বায়ু দূষণের ফলে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নানা ধরণের মস্তিষ্কের রোগের ঝুঁকি

নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে দূষিত বায়ু প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে পার্কিনসন, আলঝেইমার কিংবা মোটরনিউরন ডিজিরের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও যানবাহনের ধোয়ার সাথে নির্গত অতিক্ষুদ্র ধাতবকণা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।

‘এনভাইরোমেন্টাল জার্নাল’ এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের মহামারী ঠেকাতে এখন থেকেই বায়ু দূষণ রুখতে সচেতন হতে হবে।

বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর বহু লোক নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের (মস্তিষ্কের রোগ) শিকার হন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশনের মতে, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই ৫০ লক্ষ পার্কিনসন রোগাক্রান্ত রয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোলোজিক্যাল ডিসঅর্ডার এন্ড স্ট্রোক, সিডিসি এবং ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অন এজিং এর মতে, এই সমস্ত মস্তিষ্কের রোগের সাথে পরিবেশগত এবং জিনগত কারণ সম্পর্কযুক্ত।

 

বায়ু দূষণের সাথে সম্পর্ক

স্নায়ুজনিত রোগের পেছনে প্রভাব রয়েছে এমন একটি পরিবেশগত কারণ হলো বায়ু দূষণ।

পূর্ববর্তী অন্যান্য গবেষণায় বায়ু দূষণ এবং আলঝেইমার রোগের মধ্যে সম্পর্ক চিহ্নিত হয়েছে। তবে পার্কিনসনের রোগ এবং বায়ু দূষণের মধ্যকার সম্পর্কটি এখনো অস্পষ্ট। অন্যদিকে মোটর নিউরন ডিজিজের সাথে বায়ু দূষণের প্রভাব সম্পর্কে খুব একটা গবেষণা হয়নি।

আলঝেইমার, পার্কিনসন এবং মটোর নিউরন ডিজিজের কারণ শনাক্ত করতে আলোচিত এই গবেষণায় গবেষকরা মেক্সিকো সিটির মৃত যুবকদের মস্তিষ্কের স্টেম সেল নিয়ে পরীক্ষা করেন। মৃত ব্যক্তিদের মস্তিষ্ক কোষে রোগগুলির সাথে বায়ু দূষণের জন্য দায়ী ন্যানো-পার্টিকেলগুলির কোনোসম্পর্ক রয়েছে কিনা সেটা তারা খুঁজে বের করতে চেষ্টা করেন।

গবেষকরা এই উদ্দেশ্যে ২০০৪ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে করা হয়েছে এমন ১৮৬টি ময়নাতদন্ত নিয়ে গবেষণা করেন। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পরে প্রাথমিক ময়নাতদন্ত সম্পাদন হয় এবং গবেষণার উদ্দেশ্যে মস্তিষ্কের স্টেমের কিছু অংশ -৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়।

গবেষণায় মস্তিষ্কের স্টেমে আলঝেইমার, পার্কিনসন এবং মটোর নিউরন ডিজিজের সাথে বায়ু দূষণের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেছে।

যুক্তরাজ্যের ল্যানক্যাস্টার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এবং গবেষণাপত্রটির সহ-লেখক বারবারা মাহেরের বলেন, ’এইসব ব্রেইন স্টেমে শুধু আলঝেইমার, পার্কিনসন এবং মটোর নিউরন ডিজিজের প্রমাণ পাওয়া গেছে এমন নয়। সেগুলিতে প্রচুর পরিমাণে আইরন, অ্যালুমিনিয়ান এবং টিটানিয়াম সমৃদ্ধ অতিক্ষুদ্র ধাতবকণা পাওয়া গেছে। এইসব অতিক্ষুদ্র ধাতবকণা সাধারণত গাড়ীর ধোয়ার সাথে নির্গত হয়।‘

গবেষকগণ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, যে সকল তরুণ-তরুণী বর্তমানে বায়ু দূষণ প্রবণ এলাকায় বসবাস করছেন তাদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বিশ্বজুড়ে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের মহামারী দেখা দিতে পারে। তাই এখন থেকেই বায়ু দূষণ ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তথ্যসূত্র: মেডিক্যাল নিউজ টুডে

 

টাইমস/এনজে/এসএন

Share this news on: