বাদুড়ে থাকা ভাইরাস সম্পর্কে কুল-কিনারা পাচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা

বাদুড় নিয়ে একসময় বিশেষজ্ঞ এবং সংরক্ষনবাদীদের অনেক আগ্রহ ছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনাভাইরাসের মূল উৎস হিসেবে বিভিন্ন গবেষণায় বাদুড়কে দায়ী করার ফলে প্রাণীটি এখন গবেষকদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে বাদুড়ের দেহে বিদ্যমান অসংখ্য ভাইরাস এবং সেগুলো মানবদেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে কিনা সে বিষয়ে গবেষণা অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি সায়েন্স জার্নালে দুইজন গবেষক তাদের সহকর্মী বিজ্ঞানীদের বাদুড় এবং ভাইরাস সম্পর্কে কি কি জানা অবশ্যক তা নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করার আহ্বান জানান। এছাড়াও কিভাবে আমরা বাদুড় সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারি এবং প্রাপ্ত জ্ঞান আমাদেরকে কিভাবে সাহায্য করতে পারে এ বিষয়েও নানা পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাদুড় বিষয়ক গবেষক ড্যানিয়েল জি স্ট্রেইকার এবং কলরাডোর ফোর্ট কলিন্সের জাতীয় বন্যপ্রাণী গবেষণা কেন্দ্রের অ্যামি টি. গিলবার্ট বাদুড় বিষয়ে আমাদের জ্ঞানের নানা সীমাবদ্ধতা খুঁজে বের করেছেন।

স্ট্রেইকার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা নিজেদের গবেষণায় মনোনিবেশ করে এগিয়ে চলছি। তবে আমি মনে করি আমরা সবসময় বাদুড় কীভাবে একটি বিশেষ প্রাণী হয়ে উঠেছে, সে বিষয়ে অনুসন্ধান না করে বাদুড় কেন বিশেষ প্রাণী এর ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করি।

গবেষকদের মতে, অন্যান্য প্রানীদের দেহে আশ্রিত ভাইরাসের তুলনায় বাদুড়ের ভাইরাসগুলো ছড়িয়ে পড়ার প্রাদুর্ভাব বেশি কিনা সেটি বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আলোচিত প্রশ্ন।

তাদের মতে, সাধারণত ধারনা করা হয় কেউ যদি অসংখ্য বাদুড়ের প্রজাতিকে লক্ষ্য করে তাহলে দেখবে যে বাদুড়ের শরীরে আশ্রিত অনেকগুলো ভাইরাস যা অন্যান্য প্রাণীরা ধারণ করতে পারে না।

বাদুড়ের প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে সকল ভাইরাস তাদের ক্ষতি করতে পারে না। তবে অনেক বাদুড় বিভিন্ন প্রাণঘাতী ভাইরাস বহন করে। যা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রেও বিপদজনক। উদাহরণস্বরূপ- সার্স এবং মার্স ভাইরাস।

তবে স্ট্রেইকার বলেন, মূল প্রশ্ন হলো প্যাথোজিনের বিবর্তনের কারণে বাদুড় ভাইরাসগুলোকে সহ্য করতে পারলেও তা মানুষের জন্যে আরোও বিপদজনক কিনা? তবে বিজ্ঞান এখনো সে উত্তর দিতে পারে নি।

তিনি আরো বলেন, অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় বাদুড়ের থাকা ভাইরাসগুলো অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণ কিনা কিংবা মানুষের মধ্যে এগুলো সংক্রমণের প্রবণতা বেশি কিনা, অথবা মানুষকে সংক্রমণ ছড়ালে সেটি বেশি ক্ষতিকর কিনা, সে বিষয়ে আমাদের হাতে বিশেষ কোনো তথ্য নেই।

তবে শুধুমাত্র বাদুড়ের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া-কর্মই জানা জরুরি নয়। একটি রোগ ছড়িয়ে পড়া কতটা বিপদজনক এবং কিভাবে এটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এসব  নির্ভর করে মানুষ এবং বাদুড়ের যোগাযোগের ওপর, কোন প্রজাতির বাদুড় সংযুক্ত, কোথায় বসবাস করে, এবং কিভাবে তা অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় সবকিছু সম্পর্কেই জানা প্রয়োজন।

এজন্য ইমিউনলজিস্ট, ভাইরোলজিস্ট, ইকোলজিস্ট এবং ইভোলিউশনারি বায়োলজিস্টদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সমন্বয় সাধন প্রয়োজন বলে মনে করেন স্ট্রেইকার।

মহামারীর অংশ হিসাবে এটি এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে এই শৃঙ্খলামূলক কাজগুলো বিজ্ঞানীরা মহামারীর পূর্বেই শুরু করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন।

উদাহরণস্বরূপ, গত সপ্তাহে গ্লোবাল ইউনিয়ন অফ ব্যাট ডাইভারসিটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি, টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটি এবং স্টনি ব্রুক ইউনিভার্সিটিকে ১.৬৭ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন।

টেক্সাস টেকের ইকোলজিস্ট টিগা কিংস্টন অর্ধযুগ ধরে একসাথে কর্মরত সহকর্মীর সাথে জাদুঘরে এবং স্টনি ব্রুকে বাদুড়ের ওপর গবেষণা নিয়ে একসাথে বৈঠক করেছেন। তিনি আরো বেশি যোগাযোগ স্থাপনের বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।

বাদুড় নিয়ে গবেষকদের মধ্যে যোগাযোগের অনেকগুলো মাধ্যম বা নেটওয়ার্ক রয়েছে। এরমধ্যে কিছু আঞ্চলিক, কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে উপর, কিন্তু সকল গবেষকদের মধ্যে আন্ত যোগাযোগের জন্য এখনো কোনো বৈশ্বিক মাধ্যম নেই।

তিনি বলেন, ন্যাশনাল সাইন্স ফাউন্ডেশন যে মেটা নেটওয়ার্ক প্রদান করছে তারা ২০১৯ সালে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরে মহামারী শুরু হয়ে যায় এবং মৌলিক গবেষণা ও সংরক্ষণ নতুন করে জরুরি হয়ে উঠলো। এটা বস্তুত সত্য যে আমরা যা কিছু করছি সবকিছুর সাথে কোভিড-১৯ এর সম্পর্ক রয়েছে।

তিনি বলেন, জিনোমিসিস্টদের পাশাপাশি কাজ করতে আমাদের ইমিউনোলজিস্টদের প্রয়োজন, যারা ইকোলেজিস্টদের পাশাপাশি কাজ করছে, যারা প্রাণীর ফিজিওলজি নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন এমন মানুষদের সাথে কাজ করছে। যতক্ষন না কাজটি সম্ভব হচ্ছে আমরা এ ধরনের ঘটনাগুলো প্রশমিতকরণের আশা করতে পারছিনা। বলতে পারেন, বাদুড় থেকে ছড়ানো ভাইরাসের বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো কুল-কিনারা করতে পারেননি। তথ্যসূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া

 

টাইমস/তন্বী/এনজে/এসএন

 

Share this news on: