নরসিংদীর বাবুরহাটে বিক্রেতা আছে, ক্রেতা নেই

দেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ কাপড়ের পাইকারি বাজার নরসিংদীর বাবুরহাট। সারাদেশের মত করোনাভাইরাসের ছোঁয়া লেগেছে এখানেও। কেনাবেচা কম। বিক্রেতারা বসে আছেন কাপড়ের পসরা সাজিয়ে। কিন্তু করোনার কারণে ক্রেতার সংখ্যা কম।

এই বাজারে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার সপ্তাহের এই তিন দিন হাট বসে। সপ্তাহের এই তিন দিন রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট, বরিশাল, জামালপুর, ভোলা, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জসহ আরও দূরদূরান্ত থেকে বিক্রেতারা এসে কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেন। ক্রেতা বিক্রেতার মেলবন্ধনে মুখরিত হয়ে উঠে বাবুরহাট। তবে এখন এই করোনাকালে অবস্থা ভিন্ন।

রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটবার না হওয়ায় দোকান খুলা আছে অল্পই। সেখানে ক্রেতার সংখ্যাও হাতে গুনা কয়েকজন। দোকানিরা ক্রেতা না থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন।

ঢাকা থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে এবং নরসিংদী শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের কুল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই হাট।

বাবুরহাটের জনপ্রিয়তার আরেক কারণ এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা কাউকেই দিতে হয় না কোন খাজনা। হাটে মাথার টুপি থেকে শুরু করে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, শার্ট-প্যান্ট, বিছানার চাদর, থান কাপড়সহ সব ধরণের কাপড় পাওয়া যায়।

বাবুরহাট প্রতিষ্ঠার পিছনেও রয়েছে এক ইতিহাস। কথিত আছে, এই অঞ্চলের জমিদার আশু বাবু প্রথমে তিরিশের দশকে মাধবদিতে হাট বা বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু কোন কারণে তার ভাই কালী বাবুর সঙ্গে তার ঝগড়া হলে কালী বাবু, প্রমথ বাবু ও গোপাল বাবু শেখেরচরে বাবুরহাট প্রতিষ্ঠা করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই নতুন বাবুরহাট বড় বাজার হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় এবং সেই থেকে এটিই বাবুরহাট নামে প্রসিদ্ধ হয়।

সেখানে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আমানতশাহ লুঙ্গির পাইকারি দোকানের ম্যানেজার পরিতোষ পোদ্দারের সাথে। তিনি বলেন, “বিক্রির সার্বিক অবস্থা খারাপ। করোনার কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, সবদিক দিয়েই খারাপ। ক্রেতা আগের তুলনায় কম, এখন ভয়ে অনেকে বাড়ি থেকেই বের হয় না।”

করোনায় দোকানের কর্মচারী ও ক্রেতাদের সুরক্ষায় কি পদক্ষেপ নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, “আমাদের এখান থেকে সব ব্যবস্থায় নেয়া হয়েছে সুরক্ষার জন্য। কর্মচারীদের মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইজার, স্প্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

বাবুরহাটে প্রায় দশ বছর ধরে কাজ করা বিসমিল্লাহ শাড়ি ঘরের কর্মচারী মো. রহমত উল্লাহ বলেন, “ঈদের পরে এমনিতেই বাজার মন্দা, তারপরও চলছে কোনরকম। গতবছরের তুলনায় এই বছর বিক্রির পরিমাণ কম। গতবছর সব ফ্রি ছিলো, কিন্তু এই বছর করোনার কারণে সব বন্ধ তাই বেচা-বিক্রিও কম।

কাপড় কিনতে আসা রণো নামের এক ক্রেতা জানান, “লকডাউনের কারণে এখন কোথাও বের হওয়া হয় না বেশি। আজ অন্য একটা কাজে এসে এখানে ঘুরতে আসলাম। থ্রি পিছ দেখতেছি যদি পছন্দ হয় তাহলে কিনে নিয়ে যাবো।”

বাবুরহাট বণিক সমিতির সেক্রেটারি সুশান্ত দাস কুদি বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সব রকম সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে করোনার কারণে অর্থনৈতিক মন্দা চলায় আমাদের এখানেও ক্রেতা সমাগম কম। বেচা-বিক্রিও তেমন নাই। আশা করি পরিস্থিতি ভাল হলে আবার ব্যবসা আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। আগে অনেকে অনেক ব্যবসা করলেও এখন মন্দা যাচ্ছে।”

 

টাইমস/আরএ/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

বাংলাদেশি কূটনীতিকের বাসা গুঁড়িয়ে দেয়ার মিথ্যা দাবিতে বিব্রত ঢাকা Jun 27, 2025
নামাজ পড়লে যে ৬টি পুরস্কার পাবেন | ইসলামিক টিপস Jun 27, 2025
img
আমরা কোনো অবিচার চাই না: জামায়াত আমির Jun 27, 2025
সাদিয়া আর সৌম্য ছাড়া কাজ করা খুব কঠিন হতো: উৎসবের কাস্টিং ডিরেক্টর Jun 27, 2025
স্থানীয় নির্বাচন আগে জরুরি: মন্তব্য নুরের Jun 27, 2025
img
উন্মোচিত হলো লাল হীরা ‘উইনস্টন রেড’ Jun 27, 2025
img
উত্তেজনার পর বিরল খনিজ নিয়ে চুক্তিতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র Jun 27, 2025
img
ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলো চূড়ান্ত, সময়সূচি প্রকাশ Jun 27, 2025
img
আকাশ থেকে তেহরান দেখে মুগ্ধ ইসরায়েলের পাইলট Jun 27, 2025
img
শেখ হাসিনা জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন : রিজভী Jun 27, 2025
img
ব্যাট ছুঁয়ে এলবিডব্লিউ, মাটি ছুঁয়ে ক্যাচ-তুমুল বিতর্কে আম্পায়ার Jun 27, 2025
img
নূরুল হুদার ১০ দিনের রিমান্ড চাইল পুলিশ Jun 27, 2025
img
আগামীর রাজনীতি যেন ফ্যাসিবাদের জন্ম না দেয়: জামায়াত আমির Jun 27, 2025
img
বিয়ের আগে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন বুমরাহ! Jun 27, 2025
‘শুধু নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর এটা কারো প্রত্যাশা নয়’ Jun 27, 2025
img
দলের নেতাকে মারধরের ঘটনায় এনসিপি নেতাকে অব্যাহতি Jun 27, 2025
img
ইনকাম ট্যাক্সে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে সুবিধাভোগীরা আন্দোলন করছে : রিজভী Jun 27, 2025
img
ভৈরবে বাস-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে আহত ১০ Jun 27, 2025
img
যমুনা সেতু থেকে সরানো হচ্ছে রেললাইন,প্রশস্ত হবে সড়ক Jun 27, 2025
img
উ. কোরিয়ায় চাল, ডলার ও বাইবেল পাঠানোর চেষ্টা, দ. কোরিয়ায় আটক ৬ মার্কিন Jun 27, 2025