১৯১৮ সালের ফ্লু মহামারির দ্বিতীয় তরঙ্গ ছিল সব থেকে ভয়ঙ্কর

১৯১৮ সালের ফ্লু মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গ বা সেকেন্ড ওয়েভের ফলে লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। কারণ ভাইরাস এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগ কিভাবে ছড়ায় তা আমরা জানলেও সে সময়ের লোকেরা সেটি জানতেন না।

গত এক শতাব্দী ধরে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ফলে মহামারী সীমিত করার বিষয়ে আমরা যা জেনেছি, যদি কিছু লোক অজ্ঞতাবশত তা এড়িয়ে চলতে থাকেন তবে আমাদের অবস্থাও তাদের মতই হতে পারে।

১৯১৮ সালের বসন্ত থেকে ১৯১৯ সালের শীত পর্যন্ত ফ্লু মহামারির তিনটি তরঙ্গ ধাক্কা দিয়েছিল। ১৯১৮ এর বসন্তে আঘাত করা প্রথম তরঙ্গ ছিল তুলনামূলক ভাবে হালকা। বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে শরৎকালে দ্বিতীয় তরঙ্গের সময়, এটি ১৯১৮ সালের ফ্লু মহামারির সবচেয়ে তীব্র তরঙ্গ।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রেও দ্বিতীয় তরঙ্গটি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। কারণ এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসটি করোনাভাইরাস গোত্রের সদস্য এবং শীতকালে অন্যান্য করোনাভাইরাস বেশি ছড়িয়ে পড়ে। শুষ্ক এবং কম-আর্দ্র বায়ুতে ভাইরাস বহনকারী কণাগুলি দীর্ঘক্ষণ ভেসে থাকতে পারে, এটি এর অন্যতম কারণ। তাছাড়া শীতকালে মানুষ ঘরের ভেতর বেশিক্ষণ অবস্থান করেন, বদ্ধ বাতাসে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

১৯১৮ এর ফ্লু মহামারির দ্বিতীয় তরঙ্গটির এই ভয়াবহতার পেছনে একাধিক কারণ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব কারণ সমূহের মধ্যে রয়েছে সেই সময়ে মানুষের জীবনযাত্রা এবং আচরণের ধরণ। ভাইরাসটিও খুব সম্ভবত সময়ের সাথে রূপান্তরিত হয়েছিল। তাছাড়া শীতের সময় লোকেরা ঘরের অভ্যন্তরে বেশি সময় কাটায় এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসটিও বেশি ছড়িয়ে পড়ে।

‘দ্য গ্রেট ইনফ্লুয়েঞ্জা: দ্য স্টোরি অফ দ্য ডেডলিয়েস্ট প্যান্ডেমিক অফ হিস্ট্রি’র লেখক জন এম. ব্যারি বলেন, “আমার ধারণা বসন্তকাল সংক্রমণ ছড়িয়ে যাবার জন্য  খুব একটা উপযুক্ত সময় নয়, তাছাড়া ভাইরাসটি তখন মানিয়ে নেয়ার জন্যও কম সময় পেয়েছিল। তারপর এটি রূপান্তরিত হয় এবং সংক্রামণের জন্য আরও বেশি কার্যকর এবং মারাত্মক হয়ে উঠে।”

১৯১৮ সালের ফ্লু রোগীদের মধ্যে নিউমোনিয়া প্রায়শই খুব দ্রুত বিকাশ লাভ করত এবং দ্বিতীয় দিনের মধ্যেই অনেকে মারা যেতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে সৈন্যবাহিনীর স্থানান্তর এবং সামরিক শিবিরগুলিতে ভিড়ের কারণে এটি ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছিল।

সামরিক কর্মীদের সাথে সাথে ভাইরাসটিও ভ্রমণ করেছিল। ফলস্বরূপ শরতের মধ্যেই মার্কিন সেনা এবং নৌবাহিনীর ২০% থেকে ৪০% সদস্য ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ২০১০ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, এমনকি যুদ্ধের সময় শত্রুর গুলিতে যত আমেরিকান সৈন্য মারা গিয়েছিলেন তার থেকে বেশি সংখ্যক সেনা মারা গিয়েছিলেন ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে।

মহামারির ভয়াবহতার কারণে সে সময় লোকজন ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়ে ছিল। স্কুল-কলেজ দীর্ঘদিনের জন্য বন্ধ করা দেয়া হয়েছিল। এমনকি মাস্ক ব্যবহার করা এবং যত্রতত্র থুথু না ফেলার বিষয়েও আইন করা হয়েছিল।

১৯১৮ সালের এই মহামারিতে সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী ৫ থেকে ১০ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

তবে ২০২০ সালে তুলনামূলক ভাবে বিজ্ঞান অনেকটাই উন্নত। গবেষকরা প্রতিনিয়ত ভাইরাস নিয়ে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে গবেষণা করে চলেছেন। আমরা করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার সুযোগও পাচ্ছি, যদিও এখনো সেটি অপ্রতুল।

তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন আমরা সে সময়ের থেকে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছি। তবে মানুষ যদি ব্যক্তিগত পর্যায়ে মহামারীটি সীমিত রাখার ব্যাপারে সচেতন না হয় তাহলে বিপর্যয় ঘটতে পারে। তথ্যসূত্র: সিএনএন।

 

টাইমস/এনজে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কারাগার থেকেই কঠোর আন্দোলনের ডাক ইমরান খানের Jul 03, 2025
img
অপরাধীরা রাষ্ট্রযন্ত্রের ছত্রছায়ায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে : জাহিদুল হক Jul 03, 2025
img
প্রেমের গুঞ্জনের পর আবার পর্দায় অভিষেক- নিমরত একসঙ্গে Jul 03, 2025
img
নেইমারের স্বাক্ষরিত বল চুরির ঘটনায় এক ব্যক্তির ১৭ বছরের কারাদণ্ড Jul 03, 2025
img
ইতিহাস গড়লেন দীপিকা, নাম উঠল হলিউড ওয়াক অফ ফেমে Jul 03, 2025
img
রুক্মিণীর হাত ধরে মুম্বাইয়ে নতুন ঠিকানা খুঁজছেন দেব Jul 03, 2025
img
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে বললেন ট্রাম্প Jul 03, 2025
img
ইউরোপজুড়ে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, তুরস্কে ভয়াবহ দাবানল Jul 03, 2025
img
কফি খাচ্ছিলাম, চিল করছিলাম, মুহূর্তেই দেখি পাঁচ উইকেট নেই : তাসকিন Jul 03, 2025
img
২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে ৮.৫৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি Jul 03, 2025
img
১০ জুলাই থেকে টিভিতে দেখা যাবে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট সিজন ৫’ Jul 03, 2025
img
চাঁদপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার Jul 03, 2025
img
ইরানে আশুরা উদযাপন করা হয় যেভাবে Jul 03, 2025
img
ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ ঘিরে রিপাবলিকান দলে বিভাজন Jul 03, 2025
img
এক বছরেই মানুষ বিরক্ত, অনেকের মুখোশ খুলে গেছে : গোলাম মাওলা রনি Jul 03, 2025
img
বান্দরবানে সেনা অভিযানে দুই কেএনএ সদস্য নিহত Jul 03, 2025
img
৬ রানে ৭ উইকেট পতনের ব্যাখ্যা দিলেন মিরাজ Jul 03, 2025
img
এশিয়ান কাপে মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়ায় শিষ্যদের প্রশংসায় বাটলার Jul 03, 2025
img
থাইল্যান্ডে ১ দিনের প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া Jul 03, 2025
img
সাবেক এমপি ও ক্রিকেটার দুর্জয় গ্রেফতার হলেন যে মামলায় Jul 03, 2025