বাইপাস সার্জারির প্রয়োজনীয়তা ও ঝুঁকি

মনে করুন আপনি কোনো মহাসড়কে গাড়িতে আছেন। হঠাৎ কোনো স্থানে দুর্ঘটনার কারণে প্রচণ্ড যানজট লেগে গেল। রাস্তা দিয়ে আর গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। এমন সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অন্য একটি রাস্তা বের করে দিল, যাতে যানবাহনগুলো চলাচল করতে পারে। তখন আপনি সহজেই আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেন।

হার্টের বাইপাস সার্জারি অনেকটা এ রকমই একটি ঘটনার উদাহরণ। যেখানে হার্টের রক্তচলাচলের পথ বাঁধাগ্রস্ত হলে চিকিৎসকরা অপারেশন করার মাধ্যমে বাইপাস করে দেন, যাতে হার্টে প্রয়োজনীয় রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ হয়ে থাকে।

কখন বাইপাস সার্জারি করতে হয় ?

করোনারি হার্ট ডিসিসের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকরা হার্টের বাইপাস সার্জারির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমরা জানি, আমাদের হার্ট সঠিক প্রক্রিয়ায় কাজ করার জন্য এর প্রয়োজনীয় পরিমাণে রক্ত ও অক্সিজেন প্রয়োজন। সাধারণত ধমনীর (হার্টের রক্তনালী) মধ্য দিয়ে হার্টে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ হয়।

যখন প্ল্যাক নামক এক প্রকার নরম পদার্থ ধমনীর ভিতরের আস্তরণ তৈরি করে, তখন ধীরে ধীরে এটি ধমনীকে ব্লক করে দেয়। ফলে হার্টে প্রয়োজনীয় রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ হয় না। তখন বুকে ব্যথা, অস্বাভাবিক হৃদকম্পন, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। এমনকি হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে। আর এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিকে সুস্থ করতে চিকিৎসকরা হার্টের বাইপাস সার্জারি করে থাকেন।

বাইপাস সার্জারি কীভাবে কাজ করে?

যখন কারো ধমনী ব্লক হয়ে যায়, তখন অপারেশন করে ব্লক স্থান থেকে হার্টে বিকল্প রাস্তা স্থাপন করতে হয়। এজন্য চিকিৎসকরা রোগীর বুক, হাত, পা কিংবা অন্য কোনো স্থান থেকে রক্তনালী কেটে সংগ্রহ করেন। অতঃপর এর একপ্রান্ত হার্টে ও অন্য প্রান্ত ধমনীর যেখানে ব্লক তৈরি হয়েছে তার নীচে যুক্ত করে দেন। এর ফলে যে নতুন পথ তৈরি হয়, তা দিয়ে হার্টে রক্ত চলাচল করতে পারে। যদি আপনার একাধিক স্থানে ব্লক তৈরি হয়, তবে চিকিৎসকরাও একাধিক বাইপাস সার্জারি করে থাকেন।

সার্জারির পরে কী ঘটে?

সার্জারির পরে কিছু দিন রোগীকে আইসিইউতে নিবিড় পরিচর্যায় থাকতে হয়। এই সময় শ্বাস নেয়ার জন্য রোগীর মুখে একটি টিউব দেয়া হয়। যখন রোগী নিজে নিজেই শ্বাস নিতে পারে, তখন এটি খুলে ফেলা হয়। এই সময় রোগীর দেহকে একটি মেশিনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়, যা দিয়ে হৃদকম্পনের হার, রক্তচাপসহ অন্যান্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। কিছুদিন আইসিইউতে থাকার পর হাসপাতালের কেবিন বা ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। এখানে কিছুদিন থাকার পর সুস্থ হলে রোগীকে বাসায় স্থানান্তর করা হয়।

সার্জারি কয় ধরণের হয়? 

হার্টে কি ধরণের বাইপাস সার্জারি করতে হবে, তা নির্ভর করবে কয়টি ধমনীতে ব্লক তৈরি হয়েছে তার উপর। তবে ধমনী যত বেশি সংখ্যক ব্লক হবে, অপারেশন তত জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ হবে। সাধারণত চার ধরণের হার্ট বাইপাস সার্জারি করা হয়। যেমন:

১. সিঙ্গেল বাইপাস: যখন একটি ধমনী ব্লক হয়ে যায়।
২. ডাবল বাইপাস: যখন দুইটি ধমনী ব্লক হয়ে যায়।
৩. ট্রিপল বাইপাস: যখন তিনটি ধমনী ব্লক হয়ে যায়।
৪. কোয়াড্রাপল বাইপাস: যখন চারটি ধমনী ব্লক হয়ে যায়।

হার্ট বাইপাস সার্জারির ঝুঁকি কী কী?

আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে হার্টের বাইপাস সার্জারির ঝুঁকি অনেক কমে গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সার্জারি সফল হয় এবং ব্যক্তি পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। বাইপাস সার্জারির পরও দীর্ঘদিন রোগী বাঁচতে সক্ষম হয়েছেন এরকম অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। তারপরও বাইপাস সার্জারির সঙ্গে বেশ কিছু সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে। এগুলো হলো: অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, রক্ত জমাট বাঁধা, বুকে ব্যথা, ইনফেকশন, কিডনি অকার্যকর, নিম্ন-মাত্রায় জ্বর, সাময়িক বা স্থায়ী স্মৃতিশক্তির লোপ, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক ইত্যাদি।

বাইপাস সার্জারির বিকল্প ব্যবস্থা কী?

বাইপাস সার্জারির কিছু বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। তা হলো:

১. বেলুন অ্যানজিওপ্লাস্টি: বেলুন দ্বারা ধমনীর ব্লক স্থানকে প্রসারিত করা হয়।

২. ইইসিপি: রক্তনালীতে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে হার্টে অতিরিক্ত রক্ত সরবরাহ করা হয়। সাত সপ্তাহ প্রতিদিন এক থেকে দুই ঘণ্টা এটা করতে হয়।

৩. মেডিকেশন: কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ প্রয়োগ করে ধমনীর ভেতরে প্ল্যাক তৈরিকে বাঁধাগ্রস্ত করা হয়। এছাড়া চিকিৎসকরা হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে নিম্নমাত্রার অ্যাসপিরিন ওষুধ দিয়ে থাকেন।

৪. খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন: হার্টের বাইপাস সার্জারির সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা হচ্ছে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা। এজন্য বেশি বেশি করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এবং সম্পৃক্ত ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।

 

টাইমস/ইএইচ/জিএস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে অব্যাহতি : ট্রাম্পের আদেশ বাতিল করলেন আদালত Sep 16, 2025
img
ভাঙ্গার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে : ডিআইজি রেজাউল করিম Sep 16, 2025
img

এশিয়া কাপ ২০২৫

বাংলাদেশের টিকে থাকার লড়াই আজ Sep 16, 2025
img
সাক্ষ্য দিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ট্রাইব্যুনালে মাহমুদুর রহমান Sep 16, 2025
img
দুপুরে সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে আসবেন নাহিদ ইসলাম Sep 16, 2025
img
জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের মতবিনিময় Sep 16, 2025
নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলামের অবস্থান | ইসলামিক জ্ঞান Sep 16, 2025
"আ:লীগ ও বিএনপিকে আগামী দিনের বাংলাদেশের জনগণ দেখতে চায় না" Sep 16, 2025
img
তিস্তা প্রকল্প যাচাইয়ে বাংলাদেশে আসছে চীনের বিশেষজ্ঞ দল: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ Sep 16, 2025
img
ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কাতারের পাশে ইসলামি বিশ্ব: এরদোয়ান Sep 16, 2025
img
পোশাক নিয়ে কাউকে হেয় করা চলবে না : সাদিক কায়েম Sep 16, 2025
img
ভাঙ্গার সীমানা ইস্যুতে ইসিতে ডিসির চিঠি Sep 16, 2025
img
বাগেরহাটে হরতাল প্রত্যাহার করে ইসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান Sep 16, 2025
img
‘শত্রুতা’ ভুলে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করল তৃণমূল Sep 16, 2025
img
নগদ নির্ভরতা কমাতে আসছে অভিন্ন লেনদেন ব্যবস্থা Sep 16, 2025
img
৪১% মাশুল বাড়ল চট্টগ্রাম বন্দরে Sep 16, 2025
img
ন্যায়ভিত্তিক শাসনে না ফিরলে মবের মূলক শব্দটি বাস্তবে স্থায়ী হবে: জিল্লুর রহমান Sep 16, 2025
img
নির্বাচনে গ্রুপিং নিয়ে বুলবুলের মন্তব্য Sep 16, 2025
img
শুধু কথা দিয়ে ইসরায়েলি বর্বরতা থামবে না : পেজেশকিয়ান Sep 16, 2025
img
রশিদ খানরা এগিয়ে, তবুও রিশাদে ভরসা রাখছেন মুশতাক Sep 16, 2025