অসুস্থ হলে বাঁদুড়ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে

অবাক হওয়ার মতো তথ্য বটে! শারীরিক অসুস্থতার সময় প্রকৃতিগত স্বভাবের বশবর্তী হয়ে দলের অন্য বাঁদুড় থেকে দূরত্ব বজায় রাখে ভ্যাম্পায়ার প্রজাতির (ভাইরাসবহনকারী) বাঁদুড়। এই সামাজিক দূরত্ব অনুসরণের জন্য কোনো ধরণের আইন কিংবা চোখ রাঙানির প্রয়োজন হয় না।

সম্প্রতি ‘Behavioral Ecology’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। জার্মান রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির উদ্যোগে গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

গবেষণার স্বার্থে গবেষকরা বেশ কিছু বন্য ভ্যাম্পায়ার প্রজাতির বাঁদুড়ের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে দিয়েছিলেন। এর ফলে বাঁদুড়গুলি অসুস্থ বোধ করতে শুরু করে। এছাড়াও বাঁদুড়ের পিঠে একটি বিশেষ যন্ত্র স্থাপন করা হয়, যাতে এর সামাজিক যোগাযোগের সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। এরপর বাঁদুড়গুলোকে তাদের আস্তানায় ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।

এর ফলে দেখা গেছে, সুস্থ বাঁদুড়দের তুলনায় অসুস্থ বাঁদুড়গুলো অন্য বাঁদুড়ের সংস্পর্শে খুব কম এসেছে। বিশেষ করে যেসব বাঁদুড় অন্যসব বাঁদুড়দের সাথে খুব বেশি মিশেছে এরা তাদের কাছে যায়নি। এছাড়াও দেখা গেছে সুস্থ বাঁদুড়গুলোও নিজে থেকে অসুস্থ বাঁদুড়দের কাছে খুব একটা আসেনি। কাজেই, ধারণা করা হচ্ছে অসুস্থ অবস্থায় বিশেষ শ্রেণীর এই বাঁদুড়টি সামাজিক দূরত্ব অনুসরণ করে।

সিমন রিপেরগার গবেষণাপত্রটির সহ-লেখক এবং ওহিও ইউনিভার্সিটির পোস্ট-ডক্টোরাল রিসার্চার। সিমন এ বিষয়ে বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারির সময় আমরা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে বাধ্য হচ্ছি, তবে সেটিকে স্বাভাবিক হিসেবে নিতে পারছি না। তবে অসুস্থতার সময় যেহেতু আমরা ক্লান্ত থাকি এবং বিছানায় বেশি সময় কাটাই সেহেতু তখন সামাজিক যোগাযোগ কম হওয়াটাই স্বাভাবিক।”

তিনি বলেন, “একই ঘটনা আমরা বাঁদুড়দের মধ্যেও দেখতে পেয়েছি। বন্য ভ্যাম্পায়ার বাঁদুড়েরা স্বভাবগত ভাবে অত্যন্ত সামাজিক প্রাণী। কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় তারা দলের অন্য সদস্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। আশা করা যায় এর মধ্য দিয়ে তারা রোগের সংক্রমণ সীমাবদ্ধ করতেও সক্ষম হয়।”

গবেষণায় ৩১টি সাধারণ ভ্যাম্পায়ার প্রজাতির নারী বাঁদুড়কে ব্যবহার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৬টির দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় করে দেয়া হয়েছিল, বাকী ১৫টি বাঁদুড়কে শুধুমাত্র প্লেসবো দেয়া হয়। প্রোক্সিমিটি সেন্সর ব্যবহার করে তাদের সামাজিক যোগাযোগের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সুস্থ বাঁদুড়গুলির তুলনায় অসুস্থ বোধ করা বাঁদুড়গুলো গড়ে ৪টি বাঁদুড়ের সাথে কম মিশেছে এবং প্রতি বাঁদুড়ের সাথে গড়ে ২৫ মিনিট কম সময় কাটিয়েছে।

ভ্যাম্পায়ার ব্যাট বা বাঁদুড় দক্ষিণ আমেরিকার একটি বিশেষ শ্রেণীর বাঁদুড়, এদেরকে নাঁকবোচা বাঁদুড়ও বলা হয়।  খাদ্য হিসেবে এই বাঁদুড়েরা রক্ত পান করে, এ থেকেই এদের ভ্যাম্পায়ার নামের উৎপত্তি। তথ্যসূত্র: সাইন্স ডেইলি

 

টাইমস/এনজে/এসএন

 

Share this news on: