ভাঙ্গা মন থেকে হার্টের ঝুঁকি

মানসিক চাপ, দুঃখ-কষ্ট ও হতাশা থেকে মারাত্মক হার্টের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। কারণ মানসিক চাপের কারণে মানুষের মন ভেঙ্গে যায়, যার ফলে হার্টের ক্ষয় দেখা দিতে পারে। গবেষকরা বলছেন, কেবল প্রিয়জনকে হারানোই নয়, স্বাস্থ্য সমস্যা, চাকরি হারানো এবং দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য চাপের কারণেও মানুষের মন ভেঙ্গে যেতে পারে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ভাঙ্গা মনকে ‘কার্ডিও মায়োপ্যাথি’ বলা হয়, যা সবচেয়ে বেশি নারীদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যদিও ভাঙ্গা মনের উপসর্গ নিয়ে খুব কম গবেষণা হয়েছে, তথাপি বিজ্ঞানীদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, কীভাবে মানুষের মন ভেঙ্গে যায় এবং এটা দীর্ঘ মেয়াদে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

সম্প্রতি মেটাস্ট্যাটিক ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত তেষট্টি বছর বয়সী এক নারীর চিকিৎসা চলাকালে কানাডার একদল গবেষক ওই রোগীর মধ্যে ভাঙ্গা মনের উপসর্গ আবিষ্কার করেছেন।

হোস্টনে অবস্থিত এমডি অ্যান্ডারসন ক্যান্সার সেন্টারের গবেষকরা গত ছয় বছরে ৩০ জন ক্যান্সার রোগী সনাক্ত করেছেন, যাদের মধ্যে ভাঙ্গা মনের উপসর্গ পাওয়া গেছে। তাই যেসব ক্যান্সার রোগী বুকে ব্যথা অনুভব করে, তাদের মধ্যে ভাঙ্গা মনের উপসর্গ আছে কীনা তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত বলে গবেষকরা মনে করেন।

অন্য একটি গবেষণায় একজন চিকিৎসক দুটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন, যেখানে একজন ফুসফুসের রোগে অপরজন পাকস্থলীর প্রদাহজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং তাদের উভয়ের মধ্যেই ভাঙ্গা মনের উপসর্গ পাওয়া গেছে।

গবেষণায় দেখা যায়, যখন একজন মানুষের মন ভেঙ্গে যায় তখন তার হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং চেম্বার দুর্বল হয়ে যায়, ব্যথা অনুভব হয় এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এই সমস্যা ক্ষণস্থায়ী হলেও এর প্রভাব হার্ট অ্যাটাকের ন্যায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক চাপের কারণে হার্টে অ্যাড্রেনালিন নামক এক প্রকার হরমোন প্রবাহের কারণে এ ধরণের সমস্যা দেখা দেয়, যা হার্টকে অচেতন করে ফেলে।

তাদের মতে এটা মানব স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভাল নয়। এর অন্যতম একটি উদাহরণ হল কার্ডিওজেনিক শক। এটা এমন একটি অবস্থা যার ফলে হার্ট মানবদেহে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ করতে পারে না।

ইউনিভার্সিটি হসপিটাল জুরিখের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা এ ধরনের কার্ডিওজেনিক শক জটিলতায় ভুগেন তাদের অনেকেই পাঁচ বছরের মধ্যে মারা যায়।

ইউনিভার্সিটি হসপিটাল জুরিখের গবেষক ডি ভেস বলেন, এটা এমন এক জটিল অবস্থা যার চিকিৎসার সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই ভাঙ্গা মনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গভীরভাবে মূল্যায়ন করা এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

তবে মানসিক চাপ মোকাবেলা করা কিংবা এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়া এই জটিলতার সবচেয়ে সহজ সমাধান। যদিও এটা করা অনেকটা কঠিন বলে তিনি মনে করেন।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on: