`পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সর্বত্র শান্তি বজায় রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সর্বত্র শান্তি বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর।

শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সর্বত্র শান্তি বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। আমি আশা করি, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব, ইনশাল্লাহ।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫ পরবর্তী অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো পার্বত্য অঞ্চলের সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বাঙালি-পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বিভেদ সৃষ্টি করে। খুন, অত্যাচার-অবিচার, ভূমি জবরদখল এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এ অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করে তোলে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারও ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে ঐতিহাসিক এ শান্তিচুক্তির চরম বিরোধিতা করে পার্বত্য অঞ্চলকে পুনরায় অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল। তাদের হীন উদ্দেশ্য সফল হয়নি।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘদিনের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর কোনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিশ্ব ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘদিনের জাতিগত হানাহানি বন্ধ হয়। অনগ্রসর ও অনুন্নত পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় শান্তি ও উন্নয়নের ধারা। ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার অর্জন এই চুক্তির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির স্মারক।

তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম আধুনিকতার ছোঁয়া বিবর্জিত পশ্চাৎপদ পার্বত্য জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় ফিরিয়ে আনেন এবং পার্বত্যবাসীর জীবনমান উন্নয়নে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেন। আঞ্চলিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের সম-সুযোগ প্রদানের ব্যবস্থা নেন। এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৩ সালের জুন মাসে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান সমূহে পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুনির্দিষ্ট আসন সংরক্ষণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
পার্বত্য জেলাসমূহের নৈসর্গিক সৌন্দর্য সংরক্ষণ ও পর্যটন শিল্পের প্রসারে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে আজ পার্বত্য জেলাসমূহ পিছিয়ে পড়া কোনো জনপদ নয়। দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এ অঞ্চলের জনগণ সম-অংশীদার।

তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিচুক্তির আলোকে পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রধামন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। এ অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, অবকাঠামো ও মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সকল খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে পার্বত্য অঞ্চলে ৪২টি সেতু উদ্বোধন করেছি। আমরা পার্বত্য অঞ্চলের সকল বেইলি ব্রিজ অপসারণ করে অচিরেই নতুন সেতু নির্মাণ করে দেব। রাঙ্গামাটিতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভূমি বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠিত ভূমি কমিশনের বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহের মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলায় উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পার্বত্য এলাকার যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না সেসব এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ অব্যাহত রয়েছে। পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে এ অঞ্চলের নারী ও শিশুদের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা ও শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের জন্য টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, পার্বত্যবাসীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং গবেষণাসহ তাদের সঙ্গে সমতল ভূমির জনগণের সেতুবন্ধন স্থাপনের লক্ষ্যে ঢাকার বেইলি রোডে প্রায় ২ একর জমির ওপর একটি শৈল্পিক ও নান্দনিক কমপ্লেক্স ‘শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র’ নির্মাণ করা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে শেখ হাসিনা পার্বত্য জেলাসমূহের জনগণ ও দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিচারপতির উপস্থিতিতে ৬ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ৯ জনের ভার্চুয়ালি হাজিরা Sep 16, 2025
img
এনবিআরে বড় রদবদল, দপ্তর বদলালো ১৮২ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার Sep 16, 2025
img

নুরাল পাগলার মাজারে হামলা

আদালতে স্বীকারোক্তি দিল ৮ আসামি Sep 16, 2025
img
ক্রীড়া কর্মসূচি প্রকল্পে বরাদ্দের টাকা বেহাত, দুদকের অভিযান Sep 16, 2025
img
দুই কোটি রুপি ও স্বর্ণসহ সরকারি কর্মকর্তা গ্রেপ্তার Sep 16, 2025
img
২৬৬ কোটি টাকার ফাঁকিতে চাকরিচ্যুত ২ কর কর্মকর্তা Sep 16, 2025
img
কোনো ধর্মকে আলাদা করে দেখা যাবে না : প্রধান উপদেষ্টা Sep 16, 2025
img
মালদ্বীপে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলার সেবা চালু করল হাইকমিশন Sep 16, 2025
img
দুর্যোগের আগে সবার কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছাতে কাজ করছে সরকার: উপদেষ্টা Sep 16, 2025
img
বাংলাদেশকে টপকে জাহাজ ভাঙা শিল্পের শীর্ষে উঠতে চায় ভারত Sep 16, 2025
img

জোহরান মামদানি

‘পেনশন তহবিলের টাকা ইসরায়েলি বন্ডে বিনিয়োগ করা উচিত নয়’ Sep 16, 2025
img
ভাঙ্গায় সড়ক ও রেলপথে যান চলাচল স্বাভাবিক Sep 16, 2025
img
মবের মুল্লুক নামে আরো একটি কুখ্যাত বাগধারার কবলে পড়েছে দেশ: গোলাম মাওলা রনি Sep 16, 2025
img
নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ মামলা করলেন ট্রাম্প Sep 16, 2025
img
ব্যক্তি বিবেচনায় এলএনজি কেনা হচ্ছে না, পিটার হাসের কোম্পানি প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা Sep 16, 2025
img
নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে সবাই সমান অধিকার পাবে: প্রধান উপদেষ্টা Sep 16, 2025
img
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া ওজোনস্তর রক্ষা সম্ভব নয় : পরিবেশ উপদেষ্টা Sep 16, 2025
img
হ্যান্ডশেক বিতর্কে আইসিসির দ্বারস্থ পিসিবি, প্রতিক্রিয়া জানাল ভারত Sep 16, 2025
img
এনসিপির মতো নেপালের ছাত্ররা দল করতে যায়নি : রুমিন ফারহানা Sep 16, 2025
img
বাগেরহাটে ৪টি আসন বহালের দাবিতে নির্বাচন অফিস ঘেরাও Sep 16, 2025