে বাংলাদেশ সবার আগে সেই সুফল পাবে। অবশ্য এর কয়েকদিনের মধ্যেই বাংলাদেশে চীনা ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল চালানো হবে বলে জানায় বাংলাদেশ।

গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, আইসিডিডিআরবি’র সঙ্গে যৌথভাবে চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক তাদের ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল চালাবে বাংলাদেশে। যারা করোনায় আক্রান্ত হয়নি তাদের ওপর এ ট্রায়াল চালানো হবে। এ ব্যাপারে চীনকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

চীনের ব্যাপারে বাংলাদেশের এ সিদ্ধান্তে সম্প্রতি ভারতে গভীর বিস্ময় ও হতাশা তৈরি হয়েছে। কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্যা টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেকেই মনে করছেন শ্রিংলার ‘ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি’ বাংলাদেশে ব্যর্থ হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, লাদাখ সীমান্ত নিয়ে চীন-ভারত উত্তেজনার পর থেকে দুই দেশই বাংলাদেশকে নিজেদের গন্ডিতে রাখার চেষ্টা করছে। এমনকি করোনা সংকট মোকাবিলায় চীন সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে। খবরটি ভারতকেও ব্যাপক চিন্তায় ফেলে দেয়।

পরে বাংলাদেশকে ঠেকাতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা হম্বিতম্বি করে বাংলাদেশ সফর করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন শ্রিংলা। কিন্তু কোনো ভাবেই চীনের প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে বের করতে পারেননি শ্রিংলা। বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ ভারতকে সার্বিকভাবে বিস্মিত করেছে বলেও ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, বাংলাদেশি কূটনৈতিক মহলের কেউ কেউ বিষয়টাকে শ্রিংলার ঢাকায় নিয়ে আসা 'ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি'র ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন।

এদিকে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রের বরাতে টেলিগ্রাফ জানায়, গত জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল চাইনিজ ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের বিষয়টি পরিস্কার করার পরেও ভারতের রিজার্ভেশনের কথা জানানোর পর এতদিন তা থমকে ছিল। তবে বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সামনে এগিয়ে যাওয়া প্রমাণ করে ভারতের রিজার্ভেশনের বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে।

ওই সূত্রের মতে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং চীনা অ্যাম্বাসেডরের বৈঠকে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের বিষয়টি পরিস্কার হওয়ায় বাংলাদেশে ভ্যাকসিন রেসে ভারতকে ছুড়ে ফেলেছে চীন।

তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মতও দিয়েছেন কোনো কোনো কূটনীতিক। তাদের মতে, বাংলাদেশে চীনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমোদন ভারতের কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখা ঠিক হবে না।

 

টাইমস/এসএন

Share this news on: