এসপিও২ এবং অক্সিজেনের স্বাভাবিক মাত্রা সম্পর্কে যা জানা দরকার

এসপিও২ (SpO2) কি?

এসপিও২ কে অক্সিজেন স্যাচুরেশনও বলা হয়। এসপিও২ হচ্ছে, রক্তে অক্সিজেন বহন করে না এমন হিমোগ্লোবিনের তুলনায় অক্সিজেন বহনকারী হিমোগ্লোবিনের সংখ্যার পরিমাপ। রক্তে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন প্রয়োজন অন্যথায় দেহ সঠিক ভাবে কর্ম সম্পাদন করতে পারে না। তাই SpO2 এর মাত্রা কমে গেলে দেহে বিভিন্ন ধরণের উপসর্গ দেখা দেয়, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হাইপোক্সেমিয়া বলা হয়।

এর ফলে দেহে এক ধরণের দৃশ্যমান প্রভাব পরে বা ত্বকে নীল নীল ছোপ দেখা দিতে পারে। রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতার ফলে (হাইপোক্সেমিয়া) অনেক সময় দেহকোষেও অক্সিজেনের স্বল্পতা (হাইপোক্সিয়া) দেখা দেয়। এই দুইয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে এবং এ সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন।

শরীর কীভাবে এসপিও২ এর স্বাভাবিক স্তর বজায় রাখে?

হাইপোক্সিয়া প্রতিরোধের জন্য দেহে স্বাভাবিক অক্সিজেন পরিবহনের স্তর বজায় রাখা জরুরী। শরীর সাধারণত নিজে থেকেই এই কাজটি করে। শরীরে এসপিও২ এর স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ। ফুসফুস শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং এটি হিমোগ্লোবিনের সাথে সংযুক্ত করে দেয়। তারপর হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে সারা শরীর জুড়ে অক্সিজেনের ছড়িয়ে পড়ে।

উচ্চ শারীরবৃত্তীয় কাজ করলে (যেমন: ওজন তোলা) এবং উঁচু স্থানে ওঠার সময় শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। যদি সেটা অতিরিক্ত না হয় তাহলে দেহ সাধারণত এই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত চাহিদার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম।

এসপিও২ (রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ) পরিমাপ

রক্তে অক্সিজেনের স্তর পরীক্ষা বা নির্ণয় করার জন্য বিভিন্ন উপায়ে রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে। বহুল ব্যবহৃত একটি উপায় হচ্ছে পালস অক্সিমিটার ব্যবহার করে রক্তে এসপিও২ এর স্তর পরিমাপ করা।

পালস অক্সিমিটার ব্যবহার করা তুলনামূলক ভাবে সহজ এবং ঘরে ব্যবহারের জন্য একটি সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা উপকরণ। দামের তুলনায় এর ফলাফলও তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি নিখুঁত।

কীভাবে পালস অক্সিমিটার ব্যবহার করবেন?

পালস অক্সিমিটারটি আপনার আঙুলের উপরে সহজভাবে (ক্লিপ ব্যবহার করে) স্থাপন করুন। শতকরা হিসাবে এর স্ক্রিনে ফলাফল প্রদর্শিত হবে। ফলাফল ৯৪ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে হওয়া উচিত, এটি রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন বহনকারী হিমোগ্লোবিনের স্বাস্থ্যকর মাত্রাকে নির্দেশ করে। যদি এটি ৯০ শতাংশের কম হয় তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

পালস অক্সিমিটার কীভাবে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ পরিমাপ করে?

বহু বছর ধরে অক্সিজেন পরিমাপের জন্য পালস অক্সিমিটার ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে এতদিন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এটি ব্যবহৃত হত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাড়িতে অক্সিমিটারের ব্যবহার তুলনামূলক ভাবে সাধারণ হয়ে উঠেছে।

কত শতাংশ রক্ত অক্সিজেন পরিবহন করছে এবং কত শতাংশ রক্তে তা পরিবাহিত হচ্ছে না তা নির্ণয় করতে অক্সিমিটারগুলিতে ‘লাইট সেন্সর’ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। অক্সিজেন বহনকারী হিমোগ্লোবিনগুলি অক্সিজেন বহন করে না এমন হিমোগ্লোবিনের তুলনায় উজ্জ্বল লাল হিসাবে দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়, যে পার্থক্য খালি চোখেও ধরা পড়ে। এই নীতিকে ব্যবহার করে পালস অক্সিমিটারের অত্যন্ত সংবেদনশীল সেন্সরগুলি রক্তে প্রতি মিনিটের অক্সিজেন পরিবহনের বিভিন্নতা সনাক্ত করে এবং এটি ফলাফল তৈরি করে।

হাইপোক্সেমিয়ার (রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতার) লক্ষণ

হাইপোক্সেমিয়ার বেশ কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ বা উপসর্গ রয়েছে। এই লক্ষণ সমূহের সংখ্যা এবং তীব্রতা রক্তে এসপিও২ এর মাত্রা কতটা হ্রাস পেয়েছে তার উপর নির্ভর করে। মৃদু হাইপোক্সেমিয়ার ফলে ক্লান্তি, হালকা মাথাব্যথা, অসাড়তা এবং বমি বমি ভাব দেখা দেয়। এর থেকে বেশি তীব্রতা ধারণ করলে হাইপোক্সেমিয়া (রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা) সাধারণত হাইপোক্সিয়াতে (দেহকোষে অক্সিজেন স্বল্পতায়) রূপান্তরিত হয়।

হাইপোক্সিয়ার (দেহের কোষ সমূহে অক্সিজেন স্বল্পতার) লক্ষণ

শরীরের সমস্ত কোষের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য এসপিও২ এর একটি স্বাভাবিক স্তর বাজায় রাখা অত্যাবশ্যক। হাইপোক্সেমিয়া সরাসরি হাইপোক্সিয়ার সাথে সম্পর্কিত, বা রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা কোষে অক্সিজেনের স্বল্পতার জন্য দায়ী। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা যদি খুব কম থাকে তাহলে হাইপোক্সেমিয়া প্রায়শই হাইপোক্সিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সায়ানোসিস বা ত্বকে নীল নীল ছোপ হাইপোক্সিয়ার অন্যতম একটি লক্ষণ। তবে এটি পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়, কারণ যাদের দেহের রং কিছুটা গাড় তাদের দেহে অনেক সময় এই নীল ছোপ স্পষ্টরূপে দৃশ্যমান হয় না। তাছাড়া হাইপোক্সিয়ার তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে অনেক সময় ত্বকে নীল ছোপ বৃদ্ধি হয় না।

হাইপোক্সিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করলে বেশ কিছু অন্য উপসর্গ দেখা দেয়। মারাত্মক হাইপোক্সিয়ার কারণে খিঁচুনি, সচেতনতা লোপ, দৃষ্টিবিভ্রম, দেহ ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন দেখা দেয় এবং এটি অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

হাইপোক্সিয়া দেখা দিলে সময়ের সাথে তা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। তাই দেহে হাইপোক্সিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে কাল বিলম্ব করা উচিৎ নয়, সাধারণত বলা হয়ে থাকে যে দেহে নীল ছোপ দেখা দেয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তথ্যসূত্র: হোমকেয়ার.কম

 

টাইমস/এনজে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
টাঙ্গাইলের ৪ জন বাদ পড়ল জুলাই যোদ্ধার তালিকা থেকে Oct 30, 2025
img
ভাত ফ্রিজে রাখা কি স্বাস্থ্যকর? Oct 30, 2025
img
ইমাম ও খতিব হচ্ছেন সমাজের জ্ঞানী-প্রজ্ঞাবান মানুষ : এ্যানি Oct 30, 2025
img
সেনা অভিযানে খাগড়াছড়িতে ৪ হাজার ঘনফুট অবৈধ কাঠ উদ্ধার Oct 30, 2025
img
স্বর্ণ কিনবেন? জেনে নিন দেশে কত দামে বিক্রি হচ্ছে আজ Oct 30, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার শাটডাউন তুলতে টানা ১৩তম বারের মতো ব্যর্থ হলো মার্কিন সিনেট Oct 30, 2025
সাংস্কৃতিক সংগঠন 'মিনার' এর আয়োজিত সীরাত মাহফিলে চাকসু ভিপির বক্তব্য Oct 30, 2025
img
সাইফ হাসানের জন্মদিন আজ Oct 30, 2025
img
যুক্তরাজ্যে অভিবাসন প্রত্যাশীদের পুরনো সামরিক ব্যারাকে রাখার পরিকল্পনা Oct 30, 2025
এইচএসসিতে দেশসেরা! পেয়েছেন ঢাবিতে চান্স! তবুও চাকরির জন্য ঘুরছেন পথে! Oct 30, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Oct 30, 2025
মেট্রো পিলারের বিয়ারিং প্যাডে সিসি ক্যামেরা! Oct 30, 2025
img
তালেবান সরকারকে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কড়া বার্তা Oct 30, 2025
সুষ্ঠু গণভোট অনুষ্ঠানের বাধা বিএনপি-জামায়াত, দাবি পাটওয়ারীর Oct 30, 2025
আওয়ামী লীগ ছাড়ছেন শেখ হাসিনা তবে ক্ষমা চাইবেন না Oct 30, 2025
যে জাতি শিক্ষককে অবহেলা করে, সে নিজেই নিজের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে Oct 30, 2025
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবারের কেউ আর নাও থাকতে পারেন : শেখ হাসিনা Oct 30, 2025
বাবা-স্বামী ছাড়া কেউ গায়ে হাত দেয়নি, আজ পুলিশ দিল Oct 30, 2025
সৌদি প্রো লিগে রোনালদোর আল নাসর শীর্ষে, কিংস কাপে ব্যর্থ Oct 30, 2025
বাংলাদেশ দলের খেলা নিয়ে যা বললেন নাসির Oct 30, 2025